নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন

নিরাপদ সড়কের স্বপ্ন

খোলাচোখে

রাইসুল ইসলাম 

2025-01-10

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নীরব মহামারিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ এবং হাজারো মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। এটি আমাদের অর্থনীতি, সমাজ ও মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকেও নাজুক করে তুলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এটি শুধুই পরিসংখ্যান নয়। প্রতিটি সংখ্যার পেছনে রয়েছে একটি পরিবারের জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি। দুর্ঘটনায় আহতদের একটি বড় অংশ চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে, যা শুধু তাদের ব্যক্তিগত জীবনেই নয়; পরিবারের ওপরেও বিশাল আর্থিক বোঝা সৃষ্টি করে।
ব্র্যাকের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ৪০ শতাংশ কর্মক্ষম, যারা দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। প্রতিবছর এই দুর্ঘটনার কারণে দেশের জিডিপির ২-৩ শতাংশ হারিয়ে যাচ্ছে। এই আর্থিক ক্ষতি উন্নয়নশীল বাংলাদেশের জন্য বিশাল ধাক্কা।
আমাদের সড়কগুলোতে প্রতিদিন যে দুর্ঘটনা ঘটছে, তার পেছনে নানা কারণ রয়েছে। বেশির ভাগ চালক প্রশিক্ষণবিহীন অবস্থায় গাড়ি চালায়। অনেকের কাছেই বৈধ লাইসেন্স নেই। অপরিকল্পিত সড়ক অবকাঠামো, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। ট্রাফিক আইন থাকলেও এর যথাযথ প্রয়োগ হয় না। ফলে আইন ভঙ্গকারীরা বারবার একই অপরাধ করতে সাহসী হয়।
২০১৮ সালে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন ছিল এই দুঃসহ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জাগরণ। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় নেমে এলো, তখন গোটা জাতি উপলব্ধি করল যে, পরিবর্তন সম্ভব। তারা লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, ট্রাফিক আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন এবং পথচারীদের জন্য নিরাপদ চলাচল ব্যবস্থার দাবি তুলেছিল। এ আন্দোলনের ফলে সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ প্রণয়ন করে।
বর্তমানে বিআরটিএ আধুনিক ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং ডিজিটাল লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু করেছে। জাতিসংঘের এসডিজি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেক করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা পথচারী ও চালকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কাজ করছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় শহরে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন এবং মহাসড়কগুলোর উন্নয়নে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ সফল করতে হলে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

nমো. রাইসুল ইসলাম: চট্টগ্রাম
 

© Samakal
Shares:
Leave a Reply