সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি

সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি

সম্পাদকীয়

সমকাল ডেস্ক

2024-12-26

দেশে প্লাস্টিকের নানারূপ ব্যবহার বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছিয়াছে বলিলে অত্যুক্তি হয় না। শহর কিংবা গ্রাম, সকল পর্যায়েই প্লাস্টিকের বিস্তার স্পষ্ট। উদ্বেগের বিষয় হইল, এই সকল প্লাস্টিকের সামান্য অংশই শুধু রিসাইকেল বা পুনঃচক্রায়ন হইয়া থাকে। অধিকাংশই নদী, সমুদ্র ও ডাম্পিং স্টেশনে জমা হয়, যাহা পরিবেশ ও মানুষের খাদ্যশৃঙ্খলে ঢুকিয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিকের বিস্তার ঘটাইতেছে। বুধবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন-এসডোর গবেষণায় উঠিয়া আসিয়াছে, অধিকাংশ মানুষ প্রতিনিয়ত একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার করিয়া ফেলিয়া দেয়। উহার অর্থ, প্লাস্টিকের ব্যবহার যদ্রূপ বৃদ্ধি পাইয়াছে, ততোধিক বৃদ্ধি পাইয়াছে প্লাস্টিকদূষণ।

গবেষণার এই ফল এমন এক সময় প্রকাশ পাইল, যখন অন্তর্বর্তী সরকার পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বন্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করিয়াছে। যদিও বাস্তবে উহার কার্যকারিতা লইয়া প্রশ্ন বিস্তর। আমরা জানি, ২০০২ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের প্রথম দেশরূপে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করিলেও কয়েক বৎসর পর হইতে পলিথিনে বাজার সয়লাব হইয়া যায়। পলিথিন এখনও এতটা বাড়-বাড়ন্ত, দেশে প্রত্যহ সহস্রাধিক কারখানায় উহার উৎপাদন হইতেছে। উপকূলীয় এলাকায় একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করা হইলেও উহা কার্যকর হয় নাই। বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিক পণ্যে দেশের পরিবেশ বিষাইয়া উঠিয়াছে।

বস্তুত ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিকের বোতল, অপচনশীল বস্তু, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি যত্রতত্র ফেলিবার কারণে ঐগুলি পুকুর-খাল-বিল-নর্দমার মাধ্যমে নালা হইয়া একসময় সমুদ্রে পতিত হয়। সামুদ্রিক পরিবেশের দূষণের কারণে সামুদ্রিক জীবের উপর যেই বিরূপ প্রভাব পড়িতেছে, উহা মানুষের ক্ষতির কারণ হইয়াই ফিরিয়া আসে। সর্বাপেক্ষা ভয়ের বিষয়, শত শত বৎসরেও প্লাস্টিক পণ্য মাটির সহিত মিশিয়া যায় না, বরং উহা একসময় ভাঙিয়া মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যাহা খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করিয়া বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্ম দেয়।
অথচ আলোচ্য গবেষণায়ই প্রকাশিত, ভোক্তাদের মধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন মানুষ শহরে কিছু থাকিলেও গ্রামে উহাদের সংখ্যা মুষ্টিমেয়। যে কারণে প্লাস্টিক বোতলের কোমল পানীয়ের ব্যবহার গ্রামেই অধিক। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতলের সংকট মোকাবিলায় সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলিয়া আমরা মনে করি। প্লাস্টিকদূষণের হাত হইতে দেশকে রক্ষা করিতে হইলে জনসচেতনতায় যদ্রূপ গুরুত্ব দিতে হইবে, তদ্রূপ প্রশাসনিক ব্যবস্থাও জরুরি। 

সরকার পলিথিন নিষিদ্ধ করিলেও উহা কার্যকর হইতেছে না। কারণ একদিকে ভালো বিকল্প এখনও ভোক্তাগ্রাহ্যরূপে তৈরি হয় নাই। অন্যদিকে সরকারের জোরদার অভিযানও নাই। এতদ্ব্যতীত পলিথিন উৎপাদন ও আমদানি ব্যবস্থায় হাত না দিয়া এই ধরনের টোটকা ব্যবস্থায় সুফল পাওয়া কঠিন। প্লাস্টিক বোতল ব্যবহারের পর উহা ফেলিয়া না দিয়া প্রশাসনিকভাবে সংগ্রহ ও পুনঃচক্রায়নের ব্যবস্থা করিলে পরিবেশদূষণ হ্রাস পাইবে। জাতীয়ভাবে প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্লাস্টিকদূষণ-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করিতে হইবে। তৎসহিত সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ, সীমিতকরণসহ ইহার পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক বিকল্প উৎপাদনে প্রণোদনা ও উৎসাহ প্রদানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করিতে হইবে। বর্তমান অবস্থা চলিতে থাকিলে বোতল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাইবে। এই ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশ আলোচ্য সংকট মোকাবিলায় কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করিতেছে, সেই শিক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সংগঠনসহ নাগরিক সমাজও প্লাস্টিক বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করিতে পারে। প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এই সংকট সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই মোকাবিলা করিতে হইবে।

© Samakal
Shares:
Leave a Reply