
এনজিওতে বিদেশি অনুদান বেশি স্বাস্থ্য, ত্রাণ ও পুনর্বাসন খাতে
সমৃদ্ধি
মমিনুল হক আজাদ 2025-01-10
দেশে নন-গভর্নমেন্ট অর্গানাইজেশন (এনজিও) খাতে বিদেশি অনুদান সবচেয়ে বেশি আসছে স্বাস্থ্য খাতে। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ত্রাণ ও পুনর্বাসন খাত। সামাজিক উন্নয়ন আছে তৃতীয় স্থানে। শিক্ষা ও ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন খাত রয়েছে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে। শুধু গত অর্থবছর নয়, তার আগের কয়েকটি অর্থবছরেও এ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর তথ্যমতে, বিদেশি অনুদান নিয়ে বিভিন্ন খাতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশে এমন এনজিওর সংখ্যা ২ হাজার ৬৩৮টি। এর মধ্যে স্থানীয় এনজিও রয়েছে ২ হাজার ৩৬৪টি। আর ২৭৪টি বিদেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এনজিওগুলো স্বাস্থ্য খাতে পেয়েছে ২ হাজার ১৯৫ কোটি টাকার বিদেশি অনুদান। এর পরের অবস্থানে থাকা ত্রাণ ও পুনর্বাসন খাতে এসেছে ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। সামাজিক উন্নয়নে এসেছে ৭৫৩ কোটি টাকা। শিক্ষায় ৭২১ কোটি টাকা এবং ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন বা পানি ও পয়োনিষ্কাশনে ৫১৯ কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে এনজিওগুলো।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ২৭১ কোটি টাকা, নারী উন্নয়নে ২৫২ কোটি টাকা, শিশু উন্নয়নে ২১৩ কোটি টাকা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা খাতে ১২৬ কোটি টাকা ও স্থানীয় সরকার খাতে ১০০ কোটি টাকার বিদেশি অনুদান পেয়েছে এনজিওগুলো।
শীর্ষ এই ১০টি খাত ছাড়াও কৃষি, মানবাধিকার, সুশাসন, যুব উন্নয়ন, খাদ্য, মৎস্য, আইনি সহায়তা, বনায়ন ও বৃক্ষরোপণ, তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন, জীবিকা, আয়বর্ধন, হিজড়াদের উন্নয়ন, অভিবাসন, সাংবাদিকতা ইত্যাদি খাতে বিদেশি অনুদান এসেছে গত অর্থবছরে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বিদেশি অনুদান প্রাপ্তিতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে ছিল স্বাস্থ্য, ত্রাণ ও পুনর্বাসন এবং শিক্ষা খাত।
২০২১-২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে ২ হাজার ১০৯ কেটি টাকা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে ৯২৬ কোটি টাকা এবং শিক্ষা খাতে ৮১৪ কোটি টাকার অনুদান পাওয়া যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্যে ১ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা, ত্রাণ ও পুনর্বাসনে ৯১৩ কোটি টাকা ও শিক্ষায় ৭৮৪ কোটি টাকার বিদেশি অনুদান এসেছে এনজিওগুলোতে।
কমছে বিদেশি অনুদান
আগের মতো এখন বিদেশি অনুদান পাচ্ছে না বেশির ভাগ বেসরকারি সংস্থা বা এনজিওগুলো। এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ১৯৯০-এর দশক থেকে বাংলাদেশে কার্যরত এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান ক্রমান্বয়ে বাড়তে দেখা যায়। ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে এনজিওগুলোতে বিদেশি অনুদান আসে সাড়ে ১০ কোটি ডলারের মতো। এটি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেড়ে হয় ৯৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। এর পর থেকে এনজিওতে বিদেশি অনুদান ক্রমেই কমতে দেখা যাচ্ছে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুদান কমে হয়েছে ৬৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত এসেছে ২৮ কোটি ডলারের কিছু বেশি। স্থানীয় একটি এনজিওর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, এনজিও খাতে বড় আকারের তহবিলগুলো গত কয়েক বছর ধরে কম আসছে। কিছু বড় তহবিল আবার কনসোর্টিয়াম আকারে কয়েকটি এনজিওকে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের পর্যায়ে থাকা ইত্যাদি কারণে দাতা সংস্থাগুলো এখানে কর্মরত এনজিওতে তহবিল কমাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দরিদ্রপ্রবণ এবং যুদ্ধ-সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতেও এখন এনজিও খাতে বেশি অনুদান দিচ্ছে তারা। যদিও বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য এ খাতে বাড়তি কিছু অনুদান আসছে। বাস্তবায়ন পর্যায়ের নানা সমস্যার কারণেও কমেছে বিদেশি অনুদান।
বিদেশি অনুদান বেশি পাচ্ছে যারা
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর দেওয়া তথ্যমতে, গত অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্প ও উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে বেশি অনুদান পেয়েছে ব্র্যাক। সংস্থাটি পেয়েছে ৭৮৪ কোটি টাকার অনুদান। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ ৩৪৪ কোটি টাকা। ২৭৯ কোটি টাকার অনুদান নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে এমএসএফ হল্যান্ড।
চতুর্থ স্থানে থাকা ইসলামিক রিলিফ-ইউকে পেয়েছে ২১৬ কোটি টাকা। পঞ্চম স্থানে আছে কেয়ার-বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে তারা পেয়েছে ১০২ কোটি টাকার অনুদান। শীর্ষ দশে থাকা অন্য এনজিওগুলোর মধ্যে কারিতাস বাংলাদেশ ৯৮ কোটি টাকা,
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ৬৭ কোটি টাকা, অ্যাকশন কন্ট্রে লা ফেইম ৬২ কোটি টাকা, উত্তরণ ২৭ কোটি টাকা ও ইপসা ১৩ কোটি টাকার বিদেশি অনুদান পেয়েছে গত অর্থবছর।