
অগ্রিম ঈদ মোবারক!
রমজান মাসের রোজা রাখার পর ঈদুল ফিতর আমাদের জন্য এক অপূর্ব আনন্দ ও ত্যাগের উৎসব। এই দিনে মুসলমানরা শুধু রোজা ভঙ্গ করে না, বরং ঈদের নামাজ, দোয়া ও নানা সুন্নত আমল পালন করে নিজেদের জীবনে আল্লাহর নিকটতার বার্তা ও শুদ্ধতা ফিরিয়ে আনে।
ঈদের সকালে করণীয়
গোসল ও পরিপাটি প্রস্তুতি: ঈদের দিন সকালে গোসল, মিসওয়াক করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বস্ত্র পরিধান করা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আমল করেছেন, যাতে শরীরে ও মনে সতেজতা ও আনন্দের অনুভূতি হয়।
সুন্দর পোশাক ও সাজসজ্জা: ঈদের বিশেষ দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করে নিজেকে সাজান, যেন এই দিনে সবার চোখে আল্লাহর প্রদত্ত সৃষ্টির প্রশংসা ফুটে ওঠে।
ঈদ শুভেচ্ছা ও আদাব: ঘুম থেকে উঠে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সাথে “ঈদ মোবারক” বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করুন।
ঈদের নামাজ
ঈদের নামাজ পড়া মুসলিম উম্মাহর একটি অপরিহার্য আমল। অধিকাংশ আলেমের মতে, ঈদের নামাজ দুই রাকাত ওয়াজিব। নামাজের শুরুতেই নিয়ত করে নিচের মত করে পাঠ করা হয়:
নিয়ত (আরবী):
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْنِ صَلَاةِ الْعِيْدِ الْفِطْرِ مَعَ سِتِّ التَّكْبِيرَاتِ
উচ্চারণ (বাংলায়):
“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি”
নামাজের আদায়ের সময়, ঈমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা বলে উভয় হাত বাঁধা হয়। এরপর ছানা পড়ে, যেমন: “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা…”। প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকাতে অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া হয়। এরপর সূরা ফাতিহা, অতিরিক্ত সূরা, রুকু, সেজদা ও বৈঠকের মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা হয়। নামাজ শেষে ইমাম দুইটি খুতবা দেন, যা মনোযোগসহকারে শোনা হয়।
ঈদের দোয়া ও আমল
ঈদের নামাজ ও ইবাদতের পাশাপাশি কিছু বিশেষ দোয়া ও সুন্নত আমল পালন করা উত্তম:
তাকবির পাঠ: ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে শুরু করে ঈদগাহে যাওয়ার সময় উচ্চস্বরে তাকবির পড়া সুন্নত। উদাহরণস্বরূপ:
اَللهُ أَكْبَرُ، اَللهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ
উচ্চারণ (বাংলায়): “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”
ঈদের দোয়া: নামাজ শেষে বা পৃথকভাবে, এই দোয়া পড়ুন: “হে আমার প্রভু, তুমি আমাদের ইবাদত গ্রহণ করো, আমাদের পাপ ক্ষমা করো ও এই ঈদের আনন্দে আমাদেরকে বরকত দাও।”
এছাড়াও, সামাজিক আদাব মেনে পরিবারের, প্রতিবেশীদের ও দরিদ্রদের মাঝে শুভেচ্ছা বিনিময় ও দান করাও এই দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
উপসংহার
ঈদের দিন আমাদের জীবনে আনন্দ ও ঐক্য বয়ে আনে। এক মাসের রোজা ও ইবাদতের পর এই দিন আমাদের জন্য শুধু আনন্দের উৎস নয়, বরং নিজেদেরকে শুদ্ধ, পরিশুদ্ধ ও পরোপকারী করে তোলার এক অনন্য সুযোগ। ঈদের নামাজ, দোয়া ও সুন্নত আমল পালন করে আমরা আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা ও প্রার্থনার মাধ্যমে শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভের আশায় থাকি।
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই ঈদের দিনে বরকত প্রদান করুন। আমিন!