আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভালো আছেন।

আজকের এই অর্টিকেলে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো গবেষণার জন্য কিভাবে ভালো মানের রিসার্চ পেপার বিনামূল্যে পড়বেন।

 

চলুন প্রথমে ভালো মানের বলতে কি বুঝাচ্ছে সেটা দেখি।

কোনো জার্নালের রিসার্চ র‍্যাঙ্ক বা কোয়ালিটি বোঝাতে Quartile Ranking Concept ব্যবহার করা হয়।

যেখানে Q1, Q2, Q3, এবং Q4 হলো একাডেমিক জার্নালের র‍্যাঙ্কিং বা কোয়ার্টাইল সিস্টেম, যা জার্নালের গুণমান ও প্রভাব (impact) নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো সাধারণত Scopus, Web of Science, বা SCImago Journal Rank (SJR) এর মতো ডাটাবেসে জার্নালের Impact Factor বা CiteScore এর ভিত্তিতে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়।

কোয়ার্টাইল কী?

কোয়ার্টাইল হলো জার্নালগুলোকে তাদের নির্দিষ্ট বিষয়ের ক্ষেত্রে (যেমন, পদার্থবিজ্ঞান, সাহিত্য) প্রভাবের ভিত্তিতে চারটি সমান ভাগে ভাগ করা।

  • Q1 (Top 25%):
    জার্নালটি তার সাবজেক্ট ক্যাটেগরিতে শীর্ষ ২৫% এর মধ্যে পড়ে। মানে, এটা সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস ও হাই-ইমপ্যাক্ট জার্নালগুলোর মধ্যে একটা।
  • Q2 (25%-50%):
    মাঝারি থেকে উঁচু মানের জার্নাল। ভালো স্ট্যান্ডার্ড, কিন্তু Q1 থেকে একটু কম।
  • Q3 (50%-75%):
    মাঝারি মানের জার্নাল। গবেষণার জন্য ঠিক আছে, কিন্তু অনেক সময় একাডেমিক প্রমোশনের জন্য যথেষ্ট না হতে পারে।
  • Q4 (75%-100%):
    নিচের দিকের ২৫%। সাধারণত লোকাল বা কম পরিচিত জার্নাল। রিসার্চ পেপার পাবলিশের জন্য সহজ হতে পারে, কিন্তু মান অনেকটাই কম।

 

কীভাবে নির্ধারিত হয়?

  • Impact Factor/CiteScore: একটি জার্নালের গত কয়েক বছরে প্রকাশিত আর্টিকেল কতবার সাইটেশন পেয়েছে, তার গড় হিসাব করা হয়।
  • এই মেট্রিকের ভিত্তিতে জার্নালগুলোকে র‍্যাঙ্ক করা হয়। যেমন:
    • Q1 জার্নালগুলো সবচেয়ে বেশি সাইটেশন পায় এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী।
    • Q4 জার্নালগুলো কম সাইটেশন পায় এবং প্রভাব কম।

প্রতিটির বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

  1. Q1 (প্রথম কোয়ার্টাইল):
    • সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রভাবশালী জার্নাল।
    • উচ্চ সাইটেশন রেট এবং কঠিন পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া।
    • উদাহরণ: Nature, The Lancet।
    • গবেষকদের জন্য Q1-এ প্রকাশনা ক্যারিয়ারে বড় অর্জন।
  2. Q2 (দ্বিতীয় কোয়ার্টাইল):
    • উচ্চ মানের জার্নাল, তবে Q1-এর তুলনায় সামান্য কম প্রভাব।
    • এখনও গবেষণার দৃশ্যমানতা (visibility) ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়।
    • উদাহরণ: কিছু বিশেষায়িত ক্ষেত্রের নামকরা জার্নাল।
  3. Q3 (তৃতীয় কোয়ার্টাইল):
    • মাঝারি প্রভাবের জার্নাল, প্রায়ই নির্দিষ্ট বা নিশ (niche) বিষয়ে ফোকাস করে।
    • নতুন গবেষক বা বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য উপযোগী।
    • সাইটেশন তুলনামূলকভাবে কম।
  4. Q4 (চতুর্থ কোয়ার্টাইল):
    • সবচেয়ে কম প্রভাবের জার্নাল।
    • প্রায়ই নতুন জার্নাল বা কম সাইটেশন পাওয়া জার্নাল এখানে থাকে।
    • তবে নতুন গবেষকদের জন্য প্রকাশনার শুরু হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।

কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  • গবেষণার মান নির্ধারণ: Q1/Q2 জার্নালে প্রকাশনা গবেষণার উচ্চ মান ও গ্রহণযোগ্যতা নির্দেশ করে।
  • ক্যারিয়ার উন্নতি: বিশ্ববিদ্যালয়, ফান্ডিং এজেন্সি, বা চাকরির ক্ষেত্রে Q1/Q2 প্রকাশনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
  • দৃশ্যমানতা: উচ্চ কোয়ার্টাইল জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা বেশি পঠিত ও সাইটেড হয়।
  • নিশ গবেষণা: Q3/Q4 জার্নাল নির্দিষ্ট বা উদীয়মান ক্ষেত্রে গবেষণা ছড়িয়ে দিতে সহায়ক।

আশা করি ভালো বলতে কি বুজানো হয় সেটার হালকা ধারণা দিতে পেরেছি।

 

ভালো চিনলাম কিন্তু ভালো খুঁজে বের করা যে এখনো বাকি আছে।

রিসার্চ পেপার খুঁজে পাবার বেশ কিছু উপায় এবং ট্রিকস আমি আমার আগের পোস্ট “গবেষণার জন্য সহজে ভালো রিসার্চ পেপার খুঁজে পাওয়ার উপায়” এ দেখিয়েছিলাম। এবারেও সে রকমই হবে তবে আমরা শুধু একটি এক্সটেনশন ব্যবহার করবো।

এক্সটেনশনটির নাম Rapid Journal Quality Check.
লিঙ্ক: https://chromewebstore.google.com/detail/rapid-journal-quality-che/mfkbhgdamgfcifnhcdebfahkgnbkagmo

সুবিধা একটাই আমরা যে পেপার গুলো সার্চ করবো সেটার পাশে তার মান বুঝার জন্য অটোমেটিক তার Quartile Ranking চলে আসবে।

যেমনঃ আমি সার্চ করলাম “quantum dots” লিখে। দেখুন পাশে চলে এসেছে

পেপার সার্চিংয়ের জন্য আমার আগের পোস্টটি অবশ্যই পড়ে দেখবেন। আশা করি কাজে আসবে।

 

তাহলে এবার ভালো মানের জার্নাল পেপার কিভাবে ফ্রি তে পড়া যাবে সেটা দেখবো।

এটার জন্য অনেক সহজ এবং সব চেয়ে বেশি যে পদ্ধতি ব্যবহার হয় তা হচ্ছে “Sci-Hub”
নাম দেখে উল্টা-পাল্টা কিছু মাথায় নিয়ে আসিয়েন না, গবেষণা করছেন সেটাতেই থাকেন।

Sci-Hub হচ্ছে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেটি ২০১১ সালে কাজাখস্তানের রিসার্চার আলেকজান্দ্রা এলবাকিয়ান প্রতিষ্ঠা করেন, যাতে বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র (জার্নাল) ফ্রি-তে সবার জন্য উন্মুক্ত করা যায়। প্রচলিত পেইড একাডেমিক পাবলিশিং সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ এই প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়, কারণ উন্নয়নশীল দেশের গবেষকরা প্রায়ই গুরুত্বপূর্ণ রিসার্চে অ্যাক্সেস পান না। Sci-Hub লক্ষ লক্ষ পেপারের একটি সংগ্রহ তৈরি করেছে, যা পেইওয়াল ছাড়াই সহজে পড়া যায়—যদিও এটি কপিরাইট বিতর্কে জড়িয়ে আছে এবং অনেক দেশে এটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে এটা আছে বলেই আমার মতো গরিবেরা পড়াশুনা করতে পারছে।

দেখি কিভাবে ডাউনলোড করা যায়।

আমি এই পেপার টা পড়তে চাই। কিন্তু

আচ্ছা, ব্যাপার না। ওই যে উপরে “doi” নামে কিছু একটা লিখা আছে না। ঐটা কপি করে নিন:

চলে যাবেন Sci-Hub এ। গিয়ে দেখবেন একটা বক্স আছে, ঐখানে পেস্ট করে দিবেন।

তারপর পাশে আছে না open বাটন চেপে দিন।

চলে এসেছে পুরো পেপার। ডাউনলোড করে যেকোনো সময় সুবিধামতো পড়ে চালিয়ে যান গবেষণা। কে যেন বলেছিলো ১০০০ শব্দ পড়লে ১০০ শব্দ লিখতে পারব। তাই লিখার জন্য পড়ার বিকল্প নাই।

 

আজকের পোস্ট এই পর্যন্তই, পোস্টের কোন অংশে ভুলক্রটি হলে সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। লিখার সুবিধার্থে বেশ কিছু জায়গায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর সাহায্য নিয়েছি, কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে অনুগ্রহপূর্বক জানাবেন।

গবেষণা সংক্রান্ত রিসোর্স সংগ্রহ ও শেয়ার করার জন্য যুক্ত হতে পারেন Research Savvy টেলিগ্রাম চ্যানেলে। যেখানে মূলত, বিভিন্ন জায়গা থেকে গবেষণা সম্পর্কিত তথ্য ও রিসোর্স একত্রিত করে রাখা হয়।

এই পোস্ট সহ যেকোনো প্রয়োজনে আমার সাথে যোগাযোগ করতেঃ
Facebook My Telegram Channel

সবাই ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আর নিয়মিতো ট্রিকবিডির সাথেই থাকুন এই প্রত্যাশায় বিদায় নিচ্ছি ,ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ

Shares:
Leave a Reply