
নীলকান্তের বাগানে টাকার হাতছানি
প্রিয় চট্টগ্রাম
সত্রং চাকমা, রাঙামাটি 2025-01-11
রাঙামাটির বালুখালী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বসন্ত মোনপাড়ার পঞ্চাশোর্ধ কৃষক নীলকান্ত চাকমা। উঁচু পাহাড়ি টিলায় ১৬ একর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান রয়েছে তার। এর মধ্যে ৮ একর জমিতে বরই বাগান করেছেন। এবার বরই ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বরই বিক্রি করে এ বছর সাড়ে ৬ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।
৫ থেকে ৬ বছর আগে পাহাড়ি উঁচু টিলায় সেগুন বাগান করেছিলেন। কিন্তু সেগুন গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, পানি উৎস নষ্ট করে। আবার আয় আসে দীর্ঘদিন পর। তাই সেগুন গাছ কেটে বরইসহ মিশ্র ফলের বাগান করেছেন নীলকান্ত। আর তাতেই বাজিমাত করেছেন তিনি।
রাঙামাটি শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত বালুখালী ইউনিয়নের বসন্ত মোনপাড়া। কৃষক নীলকান্ত চাকমা ১০ থেকে ১২ বছর আগে জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এরপর জুমের বদলে সেগুন বাগান করেন। কিন্তু সেগুন বাগান থেকে লাভবান না হওয়ায় ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিক্ষারক হওয়ায় জীবিকা পরিবর্তন করে লিচু, আম, কাঁঠাল, কফি, বরই, মালটা, ড্রাগনসহ মিশ্র ফল বাগান করেন।
৮ একর জমিতে বরই বাগান করেন। বাগানে রয়েছে বাউকুল, বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী, কাশ্মীরি, কোকোনাট ও আপেল কুল। তার বাগানের বরই আকারে বড় ও স্বাদে ভালো হওয়ায় বাজারে চাহিদা রয়েছে বেশ। প্রতি কেজি বরই ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নীলকান্তের ছেলে শুভাশীষ চাকমা ২০১১ সালে রাঙামাটি কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে চার বছরের কৃষি ডিপ্লোমা শেষ করার পর কিছুদিন বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থায় চাকরি করেন। তবে বেতন কম হওয়ায় তা ছেড়ে দেন। এরপর সরকারি চাকরির আশায় বসে না থেকে বাবাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করেন। অপর ছেলে বিশ্বজিৎ চাকমাও রাঙামাটি সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করছেন। বাপ-বেটা মিলে ১৬ একর জমিতে গড়ে তোলেন বিশাল মিশ্র বাগান। নীলকান্ত বলেন, গত বছর লিচু ও বরই বিক্রি করে আয় করেছেন নয় লাখ টাকা। এ বছর ইতোমধ্যে এক লাখ ১৪ হাজার টাকার রবই বিক্রি করেছেন। বাকি রবই বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলের বাগান করে কৃষক নীলকান্ত পরিবার এখন স্বাবলম্বী। বর্তমানে তিনি এলাকায় একজন আধুনিক কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। তাকে দেখে দেখে এলাকার অনেকে মিশ্র ফল বাগান করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানায়, চলতি বছরে ৮০৮ হেক্টর জমিতে কুল চাষ করা হয়েছে। শুধু রাঙামাটি সদরে ৯৬ হেক্টর জমিতে বরই আবাদ হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নীলকান্তের আট একর পাহাড়ি টিলায় ৬০০ গাছে থোকায় থোকায় ধরেছে বরই। কৃষক নীলকন্ত চাকমার ছেলে শুভাশীষ চাকমা জানান, তারা দুই ভাই বাবাকে চাষ থেকে বাজারজাত পর্যন্ত সহায়তা করছেন। কৃষক নীলকান্ত চাকমা জানান, গত বছর চার লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছেন। লিচু বিক্রি করে ৫ লাখ আয় করেছেন।
বালুখালী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিউটি চাকমা বলেন, ‘কৃষক নীলকান্ত ১৬ একর জমিতে বরইসহ মিশ্র ফল বাগান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। নীলকান্ত এখন আদর্শ একজন কৃষক। তাকে দেখে দেখে এলাকায় অনেক কৃষক বাগান সৃজনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা
বলেন, ‘নীলকান্ত কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে বাগান পরিচর্যা করে সুন্দর ফলন পেয়েছেন। তবে তিনি ঠিকমতো পানি দিতে পারছেন বলে ভালো ফলন পাচ্ছেন। এখানে ভালো ফলনের পেছনে পানির ভূমিকাটা অনেক।’