সংগীত বলয়ে বেড়ে উঠেছি, তারপরও কখনও শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি

সংগীত বলয়ে বেড়ে উঠেছি, তারপরও কখনও শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি

বিনোদন

সমকাল ডেস্ক

2025-01-13

নকীব খান। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ও সুরকার। গানে গানে তিনি পেরিয়ে এসেছেন পাঁচ দশকের দীর্ঘ পথ। এ উপলক্ষে ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর ইয়ামাহা ফ্লাগশিপ সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তাঁর একক সংগীত সন্ধ্যা ‘সুরে সুরে পঞ্চাশে’। এ আয়োজন ও অন্যান্য প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ 

গানের ভুবনে পাঁচ দশকের পথ-পরিক্রমা নিয়ে আয়োজিত ‘সুরে সুরে পঞ্চাশে’ সংগীত সন্ধ্যায় কোন গানগুলো শোনাবেন? 

‘সুরে সুরে পঞ্চাশে’ কোন গানগুলো গাইব তা নিয়ে এখনও ভাবছি। রেনেসাঁ ব্যান্ডের পাশাপাশি একক ও মিশ্র অ্যালবামে গাওয়া কিছু গান শ্রোতারা এখনও শুনতে চান। কিন্তু চাইলেও শ্রোতাপ্রিয় সব গান তো শোনানো সম্ভব নয়। কারণ এ আয়োজনের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। তাই আয়োজক নূর ইভেন্টসের সবার সঙ্গে কথা বলেই গানের চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে দু-এক দিনের মধ্যেই অনুষ্ঠানের গান নির্বাচন করে ফেলব।        

পেছন ফিরে তাকালে শিল্পীজীবনের এ দীর্ঘ সফর কীভবে মনের পর্দায় ধরা দেয়?

ফেলে আসা সময়ের অনেক ঘটনাই চলচ্চিত্রের মতো মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংগীতের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে পারা সত্যি স্বপ্নের মতো। কখনও ভাবিনি, গানে গানে এতটা পথ পাড়ি দিতে পারব। এই দীর্ঘ পথচলায় শ্রোতার ভালোবাসাই ছিল অনুপ্রেরণা। যদিও সংগীত বলয়ে বেড়ে উঠেছি, তারপরও কখনও শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন দেখিনি। প্রায় পাঁচ দশক আগে বড় ভাইয়ের সঙ্গে বালার্ক ব্যান্ড করেছিলাম। জিলু খান, আমি এবং ছোট ভাই পিলু খান তিনজনই এই ব্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ব্যান্ডের অন্য সদস্যরাও ছিল আমাদেরই বন্ধু। তাই যা কিছু করেছি একান্ত নিজেদের ভালো লাগা থেকে। নানা ব্যস্ততায় ব্যান্ডের সদস্যরা বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়লে বালার্ক ভেঙে যায়। কিন্তু ততদিনে আমি ও পিলু সংগীতের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলাম। সৃষ্টির নেশা আমাদের পেয়ে বসেছিল। যেজন্য সোলসে যোগ দেই। ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’, ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’-এর মতো গানগুলো সৃষ্টির পর কাজের স্পৃহা বেড়ে গিয়েছিল। সংগীত পেশা হিসেবে না নিলেও গান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারিনি। তাই আমৃত্যু গানের সঙ্গেই নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চাই।

সোলসে থাকাকানীল সময়ে সুরকার হিসেবে আলাদা পরিচিতি গড়ে নিতে পেরেছিলেন। তারপরও সোলস ছেড়ে রেনেসাঁ ব্যান্ড গড়ার কারণ?

 আশির দশকের বেশির ভাগ ব্যান্ডই পপরক, মেটাল, হার্ডরক গানকে প্রাধান্য দেওয়া শুরু করেছিল। সোলস সদস্যরা একই পথে হাঁটা শুরু করেছিলেন। এতে মেলোডি গানের যে তৃষ্ণা, সেটা কোনোভাবেই পূরণ হচ্ছিল না। আমার মতো একই চিন্তাধারার কয়েকজন মিউজিশিয়ান এক হওয়ার পরই মূলত রেনেসাঁ ব্যান্ডের জন্ম। আমরা যারা রেনেসাঁ গঠন করেছিলাম, তাদের সবার ইচ্ছা ছিল একটাই, কথানির্ভর মেলোডি গান করা। সে কারণে আমি আর পিলু যেমন সোলস ছেড়েছি, তেমনি ব্যান্ডের অন্যান্য সদস্যরাও তাদের পুরোনো দল ছেড়ে রেনেসাঁয় যোগ দিয়েছিলেন। গান হোক সামাজিক আন্দোলনের হাতিয়ার এই ছিল আমাদের চাওয়া। তাই রোমান্টিক গান যেমন তৈরি করেছি, তেমনি নানা বিষয় নিয়েও গান করতে পিছিয়ে আসিনি আমরা। ‘আজ যে শিশু’, ‘বেঁচে থাকা নিয়ে যাদের যুদ্ধ’, ‘তৃতীয় বিশ্ব’, ‘বাংলাদেশ তোমার বয়স হলো কত’, ‘একুশ শতকের গ্রাম-বাংলা’ এমন অনেক গানেই বিষয় বৈচিত্র্য তুলে ধরার চেষ্টা ছিল। এ কারণেই ব্যান্ডের নাম রাখা হয়েছে রেনেসাঁ যার অর্থ নবজাগরণ।   

কণ্ঠশিল্পী এবং সুরকার নকীব খানের মধ্যে চিন্তা-চেতনায় কোনো পার্থক্য খুঁজে পান?

পার্থক্য একটাই, পরিচিতিটা কণ্ঠশিল্পী চাইতে সুরকার হিসেবে বড় করে দেখা। আমার চিন্তা-চেতনার জায়গাটাও সুরকার নকীব খানই দখল করে রেখেছে। এর চেয়ে বড় সত্যি হলো, আমি কখনও কণ্ঠশিল্পী স্বপ্ন দেখিনি; শ্রোতার কাছে সুরকার হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরতে চেয়েছি।

বিভিন্ন শিল্পীর একক গান ও অ্যালবাম ছাড়াও সিনেমায় সুরকার হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে আপনাকে দেখা মেলেনি, কারণ কী?

প্লেব্যাক নিয়ে আসলেই কখনও ভাবিনি। শর্ত মেনে কাজের সুযোগ দেওয়ার কারণেই ‘পাঞ্চ’ সিনেমায় সুরকার হিসেবে কাজ করা। আমি যে ধরনের গান গাই, যে ধরনের সুর করতে চাই, তেমন কোনো গান করার স্বাধীনতা পেলে প্লেব্যাক নিয়ে ভাবতে পারি।  

© Samakal
Shares:
Leave a Reply