
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে আয়কর হিসাব
সমৃদ্ধি
সমকাল প্রতিবেদক 2025-01-10
বিনিয়োগের মাধ্যমে সঞ্চয়ের অর্থকে কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়ার জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। অন্য প্রায় সব আয়ের মতো শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে আয়ও করযোগ্য। ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে কোনো আয় হলে তা মোট আয়ে যুক্ত করতে হয়। তবে আয়বর্ষে শেয়ারবাজারে নতুন করে বিনিয়োগ থাকলে রেয়াত পাওয়ারও সুযোগ আছে।
গত আয়বর্ষের আয়ের ওপর এরই মধ্যে অনেকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন। তবে নানা কারণে যারা এখনও রিটার্ন দাখিল করতে পারেননি, তাদের আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমার সুযোগ রয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে আয়ের ওপর কীভাবে কর হিসাব করতে হয়, তা জেনে রাখা ভালো। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে সাধারণত দুই ধরনের আয় হয়। লভ্যাংশ আয় ও মূলধনি মুনাফা বা আয়।
লভ্যাংশ আয়: শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ কোনো কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ডে হয়। বছর শেষে কোম্পানি বা মিউচুয়াল ফান্ড পুরো বছরের নিট মুনাফা থেকে শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারদের নির্দিষ্ট হারে মুনাফা প্রদান করে। করপোরেট বন্ডে বিনিয়োগ থাকলে তা থেকেও ত্রৈমাসিক বা ষাণ্মাসিক অথবা বার্ষিক হিসাবে সুদ পাওয়া যায়। এগুলো করযোগ্য আয়। রিটার্নে আর্থিক পরিসম্পদ থেকে আয় হিসেবে যোগ করতে হয়। লভ্যাংশ আয় বিতরণের সময়ই উৎসে ১০ শতাংশ কর কেটে রাখা হয়, যা সমন্বয়ের সুযোগ আছে।
মূলধনি মুনাফা: করদাতা বিনিয়োগকৃত কোনো শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ড বা বন্ডের পুরোটা বা আংশিক ক্রয়মূল্যের তুলনায় বেশি মূল্যে বিক্রি করে মুনাফা পান, সেটি মূলধনি মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইন। এই আয়ও করযোগ্য। তবে আয়কর আইনে শেয়ারবাজার থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত মূলধনি মুনাফা কর অব্যাহতি দেওয়া আছে।
কর রেয়াত গণনা : বাংলাদেশে আয়কর আইনের অধীনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা কর রেয়াতের সুবিধা পেতে পারেন। কর রেয়াতের যোগ্য বিনিয়োগের সীমা নির্ধারণ করা হয় সংশ্লিষ্ট আয়বর্ষের মোট করযোগ্য আয়ের ৩ শতাংশ অথবা সর্বশেষ আয়বর্ষে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ অঙ্কের ১৫ শতাংশ অথবা শেয়ারবাজারে মোট বিনিয়োগ স্থিতির মধ্যে যেটি কম সেটির ভিত্তিতে।
কর রেয়াতসহ কর হিসাবের উদাহরণ : ধরা যাক, একজন করদাতার গত আয়বর্ষে বেতনসহ গ্রস আয় ৯ লাখ টাকা। এর বাইরে শেয়ারবাজার থেকে লভ্যাংশ আয় ১ লাখ টাকা, যার ওপর উৎসে ১০ শতাংশ হারে কর্তন হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া শেয়ারবাজারে গত বছরের ১ লাখ টাকার নতুন বিনিয়োগসহ মোট ১০ লাখ টাকার বিনিয়োগ। এর থেকে মূলধনি মুনাফা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তাহলে করদাতার মোট আয় হবে ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এখন কর কত হবে, তা হিসাব করা যাক। প্রথমত, ব্যক্তির গ্রস আয়ের এক-তৃতীয়াংশ বা সাড়ে ৪ লাখ টাকা, এর মধ্যে যেটি কম, তা বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় হিসাব করতে হবে। ব্যক্তির গ্রস আয় ৯ লাখ টাকা হলে এর এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৩ লাখ টাকা বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে। এ ক্ষেত্রে করযোগ্য আয় হবে ৬ লাখ টাকা।
বর্তমান করবর্ষে স্বাভাবিক ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা। মোট আয় থেকে এই সাড়ে ৩ লাখ টাকাও বাদ যাবে। তাহলে শেয়ারবাজার ভিন্ন গ্রস আয়ের আড়াই লাখ টাকার ওপর করদাতাকে কর দিতে হবে।
এখন করদাতার আয়কর হিসাবের ক্ষেত্রে দু’বার কর হিসাব করতে হবে। একবার শেয়ারবাজার থেকে লভ্যাংশ আয়সহ এবং শুধু গ্রস আয় থেকে খরচ বাদ দিয়ে।
অর্থাৎ লভ্যাংশ আয় বাদে করযোগ্য আয় আড়াই লাখ টাকা এবং লভ্যাংশ আয় ১ লাখ টাকাসহ মোট সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কর হিসাব করতে হবে।
তার আগে কর রেয়াত কত টাকা পাবে, তা হিসাব করা যাক। এখন মোট করযোগ্য আয় ৬ লাখের ৩ শতাংশ বা ১৮ হাজার টাকা। এখন গত আয়বর্ষে মোট বিনিয়োগ ১ লাখ টাকার ১৫ শতাংশ হলো ১৫ হাজার টাকা এবং মোট বিনিয়োগ ১০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৫ হাজার টাকা সবচেয়ে কম। ফলে এই পরিমাণ টাকা কর রেয়াত নেওয়া যাবে।
লভ্যাংশ আয় বাদে কর হিসাব : এই ব্যক্তির গ্রস আয়ের হিসাবে করযোগ্য আয় আড়াই লাখ টাকা। এর প্রথম ১ লাখে ৫ শতাংশ হারে কর ৫ হাজার টাকা। পরবর্তী দেড় লাখে ১০ শতাংশ হারে কর ১৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ মোট প্রদেয় কর ২০ হাজার টাকা। এর থেকে কর রেয়াত ১৫ হাজার টাকা বাদ দিলে কর দিতে হবে ৫ হাজার টাকা।
লভ্যাংশ আয় ধরে কর হিসাব : এই ব্যক্তির গ্রস আয়ের হিসাবে করযোগ্য আয় আড়াই লাখ টাকা। সঙ্গে যোগ হবে লভ্যাংশ আয় ১ লাখ টাকা। অর্থাৎ করযোগ্য আয় সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
এখন প্রথম ১ লাখে ৫ শতাংশ হারে কর ৫ হাজার টাকা। পরের আড়াই লাখে ১০ শতাংশ হারে কর ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রদেয় কর হবে ৩০ হাজার টাকা। এর থেকে কর রেয়াত ১৫ হাজার টাকা বাদ দিলে ১৫ হাজার টাকা। যেহেতু লভ্যাংশ আয় ১ লাখের ওপর, উৎসে ১০ হাজার টাকা কর কর্তন করা আছে, ফলে তা বাদ যাবে। নিট প্রদেয় কর হবে ৫ হাজার টাকা।
এখন উভয় হিসাব সমান হলে তো কথাই নেই, যেটি কর হবে, সে পরিমাণ কর দিতে হবে। তবে এর মধ্যে কোনোটি বেশি হলে সেটিই হবে করদাতার চূড়ান্ত কর দায়।