লিনাক্স ওয়ার্ল্ডে ডিস্ট্রো ভার্শন অনেক বৈচিত্র্যময়। আপনি যাকেই জিজ্ঞেস করুন, সে-ই বলবে তার ওএস বেস্ট। যেমন আমি ফেডোরা ইউজ করি বলে আমি বলব ফেডোরাই বেস্ট।

যাই হোক।

কয়েক সপ্তাহ আগে রিলিজ হলো Fedora 42. আমি নিজে এতদিন ইউজের পর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই আপডেটের রিভিউ লিখতে বসলাম।

উইন্ডোজ যেমন অনেক বছর পর পর মেজর আপডেট আনে, এমন Windows 7, 8.1, 10, 11 ইত্যাদি; লিনাক্স কিন্তু আলাদা। নতুন কার্নেল প্রতি ৯-১০ সপ্তাহ পর পর রিলিজ হয়। উইন্ডোজও নাকি এখন ঐরকম কিছু করবে শুনলাম।

কিন্তু তাতে আমার কি। আমি তো চালাই লিনাক্স 😁

চলুন দেখি Fedora 42 রিলিজে কি সব পরিবর্তন থাকছে।

নাম্বার ৪২ একটা সাই-ফাই বইয়ের রেফারেন্স

আমেরিকান লেখক ডগলাস অ্যাডামসের বিখ্যাত বই The Hitchhiker’s Guide to the Galaxy. এই বইয়ে Deep Thought নামে একটা সুপারকম্পিউটারকে জিজ্ঞেস করা হয় এই মহাবিশ্ব, জীবন ও সবকিছুর অর্থ বের করতে। ৭৫ লাখ বছর হিসাব নিকাশের পর সে এই উত্তর নিয়ে হাজির হয়ঃ ৪২

যদিও এই উত্তরে সবাই হতাশ হয়, আর লেখক নিজেও বলেন যে উনি বেখেয়ালে এই সংখ্যাটা বাছাই করেছেন। কিন্তু তখন থেকে এই সংখ্যাটা বিভিন্ন রেফারেন্সে ইউজ হয়ে আসছে।

ফেডোরাও এবারের রিলিজ নাম্বার দিয়ে ঐ উত্তরে ইঙ্গিত করেছে।

Web UI Installer in Fedora 42

web ui based installer interface in fedora 42

Anaconda টিম ওয়েব ইন্টারফেসের জন্য নতুন একটা ইনস্টলার এনেছে।

এটার সবচেয়ে বড় সুবিধা হল গাইডেড পার্টিশনিং।

এই ইন্টারফেস দিয়ে আরো ভালোভাবে অটোমেটিক পার্টিশনিং করে ওএস ইনস্টল করা যাবে।

আবার ইনস্টলের সময় আরো বেশি অপশন কাস্টমাইজ করা যাবে।

IBus speech-to-text

আই-বাসে এখন অফলাইন ভয়েস রেকগনিশন সাপোর্ট করে।

অন্য ভাষার ইউজ করতে চাইলেও ডাউনলোড করে অফলাইনে ইউজ করা যাবে।

আর যেহেতু অফলাইন, তাই ইউজার প্রাইভেসি আরেকটু বজায় থাকে।

Kernel 6.14

কার্নেল হল সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সাথে সমন্বয় সাধনের জন্য বিশেষ একটা লেয়ার।

6.14 কার্নেল ভার্শনে মেজর কিছু ইমপ্রুভমেন্ট আনা হয়েছে।

বিশেষ করে গেমিংয়ের জন্য এই আপডেট অনেক গুরুত্বপূর্ন ছিল। যেমনঃ

  • উইন্ডোজ ইমুলেট করার জন্য NTSYNC ড্রাইভারে চেঞ্জ আনা হয়েছে। এতে উইন্ডোজের গেমসগুলো আরো ভালোভাবে লিনাক্সে চলবে।
  • এএমডির লেটেস্ট RDNA 4 জিপিউর সাপোর্ট অ্যাড করা হয়েছে। এএমডি জিপিউগুলো বেশ ভ্যালু ফর মানি প্রোভাইড করে তাই এটাও গেমারদের জন্য সুখবর।
  • Snapdragon 8 Elite প্রসেসরও এই কার্নেলে সাপোর্ট করবে। তাই ভবিষ্যতে রিলিজ হওয়া ডিভাইগুলোর পারফরমেন্স আরো ফাস্ট হবে।

DNF5

ডিএনএফ দারুন একটা প্যাকেজ ম্যানেজার। আমার কাছে ভালোই লেগেছে।

এই ভার্শনে এক্সপায়ার্ড রেপোজিটরিগুলো প্যাকেজ ম্যানেজার থেকে অটোমেটিক মুছে ফেলার সিস্টেম আনা হয়েছে।

তাই ইউজারকে ধরে ধরে এগুলো রিমুভ করতে হবে না।

সিস্টেম আপডেটের সময় এগুলো নিজে থেকেই ক্লিন হয়ে যাবে।

Gnome 48

জিনোম লিনাক্সের একটা গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস। জিনোমের মত আরো ইন্টারফেস আছে যেমনঃ

জিনোমই আমার কাছে ভালোই লেগেছে। বেশ ছিমছাম, পরিপাটি একটা পরিবেশ।

এই ভার্শনে সুন্দর কিছু আপডেট এনেছে জিনোম। নিচে উল্লেখযোগ্য আপডেটগুলো আলোচনা করছি।

Notification Stacking

অ্যাড্রয়েডে একই অ্যাপ থেকে একাধিক নোটফিকেশন আসলে ওগুলো একটা নোটিফিকেশনে মধ্যে গ্রুপ হয়ে যায়।

এতে একটু জায়গা বাঁচে আর অন্য অ্যাপসের অনেক নোটিফিকেশনও একসাথে দেখা যায়।

জিনোমও এখন ঐ ডিজাইন করেছে।

Dynamic Triple Buffering

প্রায় ৫ বছর ডেভেলপমেন্টে থাকার পর অবশেষে এই ট্রিপল বাফারিং প্রোডাকশনে আসলো।

ছোট করে বলি, ডিসপ্লেতে কিছু দেখানোর সময় জিপিউ পরবর্তি ফ্রেম ‘বাফার’, বা আগে থেকে লোড করে রাখে।

ফলে ডিসপ্লেতে ল্যাগ, বা ফ্রেমড্রপ হয় না।

ট্রিপল বাফারিংয়ে আরো একটা অতিরিক্ত ফ্রেম বাফারে থাকবে, মানে মোট ৩টা ফ্রেম।

তাই সিস্টেম আরো স্মুথ ফিল হবে।

ব্যক্তিগতভাবে আমার সিস্টেম উইন্ডোজ থেকে লিনাক্সে আসার পর থেকেই অনেক স্মুথ লাগছে।

সো এখানে তেমন পরিবর্তন চোখে লাগেনি।

Image Viewer

image editing from image viewer in gnome 48

ফাইল ম্যানেজারে ছবি ভিউ করার অ্যাপ থেকে বেসিক কিছু ফরম্যাটিং, যেমনঃ

…এগুলো সেরে ফেলা যাবে। আলাদা কোনো এডিটিং প্রোগ্রামের দরকার হবে না।

HDR Support

কিছুদিন আগেও আমি ইউটিউবের একটা ভিডিও VLC তে দেখার সময় ভিডিওটার কালার কেমন যেনো পানিতে ধোয়া ধোয়া লাগলো। অরিজিনাল ভিডিওর কালার কোয়ালিটির সাথে মিলে না।

পরে জানলাম যে ওটা HDR ভিডিও ছিলো আর লিনাক্সে HDR সাপোর্ট নেই। কিন্তু ইউটিউবে SDR (Standard dynamic range) দিয়ে দেখায়।

এটা লিনাক্সের জন্য গুরুত্বপূর্ন কারন উইন্ডোজ থেকে ইউজার আসলে কিন্তু গেমিং, মুভি দেখা ইত্যাদির জন্য তারা HDR সাপোর্ট খুঁজবে।

Digital Wellbeing

ফোনের মত এবার লিনাক্সেও চলে আসলো স্ক্রিনটাইম মনিটর করার সিস্টেম। এটা দিয়ে আপনি কতক্ষন পিসি ইউজ করেছেন তা দেখতে পারবেন। চাইলে টাইম লিমিট সেট করে দিতে পারবেন।

প্রতি ৩০ মিনিট পরপর একটু হাটাচলা করার জন্য রিমাইন্ডারও সেট করে দিতে পারবেন। এই ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।

যদিও এসবের জন্য আলাদা অ্যাপস আছে, কিন্তু সিস্টেমের মধ্যেই দেয়া থাকলে বেটার।

Hearing (overamplification)

মাঝে মাঝে কিছু মাদারবোর্ডের অডিও ড্রাইভারের লিনাক্সে ফুল সাপোর্ট থাকে না বিধায় বেশি সাউন্ড পাওয়া যায় না।

এই সমস্যা সমাধান করতে Accessibility > Hearing > Overamplification অপশন যোগ করা হয়েছে যাতে সাউন্ড ঠিকমতো শোনা যায়।

ব্যক্তিগতভাবে আমার অডিও নিয়ে কোনো সমস্যা হয় নি তাই এটা নিয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে আমি বুঝতে পারছি অনেকেই এই অপশন থেকে বেনেফিট পাবে।

আরো অনেক পয়েন্ট আমি লিখিনি যেমনঃ

  • Accessibility মেনু অন অফ করার অপশন দেয়া হয়েছে
  • Gnome JavaScript অপটিমাইজ করা হয়েছে
  • কার্নেলে Rust language support আরো ইমপ্রুভ করা হয়েছে

আমার কাছে যেগুলো দরকারী আপডেট মনে হল, কেবল সেগুলোই কভার করলাম।

আশা করি এই বছরই হবে লিনাক্সের বছর : D

আপনিও কি লিনাক্স ইউজ করেন? না করলে এই পোস্টে কি করছেন? 🤨

আপনার কাছে কোন ডিস্ট্রো ভালো লাগে ও কেন? বলে ফেলুন কমেন্ট সেকশনে; শুরু করে দেই আরেক ডিস্ট্রো ওয়ার : p

আর হ্যাঁ মনে রাখবেনঃ ফেডোরাই কিন্তু বেস্ট! 😁

Shares:
Leave a Reply