
আলু সংরক্ষণে খরচ বাড়ল, প্রভাব জুনে
সারাদেশ
শাহারুল আলম, জয়পুরহাট 2025-01-10
জয়পুরহাটে চলতি মৌসুমে হিমাগারগুলোয় আলু সংরক্ষণে প্রতি কেজির ভাড়া ১ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন হিমাগার মালিকরা। এতে এখন থেকে ৭ টাকার স্থলে ৮ টাকা গুনতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এভাবে হিমাগারের ভাড়া বাড়ানোর ফলে খাবার ও বীজ আলুর দাম বাড়ার শঙ্কা করছে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। বিদ্যুতের দাম না বাড়লেও সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোকে অযৌক্তিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাতিয়র বহুমুখী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আমিনুল ইসলামের ভাষ্য, হিমাগার মালিকরা গত বছরও জোটবদ্ধ হয়ে আলুর ভাড়া বাড়িয়ে ছিলেন। এবারও প্রতি কেজিতে ১ টাকা বাড়িয়েছেন। গত বছর বাজারে প্রভাব লেগেই ছিল। এবারও তারই আগাম আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
যদিও দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে শ্রমিক ও বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যাওয়ার অজুহাত দিচ্ছেন বগুড়া জেলা কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি তোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলেন, হিমাগারে আলু রাখার ভাড়া নির্ধারণ করে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। তিনি ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি বিভাগ থেকে জানা গেছে, এবার জয়পুরহাটে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে এবার আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টরে। এবার ৯ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ টন আলু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। উৎপাদিত আলুর অন্তত ৩০ শতাংশ জেলার ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ হবে। প্রায় ২ লাখ টনের বেশি সংরক্ষণ করা যাবে।
হিমাগার থেকে জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা আলু সংরক্ষণ শুরু করবেন। জুন মাসের পর মজুত থেকে বিক্রি শুরু হবে। এ প্রক্রিয়া চলবে বছরজুড়ে। হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুর মজুতের ওপর নির্ভর করে মৌসুমের শেষে দাম কেমন হবে। গত মৌসুমে হিমাগারে প্রতি কেজির ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ টাকা। এবার ১ টাকা বাড়িয়ে ৮ টাকা করা হয়েছে। এতে মৌসুম শেষে দাম বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তা ও ব্যবসায়ীরা।
হিমাগার মালিকরা সভা করে প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ১ টাকা বাড়িয়েছেন বলে শুনেছেন পাঁচবিবি উপজেলার চাঁনপাড়া সাথী-৩ হিমাগারের ব্যবস্থাপক রতন কুমার চৌধুরী। তিনি বলেন, কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এখনও এ-সংক্রান্ত কোনো পত্র পাইনি।
হিমাগারের ভাড়া যতই বাড়বে, ব্যবসায়ীরা তত বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে মনে করেন বটতলী বাজার এলাকার বাসিন্দা বেলাল হোসেন। তাঁর ভাষ্য, এমন হলে তার প্রভাব ভোক্তাদের ওপরে পড়বে। তারা খেয়াল খুশিমতো যখন-তখন ভাড়া বাড়িয়েই যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, কেজিতে ১ টাকা ভাড়া বাড়লে এর চাপ ভোক্তা পর্যায়ে পড়বে। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়াবেন। এবার বিদ্যুতের দাম বাড়েনি, অন্য কোনো সমস্যাও নেই। তার পরও ১ টাকা বাড়ানোয় পুরো চাপ পড়বে ভোক্তার ওপর। হিমাগার মালিকরা যদি প্রকৃত কৃষকদের জন্য ভাড়ার ব্যাপারে কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা করেন এবং বীজ আলু রাখার ব্যাপারে উৎসাহিত করেন তবে পরবর্তী মৌসুমে সংকট থাকবে না।