বৈষম্য দূর করার নামে নতুন বৈষম্য চালু

বৈষম্য দূর করার নামে নতুন বৈষম্য চালু

বাংলাদেশ

 সমকাল প্রতিবেদক

2025-01-20

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় বৈষম্যবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, সরকার বৈষম্য দূর করার নামে আরও নতুন নতুন বৈষম্য চালু করছে। বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জাতি, বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষ, বিশেষত নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপ, দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা রোধ, কোনোটাতেই সরকার সফল হতে পারছে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আগেই বেহাত হয়ে গেছে। এখন চব্বিশের গণআন্দোলনের চেতনাও বেহাত হয়ে যাবে, যদি আমরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারি। 
গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ আয়োজিত সমাবেশে তারা এসব কথা বলেন। পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ দেওয়া ও আদিবাসীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশ থেকে ছয় দফা দাবি তুলে ধরা হয়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, সরকারের কর্মকাণ্ডে সংশয় হচ্ছে, তারা চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের চেতনা থেকে সরে আসছে কিনা! বাংলাদেশে বাস করতে হলে মুক্তিযুদ্ধকে মানতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত চার মূলনীতিকে বাদ দিয়ে সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। সরকারকে বলব, মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিন। 
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, সংবিধান সংশোধন, বাতিল বা পুনর্লিখনের অধিকার এই সরকার রাখে না। জনগণের নির্বাচিত সরকারই কেবল এটি করতে পারে। এর বাইরে কোনো সংস্কার করা হলে জনগণ মেনে নেবে না। সব জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সমাজ ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম করতে হবে। কাজেই জনগণকে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান ও দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে হবে। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেন, এর আগেও আগুন নিয়ে অনেকেই খেলাধুলা করেছে। আগুন নিয়ে খেলতে গিয়ে আগের ফ্যাসিবাদী সরকার মরতে মরতে পালিয়ে বেঁচেছে। কাজেই অন্তর্বর্তী সরকারকেও বলব, আগুন নিয়ে খেলার চেষ্টা করবেন না। কোনো ব্যক্তি, বিশেষ গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক মহলের প্রতি পক্ষপাতের মাধ্যমে বিপথে চলে গেলে নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন না। 
গণফোরামের সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, সরকার বৈষম্য দূর করার নামে আরও নতুন নতুন বৈষম্য চালু করছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জোবাইদা নাসরিন বলেন, পাঠ্যপুস্তক থেকে গ্রাফিতি বাদ দেওয়া এবং এর প্রতিবাদে সংগঠিত বিক্ষোভে হামলা চালানোর ঘটনায় বিগত সরকারের ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। সরকারকে অবশ্যই এই হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে হবে, সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে। 
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আগের সরকার উন্নয়নের গীত গেয়েছে। আর এখনকার সরকার সংস্কারের গীত গাইছে। কোনো গীত দিয়ে কাজ হবে না। সবার প্রতি বৈষম্য নিরসনের সত্যিকারের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। 
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ঐক্য ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট এএসএম সবুর, বাংলাদেশ জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করিম সিকদার, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবদুল মাবুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খায়েরুল ইসলাম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক ড. গজেন্দ্রনাথ মাহাতো, আদিবাসী ছাত্রনেতা অলিক মৃ প্রমুখ। 

© Samakal
Shares:
Leave a Reply