
দোষ ধরতে আমাদের ভালো লাগে
কালের খেয়া
আফজাল হোসেন 2024-12-26
দোষ ধরতে আমাদের ভালো লাগে। দোষ দিয়ে, দোষ ধরে, দোষের তরকারি রেঁধে আমরা সুখে, আনন্দে থাকি। আরামের বলে নিজের বাবা মা, ভাই বোনের দোষ ধরি। দোষ ধরি আত্মীয়, বন্ধু, কাছের ও দূরের মানুষদের। দোষের তীর আমরা ওপরের দিকে তাক করতেও দ্বিধা করি না। দোষ ধরা থেকে ছাড় পায় না নিজের দেশ এবং পরের দেশও।
যাদের নাম-ডাক আছে, মানুষজন মান-সম্মান দেয়– তাদের দোষ আমরা আয়োজন করে ধরি। তা অধিক আনন্দের। মানির মানহানি করতে পারলে জীবন যেনো বেশি সার্থক, সুন্দর হয়।
পরিচয়ে আমরা মানুষ। হাত পা আছে, চলতে ফিরতে পারি। চোখ কান আছে, দেখতে শুনতে পারি। একটা করে মাথা আছে, মাথার মধ্যে ঘিলু আছে– সেই ঘিলুতে ভালো মন্দ হিসাব করার ক্ষমতা দেয়া আছে। কি নেই আমাদের? জ্ঞান বিবেক বোধ– সবই দেয়া হয়েছে মানুষকে। যিনি দিয়েছেন– দিয়েছেন অকৃপণভাবে, উজাড় করে। এই দয়ার কারণ, তিনি ভেবেছেন– মানুষ তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ।
তিনি দয়ালু করুণাময়, মহান সৃষ্টিকর্তা। তিনি রসিকও। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ করে দুনিয়াতে ছেড়েছেন মানুষকে; একইসাথে মানুষকে চক্কর খাওয়াতে ক্ষমতাধর শয়তান সৃষ্টি করেও পাঠিয়ে দিলেন। যা শয়তান, তোকে দিলাম মানুষকে কাবু করার শক্তি আর মানুষকে দিয়েছি কাবু না হওয়ার শক্তি। দেখা যাক কে কার কাছে হারে?
আমরা যে ভালো থাকতে পারি না তার দোষ কি তাহলে শয়তানের শয়তানির এবং যিনি শয়তানকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে মানুষের পিছন পিছন পাঠিয়ে দিয়েছেন- তাঁর?
যার তার ঘাড়ে দোষ চাপানো আমাদের স্বভাব। মাথা আছে, তার মধ্যে ঘিলু আছে, সে দুটোর উচিৎমতো ব্যবহার নেই। মানুষ নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে রেহাই পেতে চায়।
মানুষকে দেয়া হয়েছে হাত পা, নাক কান, চোখ মুখ, জ্ঞান বিবেক, বুদ্ধি বিবেচনা– এতো কিছু যে ওপরঅলা দিলেন, সবই কি অপাত্রে দান! কিছুই কাজে লাগাতে পারেনা মানুষ! এতটাই অক্ষম, অযোগ্য?
মানুষ যদি রেগে যায়, জিতে যায় শয়তান।
মানুষ যদি গালি দেয়, কাউকে অপমান অমর্যাদা করে বা আরও আরও ভয়ংকর ক্ষতি করার জন্য ছটফট করে– মহাউল্লসিত হয় তার ঘাড়ে চেপে বসে থাকা শয়তান।
শয়তান কলকাঠি নাড়ে, মানুষ লাফিয়ে পড়ে সামনের মানুষের সাথে কুতর্কে নামে। তাকে শত্রু বানায়।
শয়তান কানে ফুঁ দিলে মানুষ অন্যায়কারীর পক্ষে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়।
মানুষ যখন মানুষকে ঠকায়, সন্দেহ করে– শয়তান হা হা করে হাসে।
মানুষ যখন মিথ্যা বলে, গুজব ছড়ায়– ঘাড়ে বসে থাকা অদৃশ্য শয়তান মনের আনন্দে ডুগডুগি বাজায়।
মানুষ যখন মানুষের সাথে, নিজের দেশ বা পরের দেশের সাথে অসভ্যতা করে– শয়তান কেক কেটে আনন্দ উদযাপন করে।
নানাভাবে মানুষ যতবার শয়তানকে জেতায়, ততবারই মানুষজন্মকে ছোট করে, সৃষ্টিকর্তাকে অসম্মান করে।
যিনি সবকিছু সৃজন করেছেন, তিনি কি অপমানিত অসম্মানিত বোধ করেন? না। তিনি সকল বিষয়ে অবগত। জানেন, শয়তানের কাছে সামান্য সংখ্যক মানুষ পরাজিত হবে। বৃহৎ সংখ্যক মানুষের কাছে নিত্যই শয়তান নানাভাবে নাস্তানাবুদ হয়ে চলেছে। চলেছে বলেই দুনিয়া, দেশ ও মানুষ ভালো আছে, ভালো থাকবে। v
lলেখকের ফেসবুক থেকে