আসসালামু আলাইকুম 

আশা করি সকলেই অনেক ভালো আছেন। আজকে আপনাদের মাঝে চলে আসলাম আরো একটি নতুন টপিক নিয়ে। আজকে যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো তা হয়তো আপনাদের মাথায় কোনো না কোনো দিন ঠিকই এসেছে। আর কি নিয়ে এই পোস্ট লেখা তা আশা করি টাইটেল দেখেই বুঝে গেছেন। তাও আরেকবার রিমাইন্ড করিয়ে দেই, আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো বাংলাদেশে বিটকয়েন অবৈধ কেন এটি নিয়ে।

পোস্ট শুরু করার আগেই আমি একটি বিষয় ক্লিয়ার করে দেই। আজ থেকে ৭-৮ দিন আগে আমি নিজেও এটা নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানতাম না। তবে এটা নিয়ে গুগল, ইউটিউব ইত্যাদি যায়গায় সার্চ করে আমি সেখান থেকে কমন কিছু বিষয় পেয়েছি যা আসলে এই জিনিসটার সাথে যুক্তি সম্মত তাই আমি সেগুলো নিয়েই আজকের পোস্টে বলবো।

বিটকয়েন কি?

দেখুন যখন আমরা বিটকয়েন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি তখন প্রথমে কিছুটা ব্যাসিক বলে দিলে হয়তো আপনাদের জন্য সুবিধা হবে। বিটকয়েন হল বিশ্বের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টো কারেন্সি, যা ব্লক চেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়। এটা কোনো প্রকার নির্দিষ্ট সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয় না বরং এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল মুদ্রা।

বর্তমান মার্কেটে বিটকয়েনের মূল্য কতো?

বর্তমানে ১ বিটকয়েনের মূল্য প্রায় ৯৮,৩৮,৭৬৬ টাকার মতো (১১-ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৪০)। এই বিটকয়েনের দাম একসময় ছিলো ১ বিটকয়েন = ৩৪,৮৬৯ টাকার মতো (৬-ই মে, ২০১৬) । একবার ভেবে দেখুন এটা এখন কতটা দামী। এছাড়াও কিছু মাস আগেও এটা প্রায় ১ কোটি টাকা ক্রস করে গিয়েছিলো। নিচে দুইটা গ্রাফ দিচ্ছি দেখে নেন। (গ্রাফ গুগল থেকে নেওয়া)

picked2

picked

তবে এটা অস্থিতিশীল। যেকোনো সময় দাম বাড়তেও পারে আবার কমতেও পারে। অর্থাৎ আপনি আজকের রেট অনুযায়ী (৯৮,৩৮,৭৬৬ টাকা দিয়ে) ১ বিটকয়েন কিনলেন। সেটা কালকে ১ কোটি ও ক্রস করে যেতে পারে আবার, সেটা ৫০,০০,০০ টাকাতেও নেমে আসতে পারে। যদিও একেবারে এতটা কমে যাওয়ার রেকর্ড আগে তেমন একটা হয় নি (২০২২ সালে করোনার সময় একবার অনেকটাই ডাউন হয়ে গিয়েছিলো)। তবুও ক্রিপ্টো কারেন্সি কেমন সেটা আশা করি আপনারা ভালোই জানেন।

বিটকয়েনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

বিটকয়েন ২০০৯ সালে “সাতোশি নাকামোতো” নামক একজন (কিংবা একদল) ব্যক্তি দ্বারা চালু করা হয়। এটি এক প্রকার ডিজিটাল মুদ্রা, যা ক্রিপ্টো গ্রাফি ব্যবহার করে নিরাপদ লেনদেন সম্পন্ন করে। বিটকয়েনের লেনদেন ব্লকচেইন নামক একটি বিকেন্দ্রীভূত লেজারে সংরক্ষিত হয়ে থাকে, এবং এর ফলেই এটা লেনদেন নিরাপদ এবং স্বচ্ছ করে তোলে।

যদিও বিশ্বের অনেক দেশ (যেমন: আমেরিকা, ইউরোপের প্রায় সব দেশ, কানাডা, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি) বিটকয়েনকে বৈধতা দিয়েছে তবুও বাংলাদেশে এটি এখনো অবৈধ। কিন্তু কেন? এই কেন এর উত্তর জানতে হলে নিচের বাকি অংশটুকুও আপনাদের পড়তে হবে। সেখানে আমি যতটা ইজিলি সম্ভব বিষয়টা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করবো 

বাংলাদেশে বিটকয়েন কবে থেকে অবৈধ

বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৭ সালে একটি আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা দেয় যে, বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্যবহার তথা লেনদেন বা বিনিয়োগ বাংলাদেশে সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। এর মানে এটা নয় যে ২০০৯ (বিটকয়েন চালু হওয়ার সময়) সাল থেকে ২০১৭ সালের আগে অবদি এটি বাংলাদেশে বৈধ ছিলো। তখনও এটি অবৈধ ছিলো। তবে এটি ২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বলে দেওয়া হয় যে বিটকয়েন বাংলাদেশে অবৈধ।

কেন বাংলাদেশে বিটকয়েন অবৈধ?

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতে, বিটকয়েন কোনো ধরনের বৈধ ডিজিটাল মুদ্রা নয় বরং এটি এক প্রকার মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী অর্থায়ন কিংবা অন্যান্য অবৈধ কার্যক্রমে ব্যবহৃত হওয়ার একটি কারেন্সি পদ্ধতি। কিন্তু কেন, এগুলোই আমরা নিচে বিভিন্ন পয়েন্টের মাধ্যমে জানবো। তো চলুন সেগুলো জেনে নেওয়া যাক।

১. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণনীতি

এটা হয়তো আপনারা অনেকেই জানেন যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক লেনদেন এবং মুদ্রার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে প্রথমেই বলেছিলাম বিটকয়েন একটি বিকেন্দ্রীয়ভূত মুদ্রা। তাই বিটকয়েনের মত বিকেন্দ্রীভূত মুদ্রা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেকোনো সময় চলে যেতে পারে। যার ফলে একটি দেশে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশ সহ আরো অনেক দেশ এই ঝুকি এড়ানোর জন্য বিটকয়েনকে অবৈধ করে রেখেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি উন্নয়নরত মধ্যম আয়ের দেশের মধ্য অবস্থান করছে। তাই বাংলাদেশ সহ সকল উন্নয়নরত মধ্যম আয়ের দেশের পাশাপাশি নিম্ন আয়ের দেশ গুলোতে বিটকয়েন আজও অবৈধ। অন্যদিকে আমেরিকা, ইউরোপের মতো উচ্চ আয়ের দেশ গুলো এটাকে বৈধতা দিয়েছে।

২. বিটকয়েনের অস্থিতিশীলতা

বিটকয়েন বাংলাদেশে অবৈধ থাকার আরো বড় একটা কারণ হতে পারে এর কারেন্সির উঠা-নামা চলমান থাকার জন্য। আপনারা জানেন বিটকয়েন এর দাম যেমন একলাফে বাড়তে পারে তেমন কমতেও পারে। যার ফলে এটা বিনিয়োগকারী দের জন্য অনেক ঝুকিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য এটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

৩. মানি লন্ডারিং এবং অবৈধ কার্যক্রম

আপনাদের একটি কথা জানিয়ে দেই সেটা হলো, বিটকয়েন লেন-দেন করার জন্য ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে হয় না। যার ফলে এটি ব্যবহার করে সহজেই মানি লন্ডারিং, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, ব্লাক মানি পাচার, সন্ত্রাসীদের অর্থের আদান প্রদান ইত্যাদির মতো কাজ হতে পারে। তাই হতে পারে বাংলাদেশ সরকার এই ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য বিটকয়েনকে নিষিদ্ধ করে রেখেছে।

৪. ট্যাক্স ও রাজস্ব আদায়ের সমস্যা

বিটকয়েন এর মাধ্যমে আদান-প্রদান করলে তার রেকর্ড সরকারি খাতে জমা থাকে না। এর ফলে দেশের নাগরিকদের উপর থেকে ট্যাক্স বা কর রাজস্ব আদায় করতে সরকারের ক্ষেত্রে এক প্রকার অসম্ভব বিষয় হয়ে পরবে। আর বাংলাদেশ সরকারের অর্থের বড় একটা এমাউন্ট আসে এই ট্যাক্স বা কর থেকে। যদি এটি অফ হয়ে যায় তাহলে বাংলাদেশ বড় রকমের মুদ্রাস্ফীতিতে পড়তে পারে। এর ঝুকি এড়ানোর জন্য এই বিটকয়েনকে বাংলাদেশে অবৈধ করা হয়েছে।

শেষ কথা

দেখুন বিটকয়েনের অনেক সুবিধা থাকলেও এটা সব দেশে এখনই বৈধ করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে মধ্যম আয়ের দেশ ও নিম্ন আয়ের দেশের জন্য এটা বেশ ঝুকিপূর্ণ। আর কেন ঝুকিপূর্ণ তা উপরে তো বললামই। তবে ভবিষ্যতে অন্যান্য উচ্চ আয়ের দেশ যেমন ক্রিপ্টোকারেন্সি কে আইনি ভাবে একটি কাঠামো তৈরি করে সেটাকে বৈধ করেছে বাংলাদেশও যদি সেই উপযুক্ত নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করতে পারে, তাহলে বিটকয়েন এর পাশাপাশি অন্যান্য ডিজিটাল কারেন্সি ও বৈধতা পেতে পারে। তবে তা কবে সম্ভব তা বলা মুশকিল।

Shares:
Leave a Reply