জীবন কি?
জীবন এবং প্রাণ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত যেন এক জৈব মনস্তাত্ত্বিক সমীকরণ – যেথায় “প্রাণ হলো জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া” আর জীবন তাতে উপলব্ধ হওয়া অনেকটা সিমুলেশন বা উপলব্ধি মাত্র [বিষয়টি একটু সহজভাবে এক্সপ্লেইন করা যেতে পারে “একটি মশা’র প্রাণ আছে তাই সে প্রাণী কিন্তু তার জীবনচক্রে ‘ডিম > শূক > মুককীট > পূর্ণাঙ্গ মশা’ অবস্থায় তাদের খাদ্য গ্রহন ও প্রজনন প্রক্রিয়ায় পুরুষ মশা সচরাচর একদিন জীবিত থেকে এবং নারী মশা ৬-৮ সপ্তাহ বড়জোর – তাতে পুরুষ মশা কখনো হুল ফোটায় না যেখানে স্ত্রী মশা হুল ফোটায়”!
জীবনের সাইকোলজিক্যাল উপলব্ধি
মশার এই ক্রিয়া চক্র কি জীবন বলা চলে?!
অবশ্যই এটা তাদের স্বাপেক্ষে চক্রাকার জীবন পরিক্রমা তথাপি মানুষ নামক প্রাণীর জীবন বৈচিত্র্যে তা তুচ্ছতম; সুতরাং জীবন বিষয়টি প্রাণের বৈচিত্র্যের বিচিত্রতায় Relativity বা আপেক্ষিকতায় এক অবজার্ভেশন মাত্র] – মানুষ হিসেবে প্রাণের স্বার্থকতম অবস্থিতি হিউম্যান লাইফ তথা জীবন [এই “জীবন” কেমন সেটার রূপায়ন অনেকাংশে নির্ভর করে অবজারভেশনের ওপর – তদুপরি গোটা জীববৈচিত্র্য হিউম্যান লাইফ বা মানব জীবন’কে তুলনামূলক উন্নত ও অনন্য বললে খুব একটা হয়তো ভুল হয়না]।
আশাকরি জীবন এর সঠিক রূপায়ন আপনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছেন – যেখানে মানব জীবনে খাবার ও জৈবিক চাহিদা ব্যতীতও আছে সুখ – দুঃখ, হাসি – কান্না, বিরহ বিচ্ছেদ – প্রাপ্তির আনন্দ, দার্শনিক চিন্তা, বিশ্বাসবোধে নির্মোহ নির্লিপ্ততা, কমনা – বাসনা, যুক্তিভিত্তিক বিচার বিবেচনা, মূল্যায়ন ইত্যাদি!
জীবনের মূল কি?
তবুও এতোসব ইফেক্টিভ এক্টিভিটির ঠিক মূল (Root) কি সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে…
একটু গভীরভাবে চিন্তা ও অবজার্ভেশান করলে আমরা দেখবো যে “মানব জীবনের সহিত অন্যান্য সকল প্রাণীর জীবনগত বৈশিষ্ট্যের উদ্দেশ্য বা মোটিভ বিবেচনায় আদতে মৌলিক তেমন কোন তফাতই নেই বরং এটি কেবলি স্যাটিসফেকশান মাত্র – যেখানে মানুষের স্যাটিসফেকশান গেইন করার পরিধি জীব জগতের অন্যসব প্রাণী অপেক্ষা নিয়ত বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যময়”।
স্যাটিসফেকশান অর্থ আত্মতৃপ্তি – যেখানে খাবার ও জৈবিক চাহিদা [যা জীবের ক্রমবিকাশ ও বংশধারা রক্ষায় আবশ্যক] ছাড়াও মানুষের ধর্মবিশ্বাসে প্রাপ্ত ঈশ্বর বা দেবতার আরাধনায় ঐশ্বরিক অনুভূতি লাভ – বিনোদনে লব্ধ আনন্দ – দুঃখ বা কষ্ট কিংবা বিরহ যাতনায় অপ্রাপ্তির অবস্থিতি [স্যাটিসফেকশানের বিপরীত স্বরূপতা] – সন্ন্যাসব্রতে আধ্যাত্মিক চিন্তা ও চেতনার উপলব্ধি – ড্রাগ গ্রহনে সাইকোলডেলিক ফিলিংস – পড়াশোনায় নতুন নতুন কিছু জানার আগ্রহ – গবেষনায় নতুন কিছু আবিষ্কারের মোহ – উদ্ভাবনের সফলতায় কৌতূহলী মানসিকতায় আনন্দানুভূতি ইত্যাদি ইত্যাদি; এই সবকিছুই মূলত স্যাটিসফেকশান [সাইকোলজিক্যাল স্টেটমেন্ট বা ব্রেইনের উপলব্ধিগত অবস্থিতি] মাত্র!
জীবনের উদ্দেশ্য
এখন একটি জটিল প্রশ্নের অবতারণা হতে পারে যে “আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কি?” এটার উত্তর বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ হতে বিভিন্ন রকমের হতেই পারে তদুপরি কোনরূপ Biased না হয়ে একদম সলিড রসহীন সত্য হলো “মানুষ নামক প্রাণীর বিবর্তনে এই উচ্চতর অবস্থানে মহাবিশ্বের স্বাপেক্ষে জীবনের বিশেষ কোন উদ্দেশ্যই নেই – অন্তত এভাবে বিবেচ্য হতেই পারে যে জীবনের উদ্ভব যে কোন বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করতে এমনটা মোটেই নয়” – তারমানে এটাও নয় যে হিউম্যান ইভোলিউশনে [রূপকভাবে ন্যাচারাল সিলেকশনের লাটারীতে জয়ী হওয়া ব্যতীত] মানুষ জাতির আজকের এই অবস্থান প্রাপ্তির অর্জনে “মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একদমই শূন্য ছিলো” অথবা “ভবিষ্যতে মানব জাতির উত্তরোত্তর উৎকর্ষতায় হিউম্যান লাইফের লক্ষ্য নিরর্থক হতে হবে” – বরং সচেতন মস্তিষ্ক আপনাকে এটাই বলবে “মানব জীবনের উদ্দেশ্য হলো আপন প্রজন্ম টিকিয়ে রেখে তাতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিরন্তর প্রচেষ্টা যাতে নিত্য নতুন আবিষ্কারে জ্ঞান আহোরণ এবং সেটার ইউটিলাইজেশনের দ্বারা উৎকর্ষপূর্ণ উদ্ভাবন যা সভ্যতার সঠিক ও সুস্থ বিকাশে সহায়ক হয় – তদুপরি মানব জীবনের যখন যেমন পরিস্থিতিই হউক না কেন তাতে সার্ভাইভ করে টিকে থেকে সেটাকে উপভোগ করার মুক্ত মানসিকতা”। এমন জীবন নিশ্চয়ই অর্থবহ এবং শান্তিপূর্ণ তথাপি সর্বাধিক কাম্য!
কনক্লুশন
আমাদের জীবন বৈচিত্র্যময় তাতে সেটাকে সম্মুখে এগিয়ে যেতে জ্ঞান আহরোণের সাথে সাথে জীবনের পরম উপলব্ধি’ই হতে পারে আমার আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি!
সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।