
কুমিল্লায় নগরীতে পানি না দিয়ে বিল আদায়
সারাদেশ
কামাল উদ্দিন, কুমিল্লা 2025-01-19
পাম্প স্টেশন আছে, অথচ বিকল মোটর। আবার কোথাও মোটর আছে, কিন্তু পাইপ ও ফিল্টার নষ্ট। এমন চিত্র কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) এলাকার ১২টি পাম্প স্টেশনের। দীর্ঘদিন ধরে
এসব গভীর নলকূপ বিকল হয়ে থাকায় বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। পানি না পেয়ে নাকাল হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তাদের অভিযোগ, পানি না মিললেও নিয়মিত পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পানির সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেও প্রতিকার মিলছে না। তবে এ সংকটের জন্য কুসিক কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের ওপর। অন্যদিকে জনস্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, পাম্প স্টেশন হস্তান্তরের পর মেরামত ও দেখভালের দায়িত্ব কুসিকের।
নগরীতে জনসংখ্যা ৮ লক্ষাধিক। এখানে নিম্ন আয়ের নাগরিকদের অনেকেরই ভরসা কুসিকের সরবরাহকৃত পানি। ২৬০ কিলোমিটার পাইপলাইনে আবাসিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে পানির সংযোগের সংখ্যা আছে ৩ হাজার ২৯৯টি। কিন্তু পানি সরবরাহের ১২টি পাম্প স্টেশন দীর্ঘদিন বিকল থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে পানির চাহিদা দৈনিক প্রায় ২ কোটি লিটার থাকলেও বর্তমানে সরবরাহ অর্ধেকে নেমেছে। বন্ধ পাম্প স্টেশনগুলো হচ্ছে– নগরীর চকবাজার শাপলা মার্কেট, ঠাকুরপাড়া, কাপ্তানবাজার, পুরাতন চৌধুরীপাড়া, বাদশা মিয়ার বাজার, রানীর দিঘিরপাড়, মুরাদপুর ভূঁইয়া পুকুরপাড়, জাঙ্গালিয়া বাসস্টেশন, রামপুর কোটবাড়ি, গোয়াল মথন, দিশাবন ও সালমানপুর।
কুসিকের পানি বিভাগের তথ্যমতে, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পানি সরবরাহে আয় ২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং ব্যয় ২ কেটি ৩৩ লাখ। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলেন, জাঙ্গালিয়া বাসস্টেশন, রামপুর কোটবাড়ি, গোয়াল মথন, দিশাবন ও সালমানপুর এলাকার পাম্প স্টেশন এলাকায় গ্রাহক সংকট রয়েছে। এতে বন্ধ পাম্প মেরামত ও বিদ্যুৎ বিল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পাম্প স্টেশন বন্ধ আছে নগরীর এমন একটি এলাকা পুরাতন চৌধুরীপাড়া। এখানে ছয় মাস ধরে বিকল হয়ে আছে পানি উত্তোলনের গভীর নলকূপ। ফলে পানি সরবরাহ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আয়েশা বেগম নামে এক নারী বলেন, মাসিক ২০০ টাকা বিল পরিশোধ করেও আমরা পানি পাচ্ছি না। অন্যের বাসা থেকে খাবার পানি আনতে হচ্ছে। গোসলেও সমস্যা।
অভিন্ন চিত্র কাপ্তানবাজার এলাকায়ও।
শনিবার ওই পাম্প স্টেশনের পাশের বাড়ি
বাসিন্দা মো. আলম বলেন, আমরা পুরুষরা পাশের গোমতী নদীতে গিয়ে গোসল করি, নারীরা পড়েছেন বিপাকে। রান্নাবান্না করতেও অসুবিধা হচ্ছে। পাশের বাড়ির লোকজন থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করি।
এ পাম্পের অপারেটর আবু তাহের বলেন, এ পাম্প দিনে ২ ঘণ্টা করে ৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হতো। মাসখানেক আগে হঠাৎ বালু উঠতে শুরু করে। নিচের ফিল্টার ও পাইপ ফেটে গেছে। আবার নতুন লাইন বসানো হবে।
কুসিকের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) মো. ইউসুফ সমকালকে বলেন, সময়মতো জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সাড়া না পাওয়া এবং কম সময়ে একাধিকবার মেয়র পরিবর্তন হওয়ায় পাম্প স্টেশনগুলো মেরামতে বিলম্ব হয়েছে।
পানি সংকটে অচলাবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে নাগরিকের জীবন বিপন্নের শঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু। তিনি বলেন, পানি না দিয়ে বিল আদায় করা অবিবেচক কাজ। এখনই জনস্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ নাসরুল্লাহ বলেন, জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় নগরীতে পানির চাহিদা আগের তুলনায় বেড়েছে। মেশিন ও মাটির নিচের ফিল্টারের সক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমে এসেছে। এগুলো সময়মতো মেরামত না করায় পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়েছে। পাম্প স্টেশন হস্তান্তরের পর আর আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। তবে কুসিক চাইলে আমরা শুধু কারিগরি সহায়তা দিতে পারি। তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময়ে মেঘনা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে তা শোধন করে নগরীতে সরবরাহের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ প্রকল্পটি এখনও অনিশ্চিত।