
খুলনায় নভোথিয়েটার নির্মাণ থেকে পিছু হটছে মন্ত্রণালয়
সারাদেশ
হাসান হিমালয়, খুলনা 2025-01-15
খুলনায় নভোথিয়েটার স্থাপন নিয়ে আলোচনা চলছে এক যুগ ধরে। স্থান নির্ধারণ-সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি একনেকে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ইতোমধ্যে দরপত্র তৈরি হয়েছে। জমিও হস্তান্তর হয়েছে। কিন্তু শেষ সময়ে এসে প্রকল্প থেকে পিছু হটছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাতিলের একটি প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে।
শেষ মুহূর্তে মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে খুলনার মানুষ। প্রকল্প চালু এবং দ্রুত কাজ শুরুর দাবিতে চলতি সপ্তাহেই আন্দোলন-কর্মসূচি ঘোষণা করতে যাচ্ছে নাগরিক সংগঠনগুলো। প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সংগঠনগুলোর নেতারা।
নগরীর সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকায় নভোথিয়েটারটি নির্মাণ হওয়ার কথা। শুরুতে এর নাম বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার থাকলেও পরে বঙ্গবন্ধু শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কিছু মানুষ বিষয়টি নিয়ে নানা মিথ্যা তথ্য দিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধেও বিগত সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাসহ ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। তাদের তৎপরতায় পিছু হটছে মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সরকারের ব্যয় সংকোচনের নীতির বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে।
প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন প্রজন্মের কাছে বিজ্ঞানকে সহজভাবে উপস্থাপন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী করা, বিজ্ঞান সম্পর্কিত ধারণা দেওয়ার জন্য প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে নভোথিয়েটার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২ সালে খুলনা নভোথিয়েটারের জন্য জমি খোঁজা শুরু হয়। জমি খুঁজতেই সময় গেছে ১০ বছর। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল ও রংপুরে নভোথিয়েটারের কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে নগরীর সিঅ্যান্ডবি কলোনির ১০ একর জমিতে নভোথিয়েটার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
খুলনায় নভোথিয়েটারের প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫৩ কোটি টাকা। গত বছরের ২৩ এপ্রিল নির্মাণকাজের জন্য কলোনির ৮ দশমিক ৩৫১ একর জমি নথোথিয়েটার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে গণপূর্ত বিভাগ। প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে একটি মাঠ রয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ থেকে জানা গেছে, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে তৈরি খুলনা সিঅ্যান্ডবি কলোনি নিয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ চলছে। এর আওতায় পুরোনো ভবনগুলো ভেঙে ফেলে সেখানে বহুতল আধুনিক ভবন নির্মাণ হবে। এ ছাড়া আধুনিক খেলার মাঠ ও পার্ক নির্মাণ হবে। মহাপরিকল্পনায় আধুনিক খেলার মাঠটি রয়েছে বর্তমান মাঠের কিছুটা পাশে। ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ১৩টি ভবন ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, নভোথিয়েটার নির্মাণের জন্য দুর্নীতির মাধ্যমে ১৩টি ভবন ভেঙে ফেলা এবং খেলার মাঠ দখল করা হচ্ছে বলে প্রচার চালানো হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, গণপূর্তের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পরিত্যক্ত ভবন ভাঙা হচ্ছে। আরও কিছু ভবন ভাঙা হবে। নভোথিয়েটারের সঙ্গে এসবের সম্পর্ক নেই। মহাপরিকল্পনায় বর্তমান মাঠের পাশে আধুনিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাসহ নতুন মাঠ তৈরি করা হবে। সারা বছর শিশুরা খেলতে পারবে।
নভোথিয়েটার নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে খুলনায় মতবিনিময় সভায় আমরা বলেছি, আগে নতুন খেলার মাঠ তৈরি হবে। এর পর নভোথিয়েটারের কাজ শুরু হবে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, নভোথিয়েটারের কাজ দ্রুত শুরুর দাবিতে প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে।