ক্যাপসিকামে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন

ক্যাপসিকামে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন

সারাদেশ

মিজানুর রহমান নয়ন, কুমারখালী (কুষ্টিয়া)

2025-01-18

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ক্যাপসিকাম চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন কৃষক। এক সপ্তাহে প্রায় ৩ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন তারা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে খরচ বাদে ১৪ লক্ষাধিক টাকা মুনাফা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কৃষকরা। 
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চাঁদপুর ইউনিয়নের নিয়ামতবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়া এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা (৩৩ শতকে বিঘা) জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন ওই ৩০ কৃষক। ভালো ফল ধরায় এবং লাভজনক চাষ হওয়ায় ক্যাপসিকামে স্বপ্ন বুনছেন চাঁদপুরসহ আশপাশের এলাকার কৃষকরাও।
কৃষক লিখন আলীর ভাষ্য, জমির ইজারা, চারা, সার, পরিচর্যাসহ ১০ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। গত সাত দিনে প্রায় ২ হাজার কেজি ক্যাপসিকাম তুলেছেন। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম পাইকারি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। জমিতে যে পরিমাণ ক্যাপসিকাম হচ্ছে, তাতে উৎপাদন আগামী দুই মাসে আরও প্রায় ১৪ হাজার কেজির প্রত্যাশা করছেন। এতে অনায়াসেই আরও ২১ থেকে ২২ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি সম্ভব হবে। 
জানা গেছে, চাঁদপুর ইউনিয়নে জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতি নামে কৃষকদের একটি সংগঠন রয়েছে। সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু ২০২৪ সালে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। সে বছর এ চাষে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্রায় ৪ লাখ টাকা মুনাফা পান। এতে ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহ বাড়ায় সমিতির অন্য সদস্যদেরও। তাদের মধ্যে ৩০ জন নানা বয়সি শিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত কৃষক যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকায় ১০ বিঘা জমিতে নিরাপদ উচ্চফলনশীল সবজি ‘ইন্দ্রা গোল্ড’ জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করেন। ১২০ দিন জীবনকালের এ সবজির চারা রোপণের ৬০ দিনের মাথায় ফল দেওয়া শুরু হয়েছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়ক ঘেঁষে নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকা। সেখানে চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে মালচিং পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। সবুজ গাছে ঝুলছে সবুজ ফল। চার-পাঁচজন করে কৃষক দল বেঁধে কেউ গাছ থেকে ফল তুলছেন, কেউ পরিষ্কার করছেন। কেউবা আবার আধুনিক যন্ত্রে পরিমাপ করে প্যাকেট করছেন বাজারে নেওয়ার জন্য।
এ সময় কৃষক মুন্সী মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। গাছে প্রচুর ফল দেখে খুব ভালো 
লাগছে। বাজারে দাম থাকায় ভালো মুনাফার আশা করছেন তিনি। 
ক্যাপসিকাম চাষ দেখতে এসেছেন উপজেলার নিয়ামতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক রাজ্জাক বিশ্বাস। তিনি বলেন,  লাভজনক হওয়ায় আগামী বছর তিনি এক বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করবেন।
বিদেশি সবজি চাষের খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন কুষ্টিয়া ইবি থানার মৃত্তিকাপাড়া এলাকার কৃষক আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন, গাছে রোগবালাই নেই, মালচিং পদ্ধতিতে বিষমুক্ত চাষাবাদ হয়েছে। দেখে খুব ভালো লাগছে। আগামীতে তিন বিঘা জমিতে তিনি ক্যাপসিকাম চাষ করার পরিকল্পনা করছেন। 
জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে গত বছর দুই বিঘা 
জমিতে প্রথম ক্যাপসিকাম চাষ করেছিলেন। এতে প্রায় ৪ লাখ টাকা লাভ হয়েছিল। আগামীতে তাদের ২৫ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, একদল কৃষক উচ্চ মূল্যের সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। কৃষি অফিস তাদের সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, উচ্চ মূল্যের সবজি ও ফসল চাষাবাদে যশোর টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের পরামর্শ, উপকরণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

© Samakal
Shares:
Leave a Reply