অ্যান্ড্রয়েডের জগতে একটু আনাগোনা থাকলে কাস্টম রম জিনিসটার নাম অবশ্যই শুনে থাকবেন।

ম্যানুফ্যাকচাররা ডিভাইস যে সিস্টেম, বা রম ইনস্টল করে বিক্রয় করে, সেটা স্টক রম নামে পরিচিত। কিন্তু সেগুলোতে অনেক অ্যাডভান্সড ফিচার লক করা থাকে।

তাই মানুষ রুট করে, কেউ কেউ আবার কাস্টম রম ইনস্টল করে পুরো ফোনের চেহারাই পাল্টে ফেলে (সফটওয়্যার লেভেলে)। কারন এগুলো শুধু এক্সট্রা ফিচারই থাকে না, এটি ৫ বছরের পুরাতন ফোনকেও আবার প্রাণবন্ত করে তুলতে পারে।

চলুন আজকে দেখে আসি রুটিং ও কাস্টম রমের ৭টি সুবিধা যার জন্য আপনি রুটের দিকে ঝুঁকতে পারেন।

#1 কোনো bloatware নেই

কাস্টম রমগুলো বানানো হয় ডিভাইসকে লাইটওয়েট আর ভালো পারফরমেন্স দিতে। কিন্তু কোম্পানিরা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও ট্র্যাকিং করতে ফোনে অনেক অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস দিয়ে রাখে, যেগুলো আবার আনইনস্টলও করা যায় না।

কাস্টম রমে এসব bloatware সরিয়ে দেয়া হয়। তাই নতুন সিস্টেমে কেবল অল্প কিছু, দরকারী অ্যাপস থাকে। এতে স্টোরেজে বেশি জায়গা খালি পাওয়া যায়। দুই দিকেই লাভ!

তবে নন-রুটেড ইউজারদের জন্যও সুখবর আছে। আজকাল ADB দিয়ে রুট ছাড়াও সিস্টেম অ্যাপস রিমুভ করা যায়!

#2 পারফরমেন্স বৃদ্ধি পায়

স্টক রমের ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক আজাইরা প্রসেস চলে। তাই র‍্যাম কম থাকলে ফোন কিছুদিন পরে স্লো হয়ে যায়। কিন্তু কাস্টম রমে অনেক অপটিমাইজেশন প্রয়োগ করা হয়। যেমন

  • custom karnel,
  • ram management,
  • micro G

…ইত্যাদি ব্যাপারগুলো সিস্টেমের পারফরমেন্স অনেক স্মুথ করে তোলে।

#3 চার্জিং লেভেল লিমিট করা যায়

আমার স্যামসাং ফোনে ব্যাটারি লেভেল ৮০% হয়ে গেলে চার্জ স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফ করে দেয়া যায়। অধিকাংশ ফ্ল্যাগশিপ ফোনেই এই ফিচার আছে। তাই বলে লো রেঞ্জের ডিভাইস ইউজাররা বসে থাকবেন? অবশ্যই না।

ACCA ম্যাজিস্ক মডিউল দিয়ে আপনি যেকোনো রুটেড ফোনের চার্জিং লিমিট কন্ট্রোল করতে পারবেন। এমনকি সর্বোচ্চ কত ভোল্টেজে চার্জ হবে তাও সেট করে দেয়া যায়।

ব্যাটারি সুরক্ষিত রাখতে ফোন গরম হয়ে গেলে চার্জ অটো অফ হয়ে যাবে, ঠান্ডা হলে আবার চার্জিং চালু হবে। এত সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রন অনেক দামী ফোনেও থাকে না।

#4 ডিভাইসের আইডি চেঞ্জ করার সুবিধা

সব ফোনেরই কিছু ইউনিক নাম্বার থাকে, যেমনঃ

  • IMEI,
  • Mac address,
  • Sim ID,
  • HW serial etc.

এগুলো দিয়ে আপনার ব্যাক্তিগত প্রোফাইল শনাক্ত করতে পারে বিভিন্ন অ্যাপস ও সার্ভিস। আপনি যদি এসব ইউনিক নাম্বার লুকাতে চান তাহলে রুট করে এগুলো চেঞ্জ করতে পারবেন।

ডিভাইস আইডি স্পুফিং করে প্রাইভেসি কিছুটা হলেও ইমপ্রুভ করা যায়।

#5 আইওএসের মতো মিডিয়া সিলেকশন

অ্যাপলের আইফোনগুলোতে একটা চমৎকার ফিচার আছে। কোনো অ্যাপ মিডিয়া সিলেক্ট করার সময় আপনি যে ছবি/ভিডিও বাছাই করে দিবেন, কেবল ঐ ছবি/ভিডিওতেই সে অ্যাক্সেস পাবে। পুরো ফোল্ডারের কন্ট্রোল পাবে না।

নিরাপত্তার প্রেক্ষাপটে এটা বেশ প্রশংসনীয় একটা পদক্ষেপ।

storage isolation magisk module দিয়ে আপনিও এই সুবিধা পেতে পারেন অ্যাড্রয়েড ফোনেও।

নোটঃ কিছু পুরাতন অ্যাপস এই মডিউলের সাথে কাজ নাও করতে পারে।

#6 Google Photos থেকে আনলিমিটেড স্টোরেজ

পিক্সেল ফোনের একটা অসাধারন সুবিধা হল, গুগল ফটোস অ্যাপে যত খুশি ছবি/ভিডিও আপলোড করা যায়। নরমাল অ্যাড্রয়েড ফোনে এমনটা নেই।

এখানেই আসে আমাদের ট্রিকস! রুট করলে ম্যাজিস্ক মডিউল দিয়ে আপনার হাতের ফোনেও পেয়ে যাবেন পিক্সেলের মত আনলিমিটেড স্টোরেজ ফর গুগল ফটোস!

কিছু কাস্টম রমেও দেখলাম এই সুবিধা প্রি-ইনস্টল করা থাকে।

#7 কল রেকর্ডিং করা যায়

একসময় সব মোবাইলে সহজেই কল রেকর্ড করা গেলেও এখন সহজে যায় না। গুগল ঐ ফাংশন অফ করে দিয়েছে আইনি জটিলতায়।

এখনও গুগল ডায়ালারে রেকর্ড করা যায় বটে, কিন্তু শুরুতেই রোবট ভয়েস বলে দেয় এই কল রেকর্ড হচ্ছে। এতে অপর পক্ষ অস্বস্তি বোধ করে।

যাই হোক।

অনেক কাস্টম রম, যেমন Resurrection Remix, এই জটিলতা দূর করে নেটিভ কল রেকর্ডিং সুবিধা নিয়ে আসছে। আবার রুট করেও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়!

এই ছিলো আজকের পোস্ট। দেখলেন তো রুট আর কাস্টম রম দিয়ে এখনো কত সুবিধা পাওয়া যায় যা স্টক অ্যান্ড্রয়েড ইউজাররা কেবল স্বপ্নেই ভাবতে পারে?

তবে ডিভাইস রুট করলে লাভের পাশাপাশি কিছু রিস্কও থাকে, যেমনঃ

  • ওয়ারেন্টি চলে যায়,
  • অফিশিয়াল আপডেট অফ হয়ে যায়,
  • অজানা অ্যাপ রুট অ্যাক্সেস নিয়ে ডাটা চুরি করতে পারে

তাই ভালো খারাপ সবই মাথায় রাখতে হবে।। এসব নিয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই পোস্ট থেকেঃ

ফোন রুট কি? কিভাবে রুট করবেন? রুট করার আগে করণীয় এবং রুটের সুবিধা-অসুবিধা

দেখা হবে অন্য কোনো দিন। ততদিন পর্যন্ত ট্রিকবিডির সাথেই থাকুন।

খোদা হাফেজ।

Shares:
Leave a Reply