
গ্যাসের দাম বাড়ানো মানে শিল্প ধ্বংস করার চক্রান্ত: বিপিজিএমইএ
অর্থনীতি
সমকাল প্রতিবেদক 2025-01-12
‘নানা কারণে এখন শিল্প খাতে বেশ স্থবিরতা চলছে। এর মধ্যে গ্যাসের দাম বাড়ালে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বন্ধ হয়ে যাবে অনেক শিল্প-কারখানা। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বাড়ানো মানে শিল্প ধ্বংস করার পরিকল্পিত চক্রান্ত।’
রোববার রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) অফিসে এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি সামিম আহমেদ। গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে বিপিজিএমইএর সভাপতি সামিম আহমেদ বলেন, শিল্প খাত নানা সংকটের মুখে রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ ও বেতন-ভাতা বকেয়া থাকার কারণে বেশকিছু কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে গ্যাসের উৎপাদন ক্রমেই কমছে। নতুন তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মিত না হলে আমদানিও বাড়ানো যাবে না। আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল চালুর তেমন সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্প খাত দ্বিমুখী সংকটে পড়বে। নতুন বিনিয়োগ হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না।
তিনি বলেন, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের আগে দেশের স্বার্থ প্রাধান্য দিতে হবে। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কোনো চুক্তি বা ব্যবস্থা দেশবাসী গ্রহণ করবে না। শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের স্বার্থে বর্তমান গ্যাসের মূল্য ৩০ টাকা অব্যাহত রাখতে হবে।
গ্যাসের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে শুভংকরের ফাঁকি আছে কি না- খতিয়ে দেখার অনুরোধ করে সামিম আহমেদ বলেন, বিগত সরকার নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে গ্যাসের দাম ১৫০ শতাংশের বেশি বাড়িয়েছিল। কিন্তু তারা গ্যাস-সংকটের সমাধান করতে পারেনি, অনেক এলাকায় গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে শিল্প-কারখানা চলছে রেশনিং পদ্ধতিতে। অন্তর্বর্তী সরকার গ্যাস সংকটের সমাধান না করে নতুন করে দাম বাড়াচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়লে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি পড়বে। তখন মূল্যস্ফীতির পাগলা ঘোড়া সামাল দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, পেট্রোবাংলা দুটি উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে। দেশি গ্যাস কিনে নেয় বিভিন্ন কোম্পানি থেকে। এতে প্রতি ইউনিটে তাদের গড়ে খরচ হয় ৬ টাকা ৭ পয়সা। কিন্তু এলএনজি আমদানি করতে খরচ হচ্ছে ৭৫ টাকার বেশি। এতে লোকসানে আছে সংস্থাটি। তাই এলএনজি আমদানির খরচ পুরোটাই শিল্পের ওপর চাপাতে চাইছে পেট্রোবাংলা।
এ সময় বিপিজিএমইএর উপদেষ্টা ড. ইজাজ হোসেন বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে শিল্প বিঘ্নিত করা কোনো সমাধান নয়। প্রয়োজনে বাসাবাড়িতে গ্যাস বন্ধ করেন, সিএনজি বন্ধ করেন। কারণ শিল্প ধ্বংস হলে সব শেষ হয়ে যাবে।
বিপিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এ এস এম কামাল উদ্দিন বলেন, সরকারের মধ্যে এখনও ঘাপটি মেরে আছে পুরোনো দোসররা। তারা দেশের শিল্প ধ্বংস চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।
গ্যাস ও এলএনজি নিয়ে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে বিপিজিএমইএ। সেগুলো হলো- সরকারের ১৫০টি কূপ খননের প্রস্তাব দ্রুততার সঙ্গে সমাপ্ত করতে হবে। নতুন কূপ খননে বিনিয়োগ করতে হবে। বিগত ৫০ বছরে মিয়ানমার থেকে কোনো গ্যাস আমদানি করা হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো চুক্তিও হয়নি। বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। সংকট সমাধানে এলএনজি আমদানি থেকে শুল্ক-কর প্রত্যাহার করা যেতে পারে। নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে আমদানি বাড়ানো যেতে পারে।