আমরা স্টুডেন্ট থাকাকালিন সময়ে যখন এমসিকিউ (MCQ) কিংবা ছোট প্রশ্ন মুখস্থ করতাম তখন উত্তর হাত দিয়ে ঢেকে প্রশ্ন পড়তাম যাতে উত্তর না দেখি। এর পরে মনে মনে ভাবতাম উত্তর কি হবে। তারপর উত্তর এর সাথে মিল করে নিতাম যে মিলে কি না। ঠিক এরকম ধারনা নিয়ে ফ্ল্যাশকার্ড এর উদ্ভাবন। আমাদের দেশে ফ্ল্যাশকার্ড সম্পর্কে অনেকেই কোন ধারনা রাখে না। এই আর্টিকেলটি পড়তে থাকুন। এ সম্পর্কে কিছুটা ধারনা দিতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

ফ্ল্যাশকার্ড কি?

ফ্ল্যাশকার্ড হল স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর একটি কার্যকরি মাধ্যম। আমাদের ব্রেইন সময়ের সাথে তথ্য ভুলে যায়। গবেষনা অনুযায়ী কোন কিছু প্রথমবার শিখলে সেটা সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টা মনে খাকে। তার পরে রিভিশন দিলে ৩-৭ দিন মনে থাকে। তারপরের রিভিশনে ২-৪ সপ্তাহ মনে থাকে। তবে একসময় গিয়ে আমরা সেটা আর ভুলি না। এভাবে বার বার ব্রেইন কে রিমাইন্ড করা যে এটা দরকারি তাই ভুলে না যাই যেন। এই আইডিয়া থেকেই ফ্ল্যাশকার্ড এর উদ্ভাবন। ফ্ল্যাশকার্ড এর সংজ্ঞা যদি বলি তবে এটা হলো একটা কার্ড এর একপাশে থাকে প্রশ্ন এবং আরেক পাশে উত্তর। এবং প্রশ্ন দেখে চেষ্টা করতে হবে উত্তর কি ছিল।

এতে সুবিধাটা হলো যখন কোন কার্ড এর উত্তর ভুল হবে তখন সেগুলো আলাদা ভাবে রাখা যাবে এবং বোঝা যাবে কোন বিষয়ে আপনি দুর্বল। এবং সেগুলো বার বার চেষ্টা করার মাধ্যমে আয়ত্ত করা সম্ভব হবে। এতে যেগুলো আপনার ইতিমধ্যে মুখস্থ করা আছে সেগুলো বার বার রিভিশন দিতে হবে না। আপনার প্রোডাক্টিভিটি বাড়বে এবং মুল্যবান সময়ও বাঁচবে।

কেন ব্যবহার করবেন?

স্টুডেন্ট দের বিভিন্ন বিষয় স্বরনে রাখতে হয়। ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার এর মাধ্যমে সহজে বোঝা যাবে কোন বিষয় টা আরো বেশি গুরুত্ব দিয়ে রিভিশন দিতে হবে। ফ্ল্যাশকার্ড এর ব্যবহার এর মাধ্যমে ব্রেইন একধরনের প্রশিক্ষণ হয়ে যাবে। এতে যেকোন পড়া মনে থাকবে সহজে।

জব প্রিপারেশনে ফ্ল্যাশ কার্ড অনেক কাজের প্রমানিত হতে পারে। কোন বিষয় ফ্ল্যাশকার্ড বানিয়ে কোন কিছু আয়ত্ত করা যেতে পারে সহজে।

নতুন ভাষা শিখতে ফ্যাশকার্ড এর গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে বেসিক শব্দ গুলো মনে রাখতে ব্যবহার করা যেতে পারে ফ্ল্যাশকার্ড।

কিভাবে ব্যবহার করবেন?

ফিজিকালি ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার এর জন্য মোটা পেপার এর কার্ড তৈরি করুন। একপাশে প্রশ্ন লিখুন এবং অপর পাশে লিখুন উত্তর। এখানে উত্তর যেন বেশি বড় না হয়। অর্থাৎ উত্তরের স্থানে বেশি কিছু/বিস্তারিত লিখতে যাবেন না তাহলে ফ্ল্যাশকার্ড আপনার কোন কাজে আসবে না। এবার যখন বেশ কিছু কার্ড আপনার তৈরি হয়ে গেল তখন এগুলো এক দিক সব কার্ড এর প্রশ্ন উপরে থাকে তানাহলে এর কোন অর্থই থাকলো না।

ব্যবহার করার সময় এক এক করে কার্ড গুলোতে থাকা প্রশ্ন দেখুন এবং মনে করতে চেষ্টা করুন উত্তর কি ছিল। এরপরে কার্ড উল্টিয়ে উত্তর দেখুন মিলেছে কি না।

যেসব কার্ড এর উত্তর মনে করতে পারছেন না সেগুলো আলাদা ভাবে রাখুন এবং যেগুলো মনে করতে পারছেন সেগুলোও আলাদা রাখুন। আবার যেগুলো কার্ড হালকা মনে করতে পারতেছেন এবং মনে হচ্ছে আর বেশ কয়েক বার দেখলে হয়ে যাবে সেগুলোও আলাদা করে রাখুন।

ডিজিটালি ফ্ল্যাশকার্ড স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটার এর মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারেন। বেশ কিছু সফটওয়্যার আছে ফ্রি এবং পেইড যেগুলো থেকে ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। এর মধ্যে আনকি (AnkiDroid) নামের একটি সফটওয়্যার অনেক প্রসিদ্ধ। আনকি এর নিজস্ব লাইব্রেরি আছে বিভিন্ন বিষয় এর উপরে যেগুলো বিভিন্ন মানুষ এর তৈরি। এবং এই আনকি সফটওয়্যারটি একদম ফ্রি টু ইউজ।

আনকি (Anki) এর ব্যবহার

অ্যাকাউন্ট করুন: আনকি ব্যবহার এর জন্য AnkiWeb সাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন।

এবার অ্যাপ ইন্সটল এবং অ্যাপ ওপেন করে অ্যাকাউন্ট লগইন করুন। অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড সেভ করে রাখতে পারেন, এতে পরবর্তিতে প্রগ্রেসগুলো হারাবে না।

Deck ইন্সটল করুন প্রয়োজনীয় টপিক অনুযায়ী। এখানে আপনার কাঙ্ক্ষিত ডেক নাও থাকতে পারে। এক্ষেত্রে অ্যাপ থেকে প্লাস বাটনে ক্লিক করে Create Deck ক্লিক করুন।

ডেক তৈরি হয়ে গেলে ওতে লং প্রেস করে অ্যাড অপশনে ক্লিক করুন। ফ্রন্ট এর স্থানে প্রশ্নটি লিখুন আর ব্যাক এর স্থানে উত্তর এরপর টিক চিহ্নটিতে ক্লিক করার মাধ্যমে অ্যাড করুন।

যথেষ্ট অ্যাড হয়ে গেলে ব্যাক করে ডেক টিতে ক্লিক করুন। তাহলে একে একে আপনার সামনে কার্ড শো হতে থাকবে। এবার ঠিক ফিজিকাল কার্ড এর মতো করে আগে প্রশ্নটি নিয়ে ভাবুন উত্তর কি হবে এবং Show Answer বাটনে ক্লিক করুন।

আপনার সামনে ‘Again, Hard, Good, Easy’ এই চারটা অপশন আসবে। তো এখানে easy তখনই দিবেন যদি আপনি প্রশ্নটির উত্তর আগে থেকে জানেন। ও Again তখনই দিতে পারেন যদি আপনার প্রশ্নটির উত্তর একটুও জানা না থাকে।

আনকি অ্যাপ এর সুবিধা

অ্যাপ ব্যবহার’এ সুবিধা হলো অ্যাপ নিজে থেকে র‍্যান্ডম ভাবে প্রশ্ন দেখায়। কার্ড এর প্রগ্রেস সেভ করে রাখে। Easy, Hard আপনি যেটা সিলেক্ট করবেন সে অনুযায়ী কার্ড সর্ট হয়ে যাবে।

তৈরিকৃত ডেক যেকোন সময় এক্সপোর্ট করে রাখতে পারবেন। আপনার ডেক যেকারো সাথে শেয়ার করতে পারবেন। আবার প্রয়োজনে ইমপোর্টও করে নিতে পাবেন।

মনে রাখবেন

ফ্ল্যাশকার্ড এর ব্যবহার করবেন রিভিশন এর জন্য। আপনি আগে পড়ুন/শিখুন। তারপরে এই উপায়ে নিজেকে টেস্ট করুন, তাহলে বুঝতে পারবেন কোন বিষয়ে আপনি দুর্বল। কোন গুলো বেশি বেশি রিভিশন করতে হবে। মনে রাখবেন, ফ্ল্যাশকার্ড শেখার জন্য নেয় বরং রিভিশন এর জন্য। ইতোমধ্যে যেগুলো শিখেছেন সেগুলো পুনরায় ব্রেইন এর মধ্যে রি’কল করার জন্যই ফ্ল্যাশকার্ড ব্যবহার করতে হয়। তো কেমন লাগলো এই আর্টিকেল জানাবেন। আল্লাহ হাফেজ।

Shares:
Leave a Reply