
বরাদ্দ কম, কম্বল বিতরণে বিপাকে জনপ্রতিনিধিরা
সারাদেশ
কামাল উদ্দিন, কুমিল্লা 2024-12-27
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নে গ্রাম আছে ২৭টি। এ ইউনিয়নের জন্য শীত মোকাবিলায় প্রথম দফায় কম্বল বরাদ্দ মিলেছে মাত্র ৩০টি। তাই প্রতি গ্রামে দেওয়া হয়েছে একটি করে।
কুমিল্লা জেলার জন্য এবার শীতার্ত ও দুস্থদের জন্য কম্বল কেনার অর্থ বরাদ্দ অপ্রতুল থাকায় চাহিদার সিকিভাগ কম্বলও কেনা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে মাঠ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পড়েছেন বিপাকে। গত এক সপ্তাহে জেলার ১৭ উপজেলার জন্য বরাদ্দ করা প্রথম দফার অর্থে কেনা হয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কম্বল, যা জেলার সাড়ে ৩ সহস্রাধিক গ্রামে গড়ে সর্বোচ্চ ৪-৫টি করে বরাদ্দ মিলেছে। কোথাও আরও কম। প্রথম বরাদ্দ থেকে ছোট-বড় সব উপজেলায় সমান বরাদ্দ রাখা হলেও দ্বিতীয় বরাদ্দ থেকে কমবেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ছাড়া ৮টি পৌরসভায় বরাদ্দ দেওয়া হলেও সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য এখনও বরাদ্দ মেলেনি।
জেলা ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, গত ১৫ ডিসেম্বর কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার প্রতিটিতে ৩ লাখ করে ৫১ লাখ টাকা অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা থেকে ছোট-বড় সব উপজেলায় সমান বরাদ্দ রাখা হয়। প্রতিটি উপজেলায় বরাদ্দ করা অর্থ থেকে ভ্যাট ও অন্যান্য কর বাবদ টাকা কর্তন করার পর ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে কম্বল কিনে ইউনিয়ন পর্যায়ে দেওয়া হয়েছে, যা চাহিতার তুলনায় অনেকে কম। প্রতিটি এক কেজি ওজনের কম্বল কেনা হয়েছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায়।
শীতার্ত মানুষের তুলনায় কম্বল বরাদ্দ অপ্রতুল হওয়ায় তা বিতরণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, কোনো কোনো উপজেলার আয়তন ও জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্য উপজেলার তুলনায় দ্বিগুণ। কোনো উপজেলায় ইউনিয়ন ১৫ থেকে ২২টি, কোথাও আবার ৮-৯টি। আবার কোনো কোনো উপজেলায় গ্রাম অন্য ইউনিয়নের দ্বিগুণ।
ত্রাণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দ থেকে ১৫ হাজার ৯৩৮টি কম্বল কেনা হয়েছে, যা জেলার ১৭টি উপজেলার ১৯৩টি ইউনিয়নের ৩ হাজার ৬৮৭টি গ্রামের জন্য গড়ে ৪-৫টির কিছু বেশি কম্বল দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ইউনিয়নে বরাদ্দ মিলেছে দু-একটি করে কম্বল। গত বুধবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় এখনও প্রথম দফার বিতরণ শেষ হয়নি। এদিকে গত ১৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৭টি উপজেলায় ৪৬ লাখ টাকা ৫০ হাজার টাকা এবং ৮টি পৌরসভায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দের কম্বল কেনা এখনও শেষ হয়নি।
কথা হয় নদীবেষ্টিত মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে। সমকালকে তিনি বলেন, তাঁর ইউনিয়নের অধিকাংশ লোক দরিদ্র। তারা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এ ইউনিয়নে কম্বল দরকার অন্তত ৪০০, মঙ্গলবার কম্বল পেয়েছেন মাত্র ৯০টি। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এখনও বিতরণ করেননি। ১২ জন ইউপি সদস্যের হাতে দু-একদিনের মধ্যে কম্বলগুলো হস্তান্তর করবেন।
চান্দিনার জোয়াগ ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আবদুল আউয়ালের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নে ১৭টি গ্রাম আছে, কম্বল পেয়েছেন মাত্র ৭০টি। একটি গ্রামে ৪-৫টি কম্বল দিয়ে কি চাহিদা মেটানো যায়? ইউপি সদস্যরা এগুলো এলাকায় বিতরণ করতে গিয়ে আরও ঝামেলায় পড়েছেন।
অপরদিকে বড় উপজেলাগুলোর কোনো কোনো গ্রামে গড়ে দু-একটি করে কম্বল বরাদ্দ মিলেছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঘোলপাশা ইউনিয়নে গ্রাম আছে ২৭টি। এ ইউনিয়নের জন্য প্রথম দফায় কম্বল বরাদ্দ হয় মাত্র ৩০টি। চেয়ারম্যান এ কে খোকন সমকালকে বলেন, ‘চাহিদার কথা বলে কী লাভ। প্রতিটি গ্রামে অন্তত ২০-৩০টি কম্বল দরকার। কিন্তু প্রতিটি গ্রামে দিয়েছি একটি করে। এতে বেশ সমালোচনা হচ্ছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলীর ভাষ্য, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমান বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে বরাদ্দে কিছু কম-বেশি রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ শীতবস্ত্র বিতরণ করতে চাইলে আমরা মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে বিতরণে সহায়তা করব।’