মরুর বুকে বার্সার রূপকথা

মরুর বুকে বার্সার রূপকথা

খেলা

নাজমুল হক নোবেল

2025-01-14

মরুর বুকে আরব্য রজনীর রূপকথার মতো ঘুরে দাঁড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করল বার্সা। জেদ্দায় খেলা শুরুর ৫ মিনিটে এমবাপ্পে দারুণ ১ গোল করে বসলে আনন্দের শিহরণ বয়ে গিয়েছিল রিয়াল শিবিরে।

লা লিগার বদলা সুপার কাপের ফাইনালে নেওয়ার পুলক অনুভব শুরু করেছিলেন তারা। কিছুক্ষণের মধ্যে ভোজবাজির মতো পাল্টে যায় সবকিছু। রূপকথার গল্পের মতো রিয়ালের জালে গোলের বন্যা বইয়ে দেন ইয়ামাল-রাফিনিয়ারা। ৫-২ গোলে রিয়ালকে বিধ্বস্ত করে ১৫তম বারের মতো স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে নিয়েছে বার্সা।

এল ক্ল্যাসিকোর ১২৩ বছরের ইতিহাসে দুই দল এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি মোট ২৫৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে গোলবন্যা অনেকবারই হয়েছে। কিন্তু কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনাল এল ক্ল্যাসিকোতে ৭ গোল এবারই প্রথম। রোববার রাতে জেদ্দার কিং আবদুল্লাহ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে রেকর্ডের পথে বার্সার পথচলা শুরু হয় লামিনে ইয়ামালের হাত ধরে। অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতে ৫ মিনিটে গোল করে বসেছিলেন এমবাপ্পে। ২২ মিনিটে রিয়ালের তিন ডিফেন্ডারের মাঝখান থেকে যাদুকরী এক শটে জালে বল জড়িয়ে দেন ইয়ামাল।

গোলমুখ খুলতেই বানের জলের মতো রিয়ালের রক্ষণে আছড়ে পড়তে শুরু করে বার্সা। প্রথমার্ধেই ৪-১ গোলে এগিয়ে যায় তারা। ৩৬ মিনিটে গাভিকে বক্সের মধ্যে ফেলে দেওয়ায় পেনাল্টি থেকে গোল করেন লেভানডস্কি। ৩ মিনিট পর রাফিনিয়ার দারুণ হেড আশ্রয় নেয় রিয়ালের জালে। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আলেজান্দ্রো বালদে ব্যবধান আরও বাড়ান। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রাফিনিয়া ব্যবধান ৫-১ করেন। এর পর ৫৬ মিনিটে বার্সার গোলরক্ষক শেজনি এগিয়ে এসে এমবাপ্পেকে ফেলে দিলে লাল কার্ড পান। ওই ফ্রি কিকে গোলও করেন রদ্রিগো। কিন্তু বাকি ৪৩ মিনিট ১০ জনের বার্সাকে পেয়েও কিছুই করতে পারেনি রিয়াল।

গত অক্টোবরে বার্সা বস হ্যান্সি ফ্লিক রিয়ালকে পর্যুদস্ত করেছিলেন হাইলাইন ডিফেন্স কৌশলে। এবার রিয়াল ধরা খেয়েছে রক্ষণ দুর্বলতায়। চোটের কারণে রক্ষণভাগের বেশ কয়েকজন মাঠের বাইরে থাকায় রুডিগারের সঙ্গে মিডফিল্ডার চুয়েমেনিকে সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলান রিয়াল বস কার্লো আনচেলত্তি। ‘মেকশিফট’ রক্ষণ দেখেই পজিশন ভিত্তিক ফুটবলে যান ফ্লিক। এবারও জার্মান এ কোচের কৌশলের সামনে দাঁড়াতে পারেনি রিয়াল। আর অসংখ্য ভুলও করে রিয়ালের রক্ষণ। দানি কারভাহাল না থাকায় রক্ষণের ডানপ্রান্তটা প্রায়ই উন্মুক্ত হয়ে পড়েছিল। এই সুযোগই কাজে লাগান রাফিনিয়া ও বালদে। 
রিয়ালের আক্রমণভাগের প্রধান ভরসা বেলিংহাম। ক্যাসাদো তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে রাখায় ভিনিসিয়ুসও বলের জোগান পাননি। রিয়ালের এসব ভুল আনচেলত্তির চোখে ভালো মতেই ধরা পড়েছে, ‘আমরা ওপরে উঠে চাপ দেওয়ার এবং নিচে নেমে রক্ষণ দেয়াল তৈরির চেষ্টা করেছিলাম… কিন্তু আমরা সেটা পারিনি। তারা সহজেই গোলগুলো করল। আমরা খুব বাজেভাবে ডিফেন্ড করেছি। প্রথমার্ধে আমরা ফুটবলই খেলিনি। লং বল খেলেছি, কিন্তু সেটা পরিকল্পিত ছিল না।’ 
হতাশ আনচেলত্তি আরও বলেন, ‘এটা বাজে একটি রাত। সমর্থকদের মতো আমরাও হতাশ। আমাদের এটা আড়াল করা উচিত হবে না। এটাই ফুটবল।’ আর দারুণ জয়ে গর্বিত বার্সা বস ফ্লিক, ‘সত্যিই আজ আমি অনেক গর্বিত। অবিশ্বাস্য একটি ম্যাচ হলো। সমর্থকদের জন্য ভীষণ ভালো লাগছে।’

© Samakal
Shares:
Leave a Reply