শবে কদরের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও দোয়া


রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতকে ইসলামে “লাইলাতুল কদর” বা “শবে কদর” নামে অভিহিত করা হয়। কোরআনে উল্লেখ আছে, “নিশ্চয়ই আমরা কোরআন নাজিল করেছি মহিমান্বিত রজনীতে।” এই রাতের মাহাত্ম্য অপরিসীম। মুসলমানদের জন্য এই রাতে অতিরিক্ত ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে হাজার মাসের ইবাদতের সমান সওয়াব লাভের আশায় থাকেন।

নামাজের মূল নিয়ম

শবে কদরের নামাজ কোনো ফরজ বা সুন্নতের অংশ নয়; এটি সম্পূর্ণই নফল নামাজ। আপনি দুই বা চার রাকাত করে ইচ্ছামত নামাজ পড়তে পারেন। প্রতিটি রাকাতে প্রথমে সূরা ফাতিহা পড়া বাধ্যতামূলক, এরপর অতিরিক্ত সূরা যেমন সূরা ইখলাস, সূরা কদর, আয়াতুল কুরসি বা সূরা তাকাছুর পড়া উত্তম। অনেক আলেম ও উপাসক কমপক্ষে ১২ রাকাত পড়ার পরামর্শ দেন।

অতিরিক্ত ঐতিহ্যগত নিয়ম (ঐচ্ছিক)

কিছু প্রচলিত ঐতিহ্য অনুসারে বলা হয় যে, প্রতিটি দুই বা চার রাকাতে সূরা ফাতিহার পরে নির্দিষ্ট করে পাঠ করতে হয়:

  • প্রতি রাকাতে একবার সূরা কদর (আরবী: إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ), যার উচ্চারণ বাংলায় – ইন্না আনজালনাহু ফি লায়লাতিল কদর
  • এবং সূরা এখলাস ২৭ বার পাঠ করা (আরবী: قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ, উচ্চারণ: কুল হুয়াল্লাহু আহাদ)

উল্লেখ্য, এই নিয়মটি কোনো সুস্পষ্ট হাদিস বা প্রামাণ্য উৎসে প্রতিষ্ঠিত না-ও হতে পারে; এটি কিছু আঞ্চলিক অভ্যাস হিসেবে প্রচলিত। আপনার ইবাদতের স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে ইচ্ছামত এ নিয়ম অনুসরণ বা এড়িয়ে যাওয়া যেতে পারে।


নামাজের নিয়ত

নামাজের নিয়ত হলো আপনার অন্তরের সংকল্প, যার মাধ্যমে আপনি শুধুমাত্র আল্লাহর নিকট নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতে লিপ্ত হচ্ছেন। উদাহরণ স্বরূপ:

আরবীতে:
نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلَاةِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ نَافِلَةً، مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ، اللَّهُ أَكْبَرُ

উচ্চারণ (বাংলায়):
“নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়্যা লিল্লাহি তা‘আলা রাক‘আতাই সালাতিল লায়লাতিল কদর নাফিলাতং, মুতাওয়াজ্জিহা ইলা জিহাতিল কা‘বা-শ শরিফাতিল্লাহু আকবার”

শবে কদরের দোয়া

নামাজের শেষে বা ইবাদতের সময় নিম্নলিখিত দোয়া বিশেষভাবে পাঠ করা যেতে পারে:

আরবীতে:
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

উচ্চারণ (বাংলায়):
“আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফা’ফু আন্নি”

অর্থ: “হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে পছন্দ করেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।” (তিরমিজি, মিশকাত)

এছাড়াও নামাজ শেষে আপনি আন্তরিকভাবে আপনার মনের ভাব প্রকাশ করে অন্যান্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতে পারেন, যেমন: “رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ” (উচ্চারণ: “রাব্বিগফির ওয়ারহাম ওয়া আংতা খাইরুর রাহিমিন”)।

কখন পড়তে হবে

শবে কদর সাধারণত রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে পড়া হয়। অনেকক্ষেত্রে ২৭ রমজান (বা ২৬ রমজানের দিবাগত রাত)কে বিশেষভাবে কদরের রাত হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও, আপনি ভোর উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত বা পুরো রাত জুড়ে ইবাদত করতে পারেন।

কিভাবে পড়তে হবে

১. পরিষ্কারতা ও প্রস্তুতি: নামাজ পড়ার আগে শরীর, কাপড় ও নামাজের স্থান অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে।
২. নিয়ত ও তহীয়ত: নামাজের পূর্বে সঠিক নিয়ত করুন – উপরে বর্ণিত আরবী নিয়ত বা বাংলায় নিয়ত করতে পারেন।
৩. রাকাত বিন্যাস: প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ুন এবং অতিরিক্ত পাঠ হিসেবে ঐতিহ্যগত নিয়ম অনুসারে, ফাতিহার পরে একবার সূরা কদর ও ২৭ বার সূরা এখলাস পাঠ করুন (যদি ইচ্ছা থাকে)।
৪. দোয়া ও জিকির: নামাজ শেষে আন্তরিক দোয়া, ইস্তিগফার ও জিকির করুন।

উপসংহার

শবে কদরের নামাজ পড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো আন্তরিক ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট নৈকট্য লাভ করা। মূলতঃ সূরা ফাতিহা পড়া বাধ্যতামূলক হলেও অতিরিক্ত সূরা ও দোয়ার নির্দিষ্ট সংখ্যা বা বিন্যাস প্রামাণ্য উৎসে প্রতিষ্ঠিত না-ও থাকতে পারে। কিছু উপাসক ও আঞ্চলিক প্রচলনে “ফাতিহা’র পরে সূরা কদর একবার, সূরা এখলাস ২৭ বার” পাঠের নিয়ম শোনা যায় – যা ঐতিহ্যগত অভ্যাস হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।

আল্লাহ আমাদের সকলকে এই পবিত্র রাতে সঠিক ইবাদত ও আন্তরিক দোয়ার তাওফিক প্রদান করুন। আমিন।

Shares:
Leave a Reply