চুরি বন্ধ হলে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে না

চুরি বন্ধ হলে গ্যাসের দাম বাড়াতে হবে না

বাংলাদেশ

সমকাল প্রতিবেদক 

2025-01-16

গ্যাস সরবরাহে সিস্টেম লসের নামে অন্তত ১০ শতাংশ চুরি হয়ে থাকে। এ ধরনের চুরি বন্ধ করা গেলে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হবে না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারই পারে এ ধরনের চুরি বন্ধ করতে। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। বর্তমান অর্থনীতির পরিস্থিতিতে ৭০ শতাংশ হারে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, শিল্প খাতে তার অভিঘাত মারাত্মক হতে পারে।  

বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জবিষয়ক এক সেমিনারে গতকাল বুধবার এ কথা বলেন বক্তারা। অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) রাজধানীর পল্টনে সংগঠনের নিজস্ব কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। 

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভ বিদ্যুতে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম যথাক্রমে ৩০ টাকা ও ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব দিয়েছে পেট্রোবাংলা। ২০১৯ সাল থেকেই দ্রুত এবং ঘন ঘন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। 

সেমিনারে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, সরকার গ্যাসের দাম বাড়ানোর যে নীতি নিচ্ছে তা বাস্তবায়িত হলে শিল্পোদ্যোক্তারা কোথায় যাবেন? গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ও ভ্যাট বাড়ানোর আগে অর্থনীতি ও জনজীবনে এর কী প্রভাব পড়বে, তা খতিয়ে দেখা হয়নি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও এ নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয়নি। 

অর্থনীতির বিভিন্ন পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিনিয়োগ কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বাড়ানোর প্রভাব কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা চিন্তা করা উচিত। ভারত বিনিয়োগ আকর্ষণে জমির মূল্যের ওপর ৭৫ শতাংশ ভর্তুকিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও আকর্ষণীয় সুবিধা দিচ্ছে। তাই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতার মুখে রয়েছে দেশের শিল্প খাত।

তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, আসলে সব সরকারের চরিত্রই এক। গত সরকার বলেছিল, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করবে। কিন্তু তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। 

গ্যাসের দাম ও ভ্যাট বাড়ানো প্রসঙ্গে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, নীতির ধারাবাহিকতার অভাব বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান প্রতিবন্ধকতা। এসআরও জারি করে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন করা হয়। তিনি বলেন, নীতি গ্রহণে বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করা হয় না। দুর্নীতির কারণে সব খাত নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ভেঙে দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হবে, যাতে টেকসই বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরি হয়।

লাফার্জ হোলসিমের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, নতুন বিনিয়োগ আনতে দেশের বাইরে গিয়ে রোড শো করা হয়েছে বিগত দিনে। অথচ দেশের বিদ্যমান বিনিয়োগ পরিস্থিতি বোঝা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। চ্যালেঞ্জগুলো শনাক্ত করা দরকার ছিল। নীতির ধারাবাহিকতার অভাব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নীতি ঠিক নেই, আইনশৃঙ্খলা ঠিক নেই। নতুন একটা উদ্যোগ নিতে গেলে ২৩ থেকে ২৭টি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিতে হয়। ট্রেড লাইসেন্সের মতো কাজ করা সময়সাপেক্ষ। এসব অসুবিধা দূর করতে হবে।

এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান বলেন, নিরাপদ বিনিয়োগের কোনো ক্ষেত্র নেই দেশে। স্টক মার্কেটে বিনিয়োগ করলে দস্যুরা নিয়ে যায়। দোকান দিলে চাঁদাবাজরা নিয়ে যাবে। এই অনিশ্চয়তা নিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। বিনিয়োগ আকর্ষণে নতুন উদ্যোক্তাদের কর ছাড় সুবিধা দিতে হবে। ব্যবসা করতে গিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে না হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। 

ব্যবসায়ীদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ভ্যাটের বিষয় নিয়ে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বন্ধ শিল্পকারখানা বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের জন্য ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে বড় আকারের জমি, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ সুবিধা রয়েছে। শিল্পে গ্যাসের আবশ্যকতার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত মোট গ্যাসের ৭০ শতাংশই শিল্পে ব্যবহার হয়। গ্যাসের বরাদ্দ ক্ষমতা থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের হাতে। 

বিনিয়োগ আকর্ষণে বিডার বিভিন্ন পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে চ্যালেঞ্জও। এসব চ্যালেঞ্জ ধীরে ধীরে মোকাবিলা করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে ‘হিটম্যাপ’ নামে একটা পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে মতামত নেওয়া হয়েছে ২০টি প্রতিষ্ঠানের। এর ভিত্তিতে ১৯টি অগ্রাধিকার খাত নির্বাচন করা হয়েছে। হিটম্যাপ অনুযায়ী এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ঢাকায় বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।

© Samakal
Shares:
Leave a Reply