
নতুন “টর্ক ক্লাস্টারিং” এআই অ্যালগরিদম নিয়ে বিজ্ঞানীদের সর্বশেষ আবিষ্কারটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রযুক্তিটি মূলত ‘আনসুপারভাইজড লার্নিং’ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যার ফলে ডেটার প্রাক-লেবেলিংয়ের ঝামেলা ছাড়াই, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডেটার ভিতরে লুকিয়ে থাকা গঠন ও প্যাটার্ন উদ্ঘাটন করা সম্ভব। বর্তমান যুগে যখন বিশাল পরিমাণে ডেটা বিশ্লেষণের চাহিদা বেড়ে চলেছে, এই ধরনের অটোনোমাস প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে।
শেখার নতুন পদ্ধতি
প্রচলিত এআই সিস্টেমগুলো সাধারণত ‘সুপারভাইজড লার্নিং’ পদ্ধতি অবলম্বন করে, যেখানে ডেটা লেবেলিং এবং ম্যানুয়াল হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। কিন্তু “টর্ক ক্লাস্টারিং” এই চাহিদাকে পুরোপুরি পরিবর্তন করে দিয়েছে। এক হাজারটি ডেটাসেটের পরীক্ষায়, এই অ্যালগরিদম ৯৭.৭% নির্ভুলতার স্কোর অর্জন করেছে, যেখানে প্রচলিত সিস্টেমগুলো প্রায় ৮০% নির্ভুলতা দেখিয়েছে। এর ফলে, ডেটা প্রক্রিয়াকরণে নতুন মানদণ্ড স্থাপন করার পাশাপাশি, চিকিৎসা, অর্থনীতি, মনস্তত্ত্ব, রসায়ন ও জ্যোতির্বিজ্ঞানসহ বহু শাখায় এর ব্যবহার সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে।
প্রাকৃতিকভাবে শেখার অনুকরণ
ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনির অধ্যাপক সিটি লিন বলেন, “প্রাণীরা পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়া, পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে কোন স্পষ্ট নির্দেশনার প্রয়োজন ছাড়াই শিখে। এআই-র এই নতুন পদ্ধতির মূল লক্ষ্যও সেই প্রাকৃতিকভাবে শেখার প্রক্রিয়াকে অনুকরণ করা।” এই বক্তব্যটি তুলে ধরে যে, মানব হস্তক্ষেপ কমিয়ে এআই সিস্টেমগুলোকে আরও স্বতঃস্ফূর্ত ও দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে এই অগ্রগতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
ভৌত ধারণা
বিজ্ঞানীরা এই অ্যালগরিদমের নকশায় মহাকর্ষীয় নীতির প্রভাবে ছায়াপথের সমবায়ী গঠনের ধারণা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন। ভর ও দূরত্বের মৌলিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে তৈরি এই পদ্ধতি ডেটার গুচ্ছ নির্ধারণে এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে, যা প্রচলিত মডেলগুলির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। গবেষণার প্রধান লেখক, ড. জি ইয়াং বলেন, “টর্ক ক্লাস্টারিং-এর মূল পার্থক্য হচ্ছে এর ভৌত ধারণা, যা ডেটার জটিল প্যাটার্নগুলোকে নিখুঁতভাবে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।”
ভবিষ্যতের প্রয়োগ ও সম্ভাবনা
বর্তমানে, ‘আনসুপারভাইজড লার্নিং’ পদ্ধতি দ্রুতই এআই গবেষণা ও শিল্পক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, কারণ এটি বড় পরিমাণে ডেটা থেকে নতুন ইনসাইট বের করে এনে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, এই প্রযুক্তির সাহায্যে রোগ শনাক্তকরণ, জালিয়াতি উন্মোচন এবং মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ সহ আরও অনেক জটিল কাজ সহজেই সম্পাদিত হতে পারে। এছাড়াও, এর অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও স্বয়ংক্রিয়তা আগামী দিনগুলিতে এআই-এর ডেটা প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতিতে মৌলিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম বলে আশা করা হচ্ছে।
গবেষণাপত্রটি ‘আইই ট্রানজেকশনস অন প্যাটার্ন অ্যানালাইসিস অ্যান্ড মেশিন ইন্টেলিজেন্স’-এ প্রকাশিত হয়েছে, যা এই নতুন প্রযুক্তির বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা ও গুণগত মানের প্রমাণ বহন করে।
এই নতুন অ্যালগরিদম শুধুমাত্র এআই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি মাইলফলকই নয়, বরং এটি ডেটা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে, যা ভবিষ্যতে চিকিৎসা, বিজ্ঞান এবং শিল্পক্ষেত্রের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।