আজিজুলের খবর নেয়নি কেউ

আজিজুলের খবর নেয়নি কেউ

সারাদেশ

 বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

2025-01-11

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নরসিংদীর মাধবদী এলাকায় গত বছরের ১৮ জুলাই আরও অনেকের মতো রাজপথে প্রতিবাদে নেমেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আজিজুল হক। হঠাৎ দুই চোখে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলি এসে লাগে। সেই যে মাধবদী এলাকার পৌলানপুর ইসলামিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল দৃষ্টিশক্তি হারায়, তা আর ফেরত আসেনি। ওই ঘটনার পর দেশে বহু ঘটনা ঘটে গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনসহ হয়েছে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন। দৃষ্টিশক্তি হারানো আজিজুলের খোঁজ আর কেউ নেয়নি। অনেকটা বিনা চিকিৎসায় বাড়িতেই এখন দিন কাটছে আজিজুলের। 

জানা গেছে, মাদ্রাসায় পড়ার পাশাপাশি মাধবদীতে একটি টেক্সটাইল কারখানায় চাকরি করত আজিজুল। তার আয়েই চলত সংসার, বাবার চিকিৎসা ও ছোট বোনের লেখাপড়া। ফলে আজিজুলের অসুস্থতার কারণে পরিবারেও নেমে এসেছে চরম অন্ধকার। সরকারের কাছে পরিবারের আবেদন, বিদেশে নিয়ে আজিজুলের চিকিৎসা করানো হোক। অন্তত একটি চোখও যদি ভালো হয়, তাহলে আজিজুল আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব। ধরতে পারবে সংসারের হাল। 

কথা হয় দৃষ্টিশক্তি হারানো আজিজুলের সঙ্গে। সে বলে, স্বৈরাচার সরকার হটিয়ে বিপ্লবী সরকার এনেছি আমরা। কিন্তু কেউ আমাদের খোঁজ নিচ্ছে না। নিজের অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে আমি বাঞ্ছারামপুরের আগের ইউএনও আবুল মনসুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ইউএনও জুলাই আন্দোলনে আহতের তালিকায় আমাকে অন্তর্ভুক্তও করেছিলেন। তখন তো আশ্বাস দিয়েছেন, আমার চোখের চিকিৎসা করাবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কিংবা সমন্বয়করাও এসে দেখেননি। শুনেছি জুলাই বিপ্লব ফাউন্ডেশন থেকে অনেকে সহায়তা পাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমি কিছুই পেলাম না। আমি বেঁচেও যেন পড়ে আছি পরিবারের বোঝা হয়ে।

পরিবার জানায়, গত ১৮ জুলাই আন্দোলনে অংশ নিয়ে দুই চোখে ও মুখের বিভিন্ন অংশে গুলিবিদ্ধ হয় আজিজুল। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে নরসিংদী সদর হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে স্থানান্তর করা হয় জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। কিন্তু আজিজুলের দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসেনি। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসার জন্য যা খরচ করা হয়েছে, সেটা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুরা জুগিয়েছেন। 
আজিজুলের বাবা কামাল মিয়া বলেন, আমার এই ছেলে পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিল। কিন্তু বর্তমানে সে ঘরে অন্ধ হয়ে বসে আছে। কোনো লোক আসে না তাকে দেখতে। সরকারি কোনো সহযোগিতাও পেলাম না। 
এ বিষয়ে বাঞ্ছারামপুরের বর্তমান ইউএনও ফেরদৌস আরা জানান, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতের তালিকায় আজিজুলের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কিনা তিনি দেখবেন। না থাকলে অন্তর্ভুক্তি এবং আজিজুলের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

© Samakal
Shares:
Leave a Reply