বর্তমান ডিজিটাল যুগে অনলাইনে তথ্য খোঁজা, কেনাকাটা করা, ব্যাংকিং, কিংবা বিভিন্ন পরিষেবা নেওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এরই মধ্যে অনেক ভুয়া ও প্রতারণামূলক ওয়েবসাইটও গড়ে উঠেছে, যা ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে বা প্রতারণা করতে পারে। তাই, একটি ওয়েবসাইট আসল নাকি নকল তা বোঝার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার।


১. ওয়েবসাইটের ইউআরএল (URL) যাচাই করুন

প্রথমেই ওয়েবসাইটের লিংকটি ভালোভাবে পরীক্ষা করুন।

HTTPS থাকলে নিরাপদ – ব্রাউজারের ঠিকানায় “https://” আছে কিনা দেখুন। HTTPS থাকা মানে হলো, ওয়েবসাইটটি এনক্রিপ্টেড, যা সাধারণত নিরাপদ সাইট নির্দেশ করে।

ভুল বানান বা অদ্ভুত ডোমেইন এড়িয়ে চলুন – যেমন, “facebook.com” এর পরিবর্তে “faceb00k.com” বা “amaz0n.net” এই ধরনের ওয়েবসাইট হলে তা সন্দেহজনক।

ডোমেইন এক্সটেনশন চেক করুন – অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সাধারণত “.com”, “.org”, “.net” ইত্যাদি ব্যবহার করে। কিন্তু “.xyz”, “.top”, “.club” ইত্যাদি এক্সটেনশন ব্যবহার করা সাইট সন্দেহজনক হতে পারে।


২. ওয়েবসাইটের ডিজাইন এবং কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করুন

ভুয়া ওয়েবসাইটগুলো সাধারণত নিম্নমানের ডিজাইন ব্যবহার করে এবং তাদের লেখা (content) মানসম্মত হয় না।

ব্যাকরণ বা বানানে ভুল – যদি ওয়েবসাইটে অনেক টাইপিং ভুল বা এলোমেলো বাক্য থাকে, তাহলে এটি সন্দেহজনক হতে পারে।

উচ্চমানের গ্রাফিক্স ও প্রফেশনাল লুক – আসল ওয়েবসাইটগুলোতে সাধারণত প্রফেশনাল ডিজাইন থাকে, আর লোগো বা ছবি উচ্চমানের হয়।

অনাকাঙ্ক্ষিত পপআপ ও বিজ্ঞাপন – যদি ওয়েবসাইটে বেশি বিজ্ঞাপন, ক্লিকবেইট লিংক বা সন্দেহজনক অফার থাকে, তাহলে এটি প্রতারণামূলক হতে পারে।


৩. ডোমেইনের বয়স এবং তথ্য যাচাই করুন

একটি ওয়েবসাইট নতুন নাকি পুরনো তা চেক করতে পারেন।

Whois Lookup ব্যবহার করুনwho.is বা whois.domaintools.com ব্যবহার করে ওয়েবসাইটের মালিকানা তথ্য ও বয়স যাচাই করুন।

নতুন ডোমেইন সতর্কতার সাথে দেখুন – যদি ওয়েবসাইটটি খুব সম্প্রতি তৈরি হয় এবং এতে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা দেওয়ার দাবি করে, তাহলে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে।


৪. কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের তথ্য যাচাই করুন

কোনো ওয়েবসাইট যদি নির্দিষ্ট কোম্পানির নাম ব্যবহার করে, তাহলে সেই কোম্পানির অফিসিয়াল সোর্স থেকে তথ্য মিলিয়ে দেখুন।

কোম্পানির অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া দেখুন – কোম্পানির অফিসিয়াল ফেসবুক, টুইটার বা লিংকডইন প্রোফাইল থেকে তাদের ওয়েবসাইট যাচাই করুন।

যোগাযোগের তথ্য সন্দেহজনক হলে সতর্ক থাকুন – যদি ওয়েবসাইটে ফোন নম্বর, ঠিকানা বা কাস্টমার সার্ভিসের তথ্য না থাকে, তাহলে সেটি নকল হতে পারে।

রিভিউ ও ফিডব্যাক দেখুনTrustpilot, SiteJabber বা গুগল রিভিউতে ওয়েবসাইট সম্পর্কে মতামত পড়ুন।


৫. ফিশিং বা স্ক্যাম সাইট চেক করুন

কিছু টুলস ব্যবহার করে ওয়েবসাইট নিরাপদ কিনা তা যাচাই করতে পারেন।

Google Safe Browsing চেক করুনGoogle Transparency Report দিয়ে ওয়েবসাইট নিরাপদ কিনা দেখে নিন।

ScamAdviser ব্যবহার করুনwww.scamadviser.com সাইটে লিংক দিয়ে যাচাই করতে পারেন ওয়েবসাইট আসল নাকি নকল।


৬. অতিরিক্ত ভালো অফার বা ডিসকাউন্ট এড়িয়ে চলুন

ভুয়া ওয়েবসাইটগুলো সাধারণত অতিরিক্ত ডিসকাউন্ট দেখিয়ে ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করার চেষ্টা করে।

“৯০% ছাড়!”, “মাত্র $১ এ iPhone!” – এ ধরনের অফার বাস্তবসম্মত নয়।

মূল্য যাচাই করুন – যদি কোনো ওয়েবসাইটে প্রোডাক্টের দাম অন্যান্য বিশ্বস্ত সাইটের তুলনায় অনেক কম হয়, তাহলে সতর্ক থাকুন।


ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকতে হলে আপনাকে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। একটি ওয়েবসাইট আসল নাকি নকল তা যাচাই করতে উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে সেটি এড়িয়ে চলুন এবং অন্যদের সতর্ক করুন।

আপনার কোনো অভিজ্ঞতা বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন!

 

Shares:
Leave a Reply