এটি আমার এলাকার একটি বড় ভাই ‘রাতুল’ এর গল্প। যখন তার বয়স ১৪-১৫ বছর, তখন থেকেই তার মধ্যে মাঝে মাঝেই অদ্ভুত একটি অনুভূতি কাজ করত। এক ধরণের অজানা উত্তেজনা, যা তার মনের গভীরে একটা অস্থিরতার জন্ম দিত। সে নিজেও বুঝতে পারত না কেন তার এরকম হয়। এই অনুভূতি কখনো তাকে কৌতূহলী করত, কখনো আবার বিব্রত করত। সময়ের সাথে সাথে সে অনুভব করল যে, এই অদ্ভুত অনুভূতিগুলো তার শরীর এবং মনের উপর প্রভাব ফেলছে। তবে, সেগুলো কীভাবে সামলাতে হয় বা কোন দিকে তা পরিচালিত করা উচিত, তা নিয়ে সে ছিল পুরোপুরি অজ্ঞ। এই সময়ে সে একাকী সময়ে অনেক ভেবে দেখত, কিন্তু সেই অনুভূতির গভীরতা এবং তাৎপর্য তাকে আরো ধোঁয়াশার মধ্যে ফেলত।
–
একটা সময় সেই অদ্ভুত অনুভূতিগুলো তাকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেল, যেখানে সে নিজেকে সামলাতে পারত না। সে বুঝতে পারল না, কীভাবে এই অনুভূতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তার শরীর যেন তাকে নিজের অজান্তেই একটা নতুন অভ্যাসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিল। একদিন কৌতূহলবশত সে এমন কিছু করল, যা তাকে সাময়িক স্বস্তি দিল, কিন্তু সেই স্বস্তির পিছনে লুকিয়ে ছিল এক গভীর ফাঁদ।
–
এরপর থেকে সেই কাজ তার জীবনের একটা নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হলো। সে বুঝতেই পারল না, কখন এই অভ্যাস তার ওপর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেছে। সে ধীরে ধীরে হস্তমৈথুনে আসক্ত হয়ে গেল। প্রতিদিনের অজস্র সময় এবং শক্তি সে এই অভ্যাসের পেছনে ব্যয় করতে শুরু করল।
–
প্রথমদিকে এটি তাকে ভালো লাগাত, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সে অনুভব করতে লাগল যে, এটি তার শরীর ও মন উভয়ের ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছিল, তার মানসিক শক্তি কমে যাচ্ছিল, এবং জীবনের প্রতি তার আগ্রহ ক্রমশ হারিয়ে ফেলছিল। তবুও, এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসা তার জন্য অসম্ভব হয়ে উঠেছিল।
–
আর এটি শুধু একজন রাতুল এর গল্প নয় এটি এখন বর্তমানে বিশেষ করে আমাদের বাংলাদেশের বেশিরভাগ তরুণ প্রজন্মের জীবনের আসল কাহিনী। যে সমাজে এই সব বিষয় গুলোকে সবথেকে লজ্জাজনক ভাবে দেখা হয় সেই সমাজেই এই সকল বিষয়গুলো বেশি হয়। আমি হস্তমৈথুনের কথা বলছি।
–
হস্তমৈথুন কি? হস্তমৈথুন, যাকে অনেকেই ‘স্বমৈথুন’ বলে জানেন। হস্তমৈথুন হলো একটি প্রক্রিয়া যেখানে একজন ব্যক্তি তার নিজের হাতের সাহায্যে নিজের লিঙ্গকে চাপ বা গতিশীলতা দিয়ে বীর্যপাত ঘটিয়ে আনন্দ বা সন্তুষ্টি লাভ করেন। এটি একটি যৌন অভ্যাস, যা ব্যক্তির শারীরিক বা মানসিক তৃপ্তি নিশ্চিত করতে ব্যবহৃত হয়।
হস্তমৈথুনের কারণ: সাধারণত, একটি ছেলের মধ্যে বয়ঃসন্ধি কালে হস্তমৈথুনের প্রতি আগ্রহ বা অনুভূতি তৈরি হতে থাকে, যা সাধারণত ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। এই সময় শরীরে হরমোনের পরিবর্তন ঘটে এবং যৌন উদ্দীপনা বা আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। তবে, এটি ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। আমাদের দেশে, যেখানে একটি ছেলের বিয়ের বয়স ২১ বছর নির্ধারিত, সেখানে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে তার মধ্যে যৌন অনুভূতি তৈরি হয়। এসময় সে বুঝে না কি করতে হবে বা কিভাবে তার অনুভূতিগুলোর মোকাবিলা করতে হবে।
এছাড়া, বাংলাদেশে কোথাও শিশুদের সেক্স এডুকেশন দেওয়া হয় না, যার কারণে তারা সঠিক জ্ঞান বা ধারণা না থাকায় হস্তমৈথুনের মতো বিপজ্জনক অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়ে।
অতিরিক্ত হস্তমৈথুন হলে কি কি ক্ষতি হতে পারে?
-
ক্লান্তি ও দুর্বলতা: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে শরীরে কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা ক্লান্তি ও দুর্বলতার কারণ হতে পারে।
-
পিঠে ব্যথা: হস্তমৈথুনের কারণে ইনফ্লেমেটরি হরমোন প্রস্টাগ্লান্ডিন ই২-এর উৎপাদন বেড়ে যায়, যা পিঠের নিচের অংশে ব্যথা সৃষ্টি করতে পারে।
-
অস্পষ্ট দৃষ্টি ও চোখে ফ্লোটার্স: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে চোখে অস্পষ্ট দৃষ্টি ও ফ্লোটার্স (চোখের সামনে ভাসমান বিন্দু) দেখা দিতে পারে।
-
চুল পড়া ও পাতলা হয়ে যাওয়া: হস্তমৈথুনের অতিরিক্ততার কারণে চুল পড়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-
স্মৃতিশক্তি হ্রাস: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হতে পারে।
-
ইরেক্টাইল ডিসফাংশন: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে লিঙ্গের উত্থানে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
-
অকাল বীর্যপাত: হস্তমৈথুনের অতিরিক্ততার কারণে বীর্যপাতের সময় নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে।
-
সেমিনাল লিকেজ: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বীর্যপাত হতে পারে।
-
যৌনাঙ্গে ফোলা ও নমনীয়তা: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে যৌনাঙ্গে ফোলা ও নমনীয়তা দেখা দিতে পারে।
-
যৌনাঙ্গের সংবেদনশীলতা হ্রাস: হস্তমৈথুনের অতিরিক্ততার কারণে যৌনাঙ্গের সংবেদনশীলতা কমে যেতে পারে।
-
অপরাধবোধ ও লজ্জা: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে মানসিকভাবে অপরাধবোধ ও লজ্জা অনুভূত হতে পারে।
-
আত্মবিশ্বাসের অভাব: হস্তমৈথুনের অতিরিক্ততার কারণে আত্মবিশ্বাস কমে যেতে পারে।
-
ধৈর্য ও মনোনিবেশের অভাব: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে ধৈর্য ও মনোনিবেশ কমে যেতে পারে।
-
পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি: হস্তমৈথুনের অতিরিক্ততার কারণে পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি তৈরি হতে পারে।
-
অসামাজিক আচরণ: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে অসামাজিক আচরণ দেখা দিতে পারে।
-
সামাজিক মেলামেশায় সমস্যা: হস্তমৈথুনের অতিরিক্ততার কারণে সামাজিক মেলামেশায় সমস্যা হতে পারে।
-
বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যাওয়া: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে যেতে পারে, যা পুরুষ বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
-
বাধ্যতামূলক যৌন আচরণ: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে বাধ্যতামূলক যৌন আচরণের ঝুঁকি বাড়ে।
-
প্রস্রাবের নালীতে ক্ষত: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে প্রস্রাবের নালীতে ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে এবং পুঁজ নির্গত হতে পারে।
-
প্রস্টেটের সমস্যা: অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে প্রস্টেট গ্রন্থির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
মোটামুটি এই ২০টি সমস্যার কথা শোনা যায়। এবং এগুলো আমি প্রচুর জানাশোনার পরই পোস্টে উল্লেখ করেছি। এছাড়া আমি ফেসবুকে অনেক গুরুপ সহ নানান জায়গায় দেখেছি যেখানে মানুষ হস্তমৈথুনের ক্ষতির সমুক্ষীন হয়ে এখন ভয়নাক জীবন পার করছে। তাই যত দ্রুত পারবেন এই ক্ষতিকর অভ্যাসটি থেকে বেরিয়ে আসুন নাহলে আপনার ভবিষ্যতে জীবন হতে পারে অন্ধকার। এখন যারা ইতি মধ্যে হস্তমৈথুন এর ফলে হওয়া সমস্যা গুলোই ভুগছেন তাদের করনীয় কি কি ? অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে শরীরে যে শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা তৈরি হয়, তা ঠিক করতে সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং সঠিক ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে খাবার ও ব্যায়ামের তালিকা দেওয়া হলো যা শরীর পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে ।
১. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার:
- ডিম: প্রতিদিন ১-২টি সেদ্ধ ডিম খেতে পারেন।
- মুরগির মাংস: চর্বি ছাড়া গ্রিল বা সিদ্ধ মুরগি।
- মাছ: তেলযুক্ত মাছ যেমন টুনা, স্যামন বা ইলিশ।
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার: দুধ, দই এবং পনির।
- চিকন মাংস: গরু বা খাসির মাংস (কম তেলযুক্ত)।
২. ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ খাবার:
- সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, ব্রকলি, লাউ, কুমড়ো।
- ফল: কলা, কমলা, আপেল, ডালিম, আমলকি।
- বাদাম: কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট।
- বীজ: চিয়া বীজ, তিলের বীজ, সূর্যমুখী বীজ।
৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:
- ফ্ল্যাক্স সিড (তিসি বীজ), চিয়া সিড।
- ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ফিশ অয়েল সাপ্লিমেন্ট।
৪. অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার:
- গ্রিন টি।
- বীটরুট।
- ডার্ক চকলেট (কম চিনি যুক্ত)।
৫. শক্তিবর্ধক খাবার:
- খেজুর।
- মধু।
- ওটস।
- বাদামের মাখন।
পানীয়
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- ডাবের পানি।
- হোমমেড ফলের স্মুদি।
ব্যায়ামের তালিকা
১. কার্ডিও ব্যায়াম:
- সকালে ১৫-২০ মিনিট দৌড়ানো।
- সাইকেল চালানো।
- সাঁতার কাটা।
২. স্ট্রেংথ ট্রেনিং:
- পুশ-আপস: প্রতিদিন ১০-২০ বার।
- প্লাঙ্ক: দিনে ১-২ মিনিট।
- স্কোয়াটস: প্রতিদিন ১৫-২০ বার।
৩. যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন:
- কপালভাতি ও অনুলোম-বিলোম: মানসিক স্থিরতা আনবে।
- ভুজঙ্গাসন: স্পাইন ও পেশির জন্য ভালো।
- শবাসন: মানসিক চাপ কমাবে।
৪. পেলভিক ব্যায়াম:
- কেগেল ব্যায়াম: পেলভিক ফ্লোর মাংসপেশি শক্তিশালী করে।
জীবনধারা পরিবর্তন
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিরাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
- স্ট্রেস কমানো: চাপমুক্ত থাকতে মেডিটেশন করুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করুন।
- পর্যাপ্ত রোদ: প্রতিদিন সকালে ১৫-২০ মিনিট রোদে থাকুন, যা ভিটামিন ডি সরবরাহ করবে।
আশা করি এই নিয়মগুলো মেনে চললেই হস্তমৈথুনের ক্ষতিপূরণ করা যেতে পারে। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল, যত দ্রুত পারেন এই ভয়ানক অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসুন। এই অভ্যাস ত্যাগ করাটা কিছুটা কঠিন হতে পারে, তবে অসম্ভব কিছু নয়। সোশ্যাল ডিটক্স পালন করুন, কিছুদিনের জন্য হারিয়ে যান সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। যখনই খারাপ চিন্তা মাথায় আসবে, তখনই স্মরণ করুন সৃষ্টিকর্তাকে। মনে করুন এটি একটি বড় গুনাহের কাজ। ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করুন। ইনশাআল্লাহ, সব ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আপনার নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা।
আর একটা কথা আপনি কি জানেন টিপসট্রাই.কম ( https://www.tipstry.com ) দিচ্ছে প্রতি পোস্টের ভিঊয়ের উপর টাকা ? যতো বেশি পোস্ট ভিউ হবে ততোবেশি ইনকাম করতে পারবেন । সুধু তাই নয় প্রতিটি পোস্টের উপর পেয়ে যাবেন ১০০৳ প্রযন্ত বোনাস ক্রেডিট । তাহলে আর দেরি কেনো এখনি ভিজিট করুন WWW.TIPSTRY.COM আর শেয়ার করুন আপনার লেখা পোস্ট