
আমদানির কারণে কিছুটা কমেছে চালের দাম
অর্থনীতি
সমকাল প্রতিবেদক 2025-01-18
সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ভারত ও মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। কিছু চাল ইতোমধ্যে দেশে এসেছে, কিছু চাল আমদানির পথে রয়েছে। নতুন করে পাকিস্তান থেকেও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে চালের চড়া বাজারে দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। মানভেদে কেজিতে কমেছে দু-এক টাকা। তবে এখনও আগের অবস্থায় ফেরেনি চালের বাজার।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকটি দেশ থেকে আমদানির কারণে মজুতদাররা নড়েচড়ে বসেছেন। তারা দর কিছুটা কমাতে শুরু করেছেন। এর প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, তেজকুনিপাড়া এবং মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরায় প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮৮ টাকা, গত সপ্তাহে যা ৮০ থেকে ৯০ টাকা ছিল। আগের সপ্তাহে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া মিনিকেট চাল কেনা যাচ্ছে ৭৬ থেকে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হওয়া মোটা বা স্বর্ণা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা দরে। আর মাঝারি বা বিআর-২৮ জাতের চালের কেজি আগের মতোই বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা দরে।
চালের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে ৭ জানুয়ারি ভারত থেকে ৫০ হাজার টন ননবাসমতি চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। এ ছাড়া গত ২৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে আসে ২৪ হাজার ৬৯০ টন সেদ্ধ চাল। ১২ জানুয়ারি আসে ২৬ হাজার ৯৩৫ টন চালের আরেকটি চালান। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও ভারত থেকে চাল আসছে। গত মঙ্গলবার দেশটি থেকে ২ হাজার ৪২৪ টন চাল আমদানি করেছে ঢাকার পুরানা পল্টনের মেসার্স মজুমদার অ্যাগ্রোটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড।
ভারতের পর গতকাল মিয়ানমার থেকেও চাল এসেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মিয়ানমার থেকে ২২ হাজার টন আতপ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে এমভি গোল্ডেন স্টার জাহাজ। জিটুজি ভিত্তিতে এসব চাল আনা হয়। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা চালের প্রথম চালান। জাহাজে রক্ষিত চালের নমুনা সংগ্রহ করে ভৌত পরীক্ষা শেষে দ্রুত খালাসের কাজ শুরু হবে।
এ ছাড়া নতুন করে পাকিস্তান থেকেও চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত বৃহস্পতিবার সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। একই বৈঠকে ভারত থেকেও ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন পায়।
জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে খাদ্য মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আট লাখ টন চাল আমদানির পরিকল্পনা করেছে। এজন্য সংশোধিত বাজেটে অর্থ বিভাগের কাছে অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
এদিকে চাল আমদানির খবর মজুতদার ও মিলারদের ওপর প্রভাব ফেলেছে। এজন্য চালের দর কিছুটা কমতির দিকে বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা।
গতকাল ঢাকার কারওয়ান বাজারের মুক্তা রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী জালাল আহমেদ বলেন, কেজিতে দু-এক টাকা কমেছে। দাম আরও কমতে পারে। ভারত থেকে আমদানি করা চাল বাজারে ঢুকেছে। তিনি বলেন, দাম কিছুটা কমলেও দুই মাস আগের অবস্থানে ফিরবে কিনা বলা যাচ্ছে না। কারণ গত দুই মাসে কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়েছে। তেজকুনিপাড়ার মায়ের দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, আমদানির খবরে মিলার ও মজুতদাররা নড়েচড়ে বসেছেন। তারা চাল ছাড়তে শুরু করেছেন। এ জন্য দাম কিছুটা কমেছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম আরও কমতে পারে।