রমজান মাসে সারাদিন রোজা রাখার কারণে শরীরে পানির অভাব দেখা দিতে পারে, যা ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ত্বকের শুষ্কতা এবং হজমজনিত সমস্যার কারণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই রোজায় হাইড্রেটেড থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি সহজেই রমজানে সুস্থ ও সতেজ থাকতে পারবেন। আজকের আর্টিকেল এ আমরা এই বিষটি নিয়েই আলোচনা করবো যে রমজান মাসে কিভাবে হাইড্রেট থাকা যায়।
রমজানে হাইড্রেটেড থাকার উপায়
রমজানে হাইড্রেট থাকতে হলে আপনাকে আপনার খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হতে পারে। তবে এই পরিবর্তন এমন নয় যে সেটা আকাশ-পাতাল পার্থক্য হবে। এটা যাস্ট ছোট ছোট কিছু পরিবর্তন যা সবার পক্ষেই করা সম্ভব। নিচে আমরা এমনই ১০ টি উপায় দেখবো যা আপনাকে রমজানে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করবে।
১. ইফতার ও সেহরিতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন
রমজানে হাইড্রেটেড থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা। অনেকেই ইফতার বা সেহরির সময় কম পানি পান করেন, যা শরীরে পানির ঘাটতির কারণ হতে পারে। শরীরে প্রয়োজনের কম পরিমাণ পানি থাকলে আমরা ডিহাইড্রেটিং এ ভুগি।
তো এর জন্য ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত কমপক্ষে আমাদের ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে। তবে এক সাথেই এত পানি না খেয়ে মূলত ধীরে ধীরে খেতে হবে। অর্থাৎ আপনি চাইলে রুটিন করতে পারেন আপনি ৩০ মিনিট বা ১ ঘন্টা পরপর ১ গ্লাস করে পানি খাবেন ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত।
২. জলীয় সমৃদ্ধ খাবার খান
শুধু পানি পান করেই নয় বরং খাদ্যের মাধ্যমেও শরীরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা প্রয়োজন। কিছু খাবার আছে যা জলীয় উপাদানে সমৃদ্ধ এবং রোজায় হাইড্রেটেড থাকতে সাহায্য করে। তাই সারাদিনে রোজা রেখে শরীরে যতটুকু পানি কমে গেছে তার ঘাটতি পূরণ করতে ইফতারে জলীয় সমৃদ্ধ খাবার যেমন: শসা, তরমুজ, লেবু, কমলা, পেঁপে, টমেটো ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আবার জলীয় সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে দই হতে পারে আরো একটি ভালো অপশন। এতেও আপনাদের পানির ঘাটতি পূরণ হতে পারে। এছাড়া ইফতারের ফলের সালাদ ও পানি ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
৩. ইফতারে অতিরিক্ত লবণ ও মসলা পরিহার করুন
আমরা অনেকেই আছি যারা স্পাইসি খাবার গুলো পছন্দ করি। কিন্তু সারাদিন রোজা থেকে অর্থাৎ খালি পেটে থেকে ইফতারের সময় অতিরিক্ত স্পাইসি খাবার খেলে যেমন সেটি গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা তৈরি করে তেমনি সেহরির সময় এগুলো খেলে অর্থাৎ অতিরিক্ত লবণযুক্ত ও ঝাল-মসলা দেওয়া খাবার খেলে তা শরীরে পানির ঘাটতি সৃষ্টি করে এবং তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয়।
তাই রমজান মাসে ভাজাপোড়া ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম পরিমাণে খাওয়া উচিত। ইফতারে বেগুণি, আলুর চপ ইত্যাদির মতো ভাজাপোড়া খাবার যতদূর সম্ভব বাসায় তৈরি করা উচিত।
৪. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন
চা, কফি, সফট ড্রিংক ও এনার্জি ড্রিংকে ক্যাফেইন থাকে, যা শরীর থেকে পানি বের করে দেয় এবং পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে। তাই ইফতার বা সেহরিতে চা ও কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এর পরিবর্তে লেবুর সরবত, ডাবের পানি ফলের সরবত কিংবা দুধ খাওয়া যেতে পারে যা আমাদের সারাদিন হাইড্রেট রাখবে।
৫. ধীরে ধীরে খাওয়া ও পান করা
অনেকেই ইফতারে একসঙ্গে প্রচুর পানি পান করেন, যা হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই ছোট ছোট চুমুকে ধীরে ধীরে পানি পান করুন। ইফতার শুরু করুন এক গ্লাস পানি ও ২-৩টি খেজুর দিয়ে। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে অল্প অল্প করে পানি পান করুন।
৬. শরীরচর্চা কম করুন
যারা নিয়মিত শরীরচর্চা করেন তাদের রমজান মাসে রোজা রাখলে শরীরচর্চার পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ অতিরিক্ত ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করলে ঘাম বেশি হয়, যা শরীরে পানির অভাব তৈরি করে। তাই রোজার মধ্য ব্যায়াম এর পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া উচিত। তবে যাদের ব্যায়াম করতেই হবে এমন পরিস্থিতি তারা ইফতার বা তারাবি এর পর ব্যায়াম করুন। এর ফলে এই সময় শরীর থেকে পানি বের হলেও ততক্ষণাৎ আপনি পানি খেতে পারবেন।
৭. ডাবের পানি ও স্যালাইন পান করুন
ইফতারে কিংবা সেহরিতে ডাবের পানি কিংবা স্যালাইন খাওয়া উচিত। কেননা ডাবের পানিএ প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ থাকে, যা শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়াও ডাবের পানি পান করলে শরীর দীর্ঘ সময় হাইড্রেটেড থাকে। আবার SMC ওর স্যালাইন ও শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে, তাই এটাও খেতে পারেন ডাবের পানির পরিবর্তে।
৮. ঠান্ডা ও মিষ্টি পানীয় বেশি পান করবেন না
অনেকে ইফতারে বা সেহরিতে ঠান্ডা শরবত বা চিনিযুক্ত পানীয় বেশি পান করেন, যা সাময়িক স্বস্তি দিলেও পরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। এছাড়াও বেশি ঠান্ডা পানি পান করলে হজমে সমস্যা হয়। চিনিযুক্ত পানীয়র পরিবর্তে তাজা ফলের রস পান করতে পারেব। তাছাড়াও ঘরে তৈরি লেবু পানি বা কম চিনি দেওয়া শরবত হতে পারে সকলের জন্য বেস্ট অপশন।
৯. অবসর সময় বিশ্রাম করুণ
রোজার সময় যারা প্রতিনিয়ত কাজ করে থাকেন তাদের অবসর সময় টুকু বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে দুপুর ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত সকলের এমন যায়গা থাকা উচিত যেখানে রোদ এর পরিমাণ কম। কেননা অতিরিক্ত রোদ এ থাকলে শরীরের ঘামের মাধ্যমে পানি বের হয়ে যায় এবং শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়ে। যাদের পক্ষে এই সময়টুকু বিশ্রাম নেওয়া সম্ভব তারা বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করে নিবেন।
১০. ঘুমের সময় ঠিক রাখুন
অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের পানির ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানি পান করবেন। তাছাড়া শরীরকে রিফ্রেশ রাখতে চাইলে ঠান্ডা পানিতে হাত-মুখ ধুয়ে নিন।
শেষ কথা
রমজানে হাইড্রেটেড থাকা শুধুমাত্র সুস্থ থাকার জন্যই নয়, বরং সঠিকভাবে ইবাদত করার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত পানি পান, জলীয় খাবার গ্রহণ, লবণ ও ক্যাফেইনযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চললে আপনি সহজেই রোজায় সতেজ থাকতে পারবেন। তাই, এসব সহজ উপায় মেনে চলুন এবং এই পবিত্র মাসটি সুস্থভাবে উপভোগ করুন। রমজান মোবারক!