
সময় টেলিভিশনে সাংবাদিক ছাঁটাইয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
বাংলাদেশ
অনলাইন ডেস্ক 2024-12-27
সময় টেলিভিশনের পাঁচ গণমাধ্যমকর্মীর একসঙ্গে চাকরি যাওয়ার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ সামনে আসছে। গত মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা এএফপি এ নিয়ে খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে।
বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, চাকরিচ্যুতদের অভিযোগ, ১৮ ডিসেম্বর হাসনাত আবদুল্লাহ কয়েকজনকে নিয়ে সময় টিভির বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) সঙ্গে দেখা করেন এবং টিভি স্টেশনের ১০ জনের নামের একটি তালিকা দিয়ে তাদের চাকরিচ্যুত করতে চাপ দেন। পরে সেই তালিকার পাঁচজনকে ডেকে পদত্যাগ করতে বলা হলে তারা তাতে অস্বীকৃতি জানান। একই দিন হোয়াটসঅ্যাপে তাদের অব্যাহতিপত্র পাঠানো হয়।
প্রায় ১৫ জনের একটি দলসহ হাসনাত আবদুল্লাহ সিটি গ্রুপের হেড অফিসে গিয়ে কয়েকজনকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ার জন্য চাপ দেন বলে বিবিসি বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও সময় টিভির পরিচালক মো. হাসান। তবে সিটি গ্রুপে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও সেখানে গিয়ে ভয় দেখানো বা তালিকা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় সরকারের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার নানা অভিযোগ তোলা হয় বেসরকারি চ্যানেলটির বিরুদ্ধে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর এমন হস্তক্ষেপকে অশনিসংকেত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
চাকরিচ্যুতরা হলেন– চ্যানেলটির চিফ ইনপুট এডিটর ওমর ফারুক, সাংবাদিক মো. আরিফুল সাজ্জাত, ডিজিটাল হেড কামাল শাহরিয়ার, সহযোগী বিশেষ প্রতিবেদক দেবাশীষ রায় ও সিনিয়র রিপোর্টার বুলবুল রেজা।
দু’পক্ষের ভিন্ন বয়ান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘সাংবাদিকদেরই একটি অংশ এটি করার জন্য সাজেস্ট করেছে। আপনাদের জার্নালিস্টদেরই একটা বৃহৎ অংশ, যারা ফ্যাক্টবেজড জার্নালিজমের মধ্যে ছিল, প্রোপাগান্ডাবেজড জার্নালিজমের মধ্যে ছিল না– ওই জার্নালিস্টরাই পরামর্শ দিয়েছে যে, ওনার (সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং সময় টিভির পরিচালক মো. হাসান) সঙ্গে কথা বলতে পারেন। কেবল আলোচনার জন্যই সেখানে গিয়েছিলাম।’
কিন্তু সময় টিভিতে প্রতিবাদ না পাঠিয়ে কিংবা প্রেস কাউন্সিলের মতো যথাযথ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সরাসরি অফিসে কেন গেলেন– এমন প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘পরে জেনেছি কী কাউন্সিল আছে, এটা-সেটা। কিন্তু এই ইস্যুর একদম প্রথম দিন থেকে জার্নালিস্টরাই বলেছেন, ওনার সঙ্গে কথা বলতে।’ তালিকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দিইনি। বরং দীর্ঘ সময় ধরে করা প্রমাণহীন নানা রিপোর্টের বিষয় তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি জনসাধারণের অনাস্থা নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছি।’
অন্যদিকে মো. হাসান বলেন, ‘১৭ বা ১৮ ডিসেম্বর বিকেলের দিকে সমন্বয়ক পরিচয়ে কয়েকজন আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমি একটি মিটিংয়ে থাকায় অপেক্ষা করতে বললেও তারা তাদের আর্জেন্সির কথা জানান। দেখা করার পর তারা মৌখিকভাবে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে জানান যে, তারা ৫ আগস্টের আগে যেমন রিপোর্টিং করছিলেন, এখনও তেমনটাই করছেন। ওনারা বলেন, এদেরকে এখানে রাখা যাবে না।’ তবে সমন্বয়করা সময় টিভির শেয়ার চেয়েছেন বলে যে অভিযোগ উঠছে, তা সত্য নয় বলে জানান তিনি।
এদিকে সময় মিডিয়া লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলাম বলেছেন, ‘সিটি গ্রুপের এমডিকে তারা ভয় দেখিয়েছে। ওখান থেকে আমাদের চাপ দেওয়া হয়েছে যে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য, যে কারণে আমরা ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি। স্বেচ্ছায় আমরা এটি করি নাই।’