কর্ণফুলীর ২০ মহালে অর্ধশত  কোটি টাকার শুঁটকি ব্যবসা

কর্ণফুলীর ২০ মহালে অর্ধশত কোটি টাকার শুঁটকি ব্যবসা

প্রিয় চট্টগ্রাম

 আকরাম হোসেন রানা, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)

2025-01-11

কর্ণফুলী উপজেলার ছোট ইউনিয়ন চরপাথরঘাটা। ইউনিয়নের পাশ দিয়ে কর্ণফুলী নদী বয়ে চলেছে। নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে ব্যক্তিমালিকানাধীন অন্তত ২০টি শুঁটকিমহাল। এসব মহালে প্রতি মৌসুমে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি হয়। বছরের আট মাস কাজ চলে এখানে। উৎপাদিত শুঁটকি সারাদেশে যায়, রপ্তানি হয় বিদেশেও। এখানকার শুঁটকি বিষমুক্ত বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় কর্ণফুলীর ইছানগর গ্রামে নুরুল আবছার এন্টারপ্রাইজ শুঁটকিমহালে দেখা যায়, ৮-১০ জন শ্রমিক রোদে শুকাতে দেওয়া নানা জাতের শুঁটকি নাড়াচাড়া করছেন। সদ্য আসা একটি মাছবোঝাই নৌকা থেকে মাথায় করে মাছ নামাচ্ছেন একদল নারী।
শ্রমিকদের কাজ তদারক করছিলেন ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. মুছা। তিনি বলেন, ‘এইমাত্র জাহাজ থেকে কয়েক প্রজাতির মাছ এসেছে। মাছগুলো নৌকা থেকে তুলে বিশেষ গোডাউনে রাখা হবে। পরিষ্কার করে তারপর রোদে শুকাতে দেওয়া হবে এসব মাছ।’
নগরীর হালিশহর থেকে শুঁটকি কিনতে আসা আলমগীর বলেন, ‘আমি ভ্যানে করে হালিশহরে শুঁটকি বিক্রি করি। একটু দূরে হলেও সরাসরি এখানে চলে এসেছি ভালো ও কমমূল্যে শুঁটকি কেনার আশায়। এখানকার টাটকা শুঁটকির চাহিদা রয়েছে।’
শ্রমিকরা জানান, ভোর ৬টার পরপরই শুঁটকিপল্লিতে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। নৌকা বা গোডাউন থেকে ছুরি, পোয়া, লইট্টা কিংবা ফাইস্যা মাছ নামানো হয়। এরপর নানা প্রক্রিয়ার পর মাছগুলোর গন্তব্য হয় বাঁশের মাচার ওপর। কাঁচা মাছ থেকে উন্নতমানের শুঁটকি তৈরি হতে মাসখানেক সময় লাগে।
নুরুল আবছার এন্টারপ্রাইজ নামের এই প্রতিষ্ঠানটি নুরুল আবছার ও তাহের আহমদ নামের দুই ব্যক্তির মালিকানাধীন। সম্পর্কে তারা ভাই। অন্তত ২০ বছর ধরে তারা এই প্রতিষ্ঠানটি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাহের আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা এই প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছি। আমাদের এই মহালে মূলত বছরের আট মাস শুঁটকি তৈরি হয়। বাকি চার মাস (জুন-সেপ্টেম্বর) শুঁটকি শুকানোর মতো পরিস্থিতি থাকে না।’
শুঁটকি ব্যবসায়ী নুরুল আবছার জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ৫০-৬০ জন শ্রমিক কাজ করেন। কাজ অনুযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা নির্ভর করে।
নুরুল আবছারের প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ছুরি, ফাইস্যা, পটকা ও হাঙর মাছের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। শুঁটকি প্রস্তুত হলে সেটা দেশের অন্যতম পাইকারি মোকাম চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জে পৌঁছে যাবে। তাদের এই প্রতিষ্ঠানে বছরে দুই কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি হয়।
কর্ণফুলীর ইছানগর ও চরপাথরঘাটা, ডাঙারচর গ্রামের ২০টি শুঁটকি মহালে প্রতিটিতে কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি হয় বলে জানান তাহের আহমদ।
স্থানীয় আবদুর রহিম জানান, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এসব শুঁটকির চাহিদা দিনদিন বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এখানকার শুঁটকি খাতুনগঞ্জ, আছাদগঞ্জ, চাক্তাইসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা পাইকারি মোকামে যায়। অনেকে নদীর পাড় থেকে ইচ্ছেমতো পছন্দের শুঁটকি কিনেও নিয়ে যান।
কর্ণফুলী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দে বলেন, ‘বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরিতে ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে তাদের বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। এসব শুঁটকিপল্লিতে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। এখানকার শুঁটকি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রাখছে।’
 

© Samakal
Shares:
Leave a Reply