বাহারি ঘুড়িতে সাজল পুরান ঢাকার আকাশ

বাহারি ঘুড়িতে সাজল পুরান ঢাকার আকাশ

রাজধানী

 জবি প্রতিনিধি

2025-01-15

পুরান ঢাকার কোতোয়ালি রোডের একটি বাসার ছাদে ঘুড়ি ওড়াচ্ছে কিশোর সুমন। সঙ্গে তার চার বন্ধু। সবার হাতে নাটাই। তাদের মনোযোগ আকাশে ওড়া ঘুড়ির দিকে। কে কার ঘুড়ির সুতা কাটবে, সেই প্রতিযোগিতা চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সুমনের ঘুড়ির সুতা অন্য ছাদের একজন কেটে ফেলে। প্রতিশোধ নিতে এবার তার সুতা কাটার প্রতিযোগিতায় নামে সুমনের বন্ধুরা। 

‘সাকরাইন উৎসব’ ঘিরে গতকাল মঙ্গলবার সারাদিন এমনই চিত্র ছিল পুরান ঢাকার বিভিন্ন ছাদে। প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ দিন এ উৎসব উদযাপন করা হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম ছিল না। তবে সাকরাইন উৎসবে আগের মতো জৌলুস নেই। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সাকরাইন উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছে। সঙ্গে এসেছে ভিন্নতা। ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় সাকরাইন উৎসবে সময় দেওয়া কমিয়ে দিয়েছে অনেকে। তবে এ উৎসবের উৎসাহ-আমেজ ধরে রাখার চেষ্টা করেন শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণীরা।

শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র বলেন, এবারের সাকরাইন তথা ঘুড়ি উৎসবের জন্য তিনি ও তাঁর বোন ১০টি ঘুড়ি কিনেছেন। বিকেল পর্যন্ত তিনি অন্য ছাদের তিনটি ঘুড়ির সুতা কেটেছেন। অন্যরাও তার ঘুড়ি কেটেছে কয়েকবার। সুভাষের সবচেয়ে পছন্দের ঘুড়ি পতেঙ্গা।

ছোট বোনের কথা জিজ্ঞেস করলে মুচকি হেসে তিনি বলেন, ও তো ছোট মানুষ। ছাদে নিয়ে না এলে কান্না করে। তাই নিয়ে আসছি। ওর জন্য আমার বেশি ঘুড়ি কাটা যাচ্ছে!
শুধু শাঁখারীবাজার নয়, পুরান ঢাকার সূত্রাপুর, কাঠেরপুল, লোহারপুল, বংশাল, নয়াবাজার, রায়সাহেব মোড়, শিংটোলা, ইসলামপুর, ধূপখোলা মাঠসহ বিভিন্ন ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা দেখা যায়। ছেলেমেয়ের ঘুড়ি ওড়ানোর আবদারে ধূপখোলা মাঠে আসেন জুলফিকার মাহমুদ। তিনি বলেন, ছোটবেলায় সাকরাইন উৎসবে আমিও ঘুড়ি ওড়াতাম। ঘুড়ি কাটাকাটিতে সবচেয়ে মজা। এখন কাজের চাপে ব্যস্ত হয়ে উঠেছি। আগে সাকরাইন উৎসবে শুধু ঘুড়িই ওড়াতাম আমরা। এখন এটা কমেছে।
ব্যবসায়ী রমকান্ত হালদার বলেন, এবার ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে কম। মানুষ এখন ঘুড়ির থেকে গান-বাজনায় বেশি মাতে। ঘুড়ি ওড়ানো উৎসব হয়ে গেছে গান-বাজনা আর ডিজে পার্টির। ছেলেমেয়েরা সাকরাইন উৎসবটাই জানে না। স্থানীয়রা ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব ধরে রেখেছে। এবার সব মিলিয়ে ২ হাজার ঘুড়ি বিক্রি হয়েছে।

রমকান্ত হালদারের কথার প্রমাণ মিলল সন্ধ্যা নামতেই। ছাদে ছাদে জ্বলে ওঠে নানান রঙের আলো। সাউন্ড বক্সে চলে গান। আতশবাজি ফোটাতে থাকে কেউ কেউ।
শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা বীরেন বোস বলেন, ব্যবসায়িক ব্যস্ততায় আমরা আগের মতো সময় দিতে পারি না। তবে ছেলেমেয়েদের চাপে বাসার ছাদে সাউন্ড সিস্টেম এনেছি। যদিও আমাদের সময় হাজার হাজার ঘুড়ি ওড়ানো হতো। এখনকার ছেলেরা ঘুড়ি ওড়ানোর চেয়ে আতশবাজি ফোটানো ও ডিজে গানে বেশি আগ্রহী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার ফজলুল হক বলেন, সাকরাইন ঘিরে মানুষের জনজীবনে যাতে সমস্যা সৃষ্টি না হয়, এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 
 

© Samakal
Shares:
Leave a Reply