
পরামর্শক ও প্রশিক্ষণেই ৯০০ কোটি টাকা
বাংলাদেশ
হাসনাইন ইমতিয়াজ <time class="op-modified" dateTime="2025-01-13"2025-01-13
2025-01-13
প্রকল্পটি প্রযুক্তিগত সক্ষমতা উন্নয়নের। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ৩৬ পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে দেশ-বিদেশে অনুষ্ঠান, কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের নামে সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সিন্ডিকেট করেছে হরিলুট। ফলে ঋণদাতা বিশ্বব্যাংক ও আইডিএ ‘এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনমি (ইডিজিই)’ প্রকল্পের আড়াই হাজার কোটি টাকার (৮৪ টাকা হিসাবে ২৯৫ মিলিয়ন ডলার) দুই-তৃতীয়াংশ ফেরত নিয়েছে।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পলক সিন্ডিকেটের বিশেষ নজর ছিল প্রশিক্ষণে। কারণ, নিজস্ব লোকজন দিয়ে কিছু কাজ করে সহজেই অর্থ লোপাট করা যেত। ইডিজিই প্রকল্পও সেভাবেই সাজানো হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে পার হয়েছে তিন বছর। অগ্রগতি মাত্র ১৪ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পে পরামর্শক ও সেবা খাতে ব্যয় ধরা হয় ২৯৩ কোটি টাকা। প্রশিক্ষণ ও অনুদানে রাখা হয় ৬০৩ কোটি টাকা। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন-সংশ্লিষ্ট কাজের একটিও আলোর মুখ দেখেনি। বলার মতো অগ্রগতি ন্যাশনাল জব পোর্টাল, যদিও তা এখন পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। অর্থ লোপাটের জন্যই এমন প্রকল্প সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ইডিজিই প্রকল্প শুরু হয় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে; ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ট্রেনিং ও ইভেন্টের জন্য ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি-সংক্রান্ত পোর্টাল উদ্বোধন, গবেষণা ও উদ্ভাবন কেন্দ্রের নকশা, বাংলাদেশ ও জাপান-বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বন্ধুত্ব উদযাপনসহ কিছু কর্মশালা ও সেমিনার হয়েছে।
২৩০ সংসদ সদস্যকে ডিজিটাল লিডারশিপ ও সাইবার সিকিউরিটিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ৫০৭ মধ্যম সারির কর্মকর্তা পেয়েছেন প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া সরকারি অফিসের জন্য ইউনিফায়েড কমিউনিকেশন্স কম্পোনেন্ট ও বেকার তরুণদের জন্য ন্যাশনাল জব পোর্টালের কাজ শেষ হয়েছে। যদিও সেবা দুটি চালু করা সম্ভব হয়নি। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ১৪ শতাংশ। এমন অবস্থায় প্রকল্পের দেড় হাজার কোটি টাকা ফেরত নিয়েছে ঋণদাতা বিশ্বব্যাংক ও আইডিএ।
প্রকল্প পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘প্রকল্পের অগ্রগতি খুব একটা হয়নি। এরই মধ্যে দাতারা অর্থ ফেরত নিয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার কিছু উদ্যোগ পর্যালোচনা করেছে; কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে।’
১০০ কোটি টাকার কেনাকাটা অনুমোদন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগমুহূর্তে গত বছর ৩১ জুলাই ইডিজিই প্রকল্পের অধীনে ক্লাউড সেবা সম্প্রসারণে দুই লটে ১০৩ কোটি টাকার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। প্রথম লটের ৫১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাজ পায় ‘থাকরাল ইনফরমেশন সিস্টেমস’। এই দরপত্রে মাত্র দুটি কোম্পানি অংশ নেয়। তার মধ্যে একটিকে অযোগ্য দেখানো হয়। সূত্র জানায়, পলকের ঘনিষ্ঠ কোম্পানিকে কাজ দিতে দরপত্রে কারসাজি করা হয়। দ্বিতীয় লটে ৫১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার কাজ যৌথভাবে পায় ইএসএল ও ইউসিসিএল জেভি। এখানেও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অনিয়ম-দুর্নীতি অনুসন্ধানে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করে। এ কমিটি গত মাসে প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে ইডিজিই প্রকল্পের অধীনে দেশে-বিদেশের ইভেন্ট, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তি ল্যাব নির্মাণসহ একাধিক উদ্যোগ বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরে বিভিন্ন ইভেন্ট বাদ দেওয়া হয়েছে। কমিটি মনে করে, অপ্রয়োজনীয় উদ্যোগগুলো ছিল অর্থ লোপাটের জন্য।