বইমেলায় প্যাভিলিয়ন ও  স্টল বরাদ্দ নিয়ে অসন্তোষ

বইমেলায় প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ নিয়ে অসন্তোষ

শিক্ষা

 অমরেশ রায় ও দ্রোহী তারা

2025-01-13

অমর একুশে বইমেলা-২০২৫-এর প্যাভিলিয়ন ও স্টল বরাদ্দ নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। প্রথম সারির ১৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে স্টল দেওয়া হলেও বরাবরের মতো কোনো প্যাভিলিয়ন দেওয়া হয়নি। একটি প্রতিষ্ঠান প্যাভিলিয়ান কিংবা স্টল কোনোটাই বরাদ্দ পায়নি। আরও তিন প্রতিষ্ঠানকে প্যাভিলিয়ন দেওয়া হলেও আয়তন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সক্রিয় ‘বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি’ ও ‘জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক ফোরাম’ নামের দুটি সংগঠনের আপত্তির কারণে প্রথিতযশা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্যাভিলিয়ন/স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে এমন অবনমন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় ‘সুবিচারপ্রত্যাশী প্রকাশকবৃন্দ’ ব্যানারে ক্ষুব্ধ প্রকাশকরা বাংলা একাডেমির কাছে চিঠি দিয়ে এর প্রতিকার চেয়েছেন। গতকাল রোববার বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সঙ্গে দেখা করে এই চিঠি দেন তারা। 

চিঠিতে অবনমনকৃত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ আগের পর্যায়ে পুনর্বহালসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিকারের আশায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টার কাছে চিঠির অনুলিপি দিয়েছেন তারা। 

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– কোনো প্রকাশকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া; অনিবন্ধিত সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের বইমেলা পরিচালনা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া; কিছু প্রকাশকের বিরুদ্ধে ‘বিগত সরকারের দোসর ও সুবিধাভোগীর’ অভিযোগ আনা প্রকাশকদের এ-সংক্রান্ত প্রমাণাদি দাখিলে বাধ্য করা; যেসব প্রতিষ্ঠানের স্থান বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, তা নিরপেক্ষ কমিটি দিয়ে যাচাই করা; ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ ট্যাগ দিয়ে নিরাপত্তাহীনতার মুখে ফেলা প্রকাশকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

বইমেলায় স্টল ও প্যাভিলিয়ন বরাদ্দের চূড়ান্ত তালিকা গত শুক্রবার প্রকাশ করে বাংলা একাডেমির বইমেলা পরিচালনা কমিটি। যেখানে ৫৫৫টি সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৯০১ ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্যাভিলিয়ন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় প্রথিতযশা ও প্রথম সারির ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নাম না থাকায় এবং আরও তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নের আয়তন কমিয়ে দেওয়ার খবর আসার পর থেকেই এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। 

প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– অনিন্দ্য প্রকাশ, কাকলী প্রকাশনী, অন্বেষা প্রকাশন, পাঠক সমাবেশ, পুঁথিনিলয়, মিজান পাবলিশার্স, তাম্রলিপি, সময় প্রকাশন, জিনিয়াস পাবলিকেশন্স, চারুলিপি প্রকাশন, নালন্দা, বিশ্বসাহিত্য ভবন, পার্ল পাবলিকেশন্স ও শব্দশৈলী। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও কবি তারিক সুজাতের প্রতিষ্ঠান জার্নিম্যান বুকস’কে কোনো স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। আর প্যাভিলিয়ন না পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটিকে কেবল চার ইউনিটের স্টল এবং বাকিদের তিন ইউনিটের স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনুপম, অন্যপ্রকাশ ও আগামী প্রকাশনীকে প্যাভিলিয়ন দেওয়া হলেও কমানো হয়েছে আয়তন। প্রথমে তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৪/২৪ ফুট সাইজ, পরে কমিয়ে আনা হয় ২০/২০ ফুটে।

ক্ষুব্ধ প্রকাশকদের অভিযোগ, সরকার পতনের পর বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতিতে ভাঙন ধরিয়ে জাতীয়তাবাদী সৃজনশীল প্রকাশক ফোরাম এবং বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি নামে দুটি সংগঠনকে সক্রিয় করে তোলেন একদল প্রকাশক। তারা বইমেলা পরিচালনা কমিটির কাছে বেশ কিছু প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’সহ নানা অভিযোগ এনে তাদের বরাদ্দ বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিল।  

আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি সমকালকে বলেন, এবারের বইমেলায় অংশগ্রহণকারীদের তালিকা প্রকাশের পর কিছু অসমাঞ্জস্যতা প্রকাশকদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এসব নিয়ে বাংলা একাডেমিকে অভিযোগ দিয়েছেন তারা।

বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সদস্য ও রিদম প্রকাশনীর কর্ণধার গফুর হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই ১৭-১৮ প্রকাশক দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে বইমেলায় প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ পেয়ে আসছিলেন। তারা বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক বিক্রেতা সমিতিকেও কবজায় রেখেছিলেন। তাই তাদের ব্যাপারে আমরা আপত্তি জানিয়েছি।’ 
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব সরকার আমিন বলেন, যেসব প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের আয়তন কিংবা ইউনিট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন প্রকাশকরাই। স্টল বরাদ্দ উপকমিটি সেসব আপত্তি ও অভিযোগ নিয়ে অনুসন্ধান করেছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
 

© Samakal
Shares:
Leave a Reply