
ইমানের সঙ্গে তাকওয়া শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি
মতামত
কেরামত আলী 2025-01-17
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো ইমান। ইমান ছাড়া কোনো সৎ আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। অর্থাৎ ইমানহীন মানুষ চিরকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে থাকবে। তাই জান্নাতে যাওয়ার পূর্বশর্ত হলো ইমান।
ইমান শব্দটি ‘আমনুন’ থেকে এসেছে। আমনুনের অর্থ হচ্ছে আত্মার প্রশান্তি ও নির্ভীকতা লাভ, যা নিরাপত্তা দেওয়া ও আশঙ্কামুক্ত করা অর্থে ব্যবহার করা হয়। এই আমনুন ধাতুর ক্রিয়ারূপই হলো ইমান। ইমানের আভিধানিক অর্থ– আন্তরিক বিশ্বাস। মহানবী (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন তার ওপর আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন করার নাম ইমান।
ইমান মূলত মূল, শাখাসহ বিষয়ের প্রতি হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের সমন্বিত নাম। তবে শরিয়া দৃষ্টিকোণ থেকে পাঁচটি বিষয়ের প্রতি নজর রাখা জরুরি– অন্তরে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন, মুখে কালেমা পড়ার মাধ্যমে আমল, নিয়তের বিশুদ্ধতা, জিহ্বার মাধ্যমে আমল তথা কোরআন তেলাওয়াত, জিকর-আজকার ইত্যাদি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে আমল তথা রুকু-সিজদা, হজ, সিয়াম ইত্যাদি। ইমানদার তথা মুসলিম হতে হলে সাতটি বিষয়ের ওপর ইমান আনতে হবে; যাকে আরবিতে ইমানে মুফাস্সাল বলে। ইমানে মুফাস্সালের অর্থ হলো বিস্তারিত– ইমান। ইমানে মুফাস্সালের বাংলায় অর্থ হলো– ‘আমি ইমান আনলাম– আল্লাহ তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসুলগণ, শেষ দিবস (পরকাল), তাকদিরের ভালো ও মন্দ আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয় এবং মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবনের প্রতি।’
ইমানের প্রধান বিষয় তিনটি। যথা– তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত। ইমানে মুফাস্সাল এ তিনটিরই অন্তর্ভুক্ত। তাওহিদের মধ্যে শামিল রয়েছে তিনটি– আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও তাকদির। রিসালাতের মধ্যে আছে দুটি– কিতাবসমূহ ও রাসুলগণ। আখিরাতের মধ্যে দুটি– শেষ দিন ও মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবন।
ইমান আনার ব্যাপারে কোরআন মাজিদে অসংখ্য আয়াত পরিলক্ষিত হয়। সুুরা নূর-এর ৬২ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন– মুমিন মূলত তারাই, আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি যাদের দৃঢ় ইমান বাড়ছে। সুরা আল-ইমরান-এর ৭৯ আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন– অতঃপর ইমান আনো আল্লাহর প্রতি ও রাসুলের প্রতি। যদি তোমরা ইমান আনো ও তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তোমাদের জন্য বিরাট পুরস্কার রয়েছে।’
ইমান আনার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর অসংখ্য হাদিস দেখতে পাওয়া যায়। হজরত আবদুল্লাহ (র.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যার অন্তরে অণু পরিমাণ ইমান রয়েছে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।’ (তিরমিজি-১৯৯৮)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে– তার আমল যা-ই হোক না কেন, আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (বুখারি-৩১৮০ ও মুসলিম ১৫০)
মুসলমানদের ইমানে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। ইমানের বাড়া-কমা ও তাকওয়ার ভিত্তিতে জান্নাতের স্তর নির্ধারিত হয়। মুমিন বান্দারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই তাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারণ করে থাকে। ইমানদারদের জীবনে কিছু বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। তাদের ইমান ও হেদায়াত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিনয় ও নম্রতা বেড়ে যায়। তাকওয়ার ভিত্তিতে এক মুমিন অপর মুমিনের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। পূর্ণাঙ্গ দ্বীন অনুসরণের মাধ্যমে জান্নাতে মুমিনের মর্যাদা বেড়ে যায়। আল্লাহর প্রতি ইমান আনার ফলে মুমিন বান্দাদের অন্তরে প্রশান্তির অনুভূতি পরিলক্ষিত হয়। মুমিনের স্তর থেকে পাপের কারণে মানুষের অন্তর থেকে ইমান আস্তে আস্তে চলে যেতে থাকে। এভাবে ইমান আর না থাকলে তার জন্য জাহান্নাম অনিবার্য।
ইমান আনার সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে। আল্লাহর সঙ্গে কোনো অবস্থাতেই শিরক করা যাবে না। মানুষের হক নষ্ট করা যাবে না। সর্বদা ঋণমুক্ত থাকতে হবে। ফরজ, ওয়াজিবগুলো পালনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। মানুষের সঙ্গে মুয়ামিলাত ও লেনদেন ঠিক রাখতে হবে। এগুলো পালন করার সঙ্গে সঙ্গে ইমানিয়াত ঠিক রাখলে জান্নাত পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
কেরামত আলী: প্রভাষক, রোভারপল্লী ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
keramotali 2004@gmail.com