নির্বাচনে অনিয়ম, পুলিশের ওপর দায় চাপাচ্ছে প্রশাসন

নির্বাচনে অনিয়ম, পুলিশের ওপর দায় চাপাচ্ছে প্রশাসন

বাংলাদেশ

 সমকাল প্রতিবেদক

<time class="op-modified" dateTime="2024-12-26"2024-12-26
2024-12-26

বিগত তিনটি বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনে অনিয়মের দায় পুলিশের ওপর চাপাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবশ্য বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এমন অনিয়ম করেছেন। এ জন্য তারা নগদ টাকাও পেয়েছেন। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে প্রশাসন এবং পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গত মঙ্গলবারের বৈঠকে এমন অভিমত উঠে এসেছে।

সূত্র বলছে, এ বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার সুপারিশ করা হয়েছে। সবার মতামত নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার প্রশ্নে গ্রহণযোগ্য ও যুগোপযোগী প্রস্তাব দেবে কমিশন।

গত ৩ অক্টোবর ড. বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছে এবং সবার কাছে মতামত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তারা। এসব মতামতের ভিত্তিতে একটি অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে কমিশন। এ কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানিয়েছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

অংশীজনের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার পুলিশ কর্মকর্তা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আনসার ও ভিডিপির মাঠ পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায়ের ৩০ কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন কমিশনের সদস্যরা। আর ৯ ডিসেম্বর বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন তথা দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত উভয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান।

বৈঠকে অংশ নেওয়া পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, বৈঠকে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা বিগত নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা দেওয়ার কথা জানান। কমিশন ওই টাকা প্রদানকারীর পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলেন, নগদ টাকা দেওয়ায় চিহ্নিত করা যায়নি। তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে কাজ করেছেন। তাদের উপায়ও ছিল না। কারণ, ঊর্ধ্বতনদের কথা না শুনলে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তাদের বিরুদ্ধে বদলিসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হতো। 

পুলিশ কর্মকর্তারা আরও বলেন, এমপিদের সার্বক্ষণিক প্রটোকল দিতে হয় পুলিশ সদস্যদের। এ জন্যও তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারেন না। নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে তাদের নিরাপত্তা বিধানের দাবিও উঠে আসে বৈঠকে। 

সূত্র জানায়, বাইরের লোকদের নির্বাচনের দায়িত্ব না দিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল থেকে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে মত এসেছে বৈঠকে। কারণ, বাইরে থেকে যারা আসেন, তাদের ওপর সরকারের প্রভাব থাকে বেশি। তাদের কথামতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাজ করতে হয়।

বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচনে জাল ভোট ঠেকাতে কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে ভোটার শনাক্ত করা, ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার এবং গণমাধ্যমের জন্য নির্বাচনী দায়িত্ব পালন উন্মুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকের বিষয়ে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং যারা এখনও মাঠ পর্যায়ে কর্মরত, তাদের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের বৈঠক হয়েছে। নির্বাচনের সময় তারা নিজেরা ব্যবহৃত হয়েছেন বলে কেউ কেউ অকপটে স্বীকার করেছেন। নির্বাচনের সময় অর্থের লেনদেন হয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, দেশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে তারা আর অতীতের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি চান না। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদদের রক্ত যাতে বৃথা না যায়, সেই প্রত্যয়ও তারা জানান।

অবশ্য ৯ ডিসেম্বর সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তারা বলেন, ওই তিনটি সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের কথা শোনেননি। তাদের কলকাঠি অন্য জায়গা থেকে নাড়ানো হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে এমন ৩০ কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। যাদের মধ্যে বর্তমান প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও ছিলেন।

© Samakal
Shares:
Leave a Reply