
গোপালগঞ্জ ও ভাঙ্গায় সংঘর্ষে ৩৫ জন আহত
সারাদেশ
গোপালগঞ্জ ও ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি 2025-01-11
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে নববর্ষের শুভেচ্ছা পোস্টার ও ব্যানার টানানো ঘিরে বিএনপির দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এ সময় ১০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মুকসুদপুরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সংঘর্ষে আহত হাবিব মোল্লাকে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া আহত মিজানুর রহমান, নাজমুল, হাফিজুর রহমান, ওসমান শেখ, মশিউর, আসলাম, আমানত, আরমান হোসাইন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যরা বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার দুপুরে মুকসুদপুর কাঠপট্টি এলাকার একটি চায়ের দোকানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আইনবিষয়ক সম্পদক জয়নুল আবেদীন মেজবাহ নববর্ষের শুভেচ্ছা ক্যালেন্ডার টানাতে যান সমর্থক জিম মোল্যা। সেখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) সেলিমুজ্জামান সেলিমের নববর্ষের শুভেচ্ছা ক্যালেন্ডার সরিয়ে জিম মেজবাহর ক্যালেন্ডার টানাতে চাইলে সেলিমের সমর্থকরা বাধা দেন। সন্ধ্যার দিকে জিমের বাড়ির সামনে সেলিমের ব্যানার টানাতে গেলে জিম বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেলিমের সমর্থকরা জিমের বাবা হাবিব মোল্লাকে বেধড়ক মারধর করে। এ সময় তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জিম ডায়াগনস্টিক সেন্টার ভাঙচুর করা হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলতে থাকে। ভাঙচুর করা হয় তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ দশটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সেলিমুজ্জামান সেলিমের সমর্থক মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম রাজু বলেন, সাবেক বিএনপি নেতা আহজ্জাত মহসিন খিপু মিয়ার নির্দেশে মেজবাহর সমর্থকরা দলবদ্ধ হয়ে সেলিমের ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। এতে বাধা দিলে তারা তাদের (সেলিমের সমর্থক) ওপর হামলা করে।
মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহজ্জাত মহসিন খিপু মিয়ার ছেলে জয়নুল আবেদীন মেজবাহর সমর্থক ইমন মিয়া দাবি করেছেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলিমের সমর্থকরা ব্যানার নামিয়ে ফেলেন। এগুলোর ছবি তুলে থানার ওসিকে জানাতে বললে জিম থানার উদ্দেশে রওনা দেন। এ সময় সেলিমের সমর্থকরা জিমের বাবা হাবিবুর রহমানকে মারধর করে।
মুকসুদপুর থানার ওসি মোস্তফা কামাল বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় কোনো গ্রেপ্তার নেই বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পরিত্যক্ত খেয়াঘাট দখল নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে।
গত শুক্রবার রাতে ও গতকাল শনিবার সকালে উপজেলার আলগী ইউনিয়নের হরিরহাট বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন– আলগী ইউনিয়নের ছাত্রদলের সভাপতি প্রার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী নাঈম মাতুব্বর ও তাঁর সমর্থিত আরও দু’জন। তারা ভাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিপক্ষের আহত আরও কয়েকজন স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নাঈম মাতুব্বর জানান, হরিরহাট বাজারে তিনি ব্যবসা করেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ওই বাজারের পরিত্যক্ত খেয়াঘাটের কিছু জমিতে প্রতিপক্ষের রিজু মাতুব্বর ও আমির মাতুব্বরের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাপরাঘর তোলে। এতে তিনি ও তাঁর সহযোগীরা বাধা দেন। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর ওপর হামলা চালায়। গতকাল সকালেও তারা তাঁর ওপর হামলা চালায়।
রিজু মাতুব্বর বলেন, প্রতিপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
তবে ভাঙ্গা উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা ও বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক শিকদার সাঈদুর রহমান মিঠু বলেন, নাঈম এবং তাঁর প্রতিপক্ষের আমির ও রিজু কেউই ছাত্রদলের সঙ্গে জড়িত নয়। দুই পক্ষের লোকজনই সাবেক এমপি নিক্সন চৌধুরী সমর্থিত নেতাকর্মী বলে দাবি করেন তিনি।
থানার ওসি মোকছেদুর রহমান জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।