
রায়েরবাজারকে বর্জ্যমুক্ত করছে ‘ওরা ২১ জন’
কিছু আলো নীল
সাজিদা ইসলাম পারুল 2025-01-10
রাজধানীর রায়েরবাজারে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার চিত্রটি নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে পড়েছে। ফলে পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে, পাশাপাশি রোগের ঝুঁকি বাড়াসহ জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা ফেলা প্রয়োজন। এ কারণে আবর্জনা ফেলার যথেষ্টসংখ্যক পাত্র থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন রায়েরবাজারে বসবাসকারী ২১ জন উদ্যমী তরুণ, যারা ‘শিফটারস’ হিসেবে পরিচিত। তাদের সংগঠন ‘শিফট’-এর লক্ষ্য– রায়েরবাজারকে একটি পরিষ্কার, সবুজ এবং বর্জ্যমুক্ত কমিউনিটিতে পরিণত করা। এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রথমে বড় সমস্যাটি চিহ্নিত করা হয়– অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এরপর ছোট ছোট কর্মপরিকল্পনা বেছে নেওয়া হয়। ২১ উদ্যমী প্রাণের এ প্রচেষ্টা এগিয়ে যায় ‘রায়েরবাজার রিইমাজিন্ড: ফ্রম ওয়েস্ট টু ওয়েলনেস’ ক্যাম্পেইনে ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন শহর’-এর লক্ষ্যকে ধারণ করে। ক্যাম্পেইনের মূল উদ্দেশ্য– নির্ধারিত স্থানে বর্জ্য সঠিকভাবে ফেলা নিশ্চিত করা, কমিউনিটির মধ্যে প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো, বর্জ্য পৃথককরণ প্রচার করা, রিসাইক্লিং বা পুনঃব্যবহারকে উৎসাহিত করা; যাতে টেকসই ব্যবহার বাড়ানো যায়। এ লক্ষ্যগুলো নিয়ে কাজ করে ‘শিফটারস’ রায়েরবাজার এলাকায় পরিবর্তনের একটি পরিবেশ তৈরি করছে, যেখানে তারা তারুণ্যশক্তি এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টা দ্বারা একটি বাসযোগ্য, টেকসই পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করছে; যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পরিবেশ স্বাস্থ্য সচেতনতার মাধ্যমে একটি কমিউনিটিভিত্তিক পরিবর্তনের দৃশ্যমান উদাহরণ সৃষ্টি করছে।
এই তরুণদের একজন মো. আমির হোসেন আরিফ। কবি নজরুল সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৯ বছর ধরে পরিবারের সঙ্গে রায়েরবাজারে তাঁর বসবাস। আরিফ সমকালকে বলেন, ‘‘রায়েরবাজারের প্রতিটা অলিগলি চেনা। সব স্থানেই ময়লার ভাগাড়। এটি এ এলাকার মানুষের স্বভাব। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলেন। ফলে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ জীবন। অল্প বৃষ্টিতে পানি জমলেও হাঁটা যায় না; কারণ পানিতে বিভিন্ন ধরনের ময়লা ও প্লাস্টিক ভাসে। তাই অনেক আগে থেকেই পরিবেশ রক্ষায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। সেভ দ্য চিলড্রেনের ‘শিশুদের জন্য’ প্রকল্পের আওতাধীন শিফট ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সেই ইচ্ছাটাই পূরণ করেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘দুই মাসব্যাপী ‘রায়েরবাজার রিইমাজিন্ড: ফ্রম ওয়েস্ট টু ওয়েলনেস’ ক্যাম্পেইনে বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা (শিফটারস) বাড়ি বাড়ি গিয়ে উঠান বৈঠক, স্কুল সচেতনতা কার্যক্রম, থিয়েটার ফর ডেভেলপমেন্ট (টিএফডি) পরিবেশনা এবং সৃজনশীল দেয়ালচিত্রের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি করেছি। এসব কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য ছিল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্লাস্টিকের ব্যবহার হ্রাস এবং পুনর্ব্যবহারকে উৎসাহিত করা।’’
আরেকজন শিফটার ফারজানা বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় মোট ৫টি এলাকা– চাঁদ উদ্যান, মোহাম্মদপুরের বোটঘাট এবং রায়েরবাজারের তিনটি এলাকার ২০ জন চায়ের দোকানি ও ২০টি বাড়িতে ডাস্টবিন দেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ করা, কীভাবে কমিয়ে আনা যায়– সে বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম করা হয়েছে। প্রকল্প শুরুর আগে যেখানে গিয়ে দেখেছি যত্রতত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে, প্রকল্প শেষে সেখানে গিয়ে দেখলাম এখন আর ময়লার ভাগাড় নেই।’ v