
সংস্কার নেই ২১ বছর, জেটির অংশ ধসে পড়ছে নাফ নদে
সারাদেশ
আব্দুর রহমান, টেকনাফ 2025-01-11
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপঘেঁষে বয়ে যাওয়া নাফ নদে ৫৫০ মিটার দীর্ঘ জেটি নির্মাণ শেষ হয় ২০০৪ সালে। ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেটিটি এরপর আর সংস্কার করা হয়নি। এতে জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ছে নদে। এ ছাড়া জেটির পাশে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করায় পিলারগুলোও রয়েছে ঝুঁকিতে।
স্থানীয়রা জানান, ২১ বছরে একবারও সংস্কার না করায় জেটিটি এমনিতেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর ওপর দ্বীপসংলগ্ন নাফ নদ থেকে অবাধে বালু তুলে ভরাট করা হচ্ছে স্থানীয় সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের নিচু এলাকা। প্রায় হাজার একরের পার্ক ভরাট করতে গিয়ে জেটিসহ পুরো এলাকাটিই ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে। তারা আরও জানান, মেসার্স চায়না হারবাল নামে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান এখানে বালু উত্তোলন করছে। বেপরোয়াভাবে বালু তোলায় জেটির খুঁটির আশপাশ দেবে যাচ্ছে। এতে জেটিটি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। পুরো গ্রামও ঝুঁকিতে রয়েছে। এ নিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মানববন্ধনও করেছিলেন গ্রামবাসী।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, সেন্টমার্টিনে পর্যটক পাঠানো, জেলে নৌকা চলাচল সহজ করা এবং মিয়ানমার থেকে পশুসহ পণ্য আমদানি বাড়ানোর লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জেটিটি নির্মাণ করে। এখানে বিশ্রামাগার, শৌচাগার ও চারটি সিঁড়ি রয়েছে। জেটির পাশে রয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের স্পটও। ২০০৪ সালে জেটিটি কক্সবাজার জেলা পরিষদকে স্থানান্তরের পর ২০০৬ সালে উন্মুক্ত করা হয়।
সরেজমিনে জেটির রেলিংসহ বিভিন্ন অংশ নদের বালিয়াড়িতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় জেটির মুখে দায়িত্ব পালন করা বিজিবির এক সদস্য বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জেটিতে ভারী যান চলতে দেওয়া হচ্ছে না। রেলিংসহ বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেওয়ায় লোকজনের ভিড় না করতে অনুরোধ করছি। জেটিটির অবস্থা বেশ নাজুক।’
দ্বীপের বাসিন্দা জসিম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় শাহপরীর দ্বীপের জেটিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্মাণের পর ২১ বছরে এতে সংস্কার করতে দেখা যায়নি। সেন্টমার্টিনে চলাচলের পাশাপাশি মাছ ধরার নৌকাও এটি ব্যবহার করে। দ্রুত সংস্কার না করলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শাহপরীর দ্বীপের ইউপি সদস্য আবদুস সালাম বলেন, শাহপরীর দ্বীপ ঘুরতে এলে পর্যটকদের প্রথম পছন্দ এই জেটি। এ ছাড়া এর সঙ্গে জেলেসহ বিভিন্ন পেশাজীবী পরিবার জড়িত। জেটিটি ধসে পড়লে পুরো দ্বীপবাসী কষ্টে পড়বে।
সংস্কার নিয়ে এলজিইডি-প্রশাসন ঠেলাঠেলি
ঝুঁকিপূর্ণ হলেও জেটিটি সংস্কারের দায়িত্ব নিচ্ছে না স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও জেলা পরিষদ কার্যালয়। বরং পরস্পরের ওপর দায় চাপিয়ে সংস্কারের বিষয়ে নীরব দু’পক্ষই।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মারুফ বলেন, ‘শাহপরীর দ্বীপ জেটি সংস্কারে এলজিইডিকে চিঠি পাঠানোর আলোচনা হয়েছে। সেটি পাঠানো হলে তারা জেটি সংস্কারের বাজেট নির্ধারণ করে দেবে। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
টেকনাফ উপজেলা প্রকৌশল কর্মকর্তা রবিউল হোসাইন বলেন, জেটিটি ২০০৪ সালে জেলা পরিষদকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন থেকে এর দেখভাল ও সংস্কারের দায়িত্ব তাদের।