সুখ কি? সুখী হওয়ার মনস্তাত্ত্বিক উপায়!

সুখ কি? সুখী হওয়ার মনস্তাত্ত্বিক উপায়!

“সুখ” এর যথার্থরূপ সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর কেননা সুখ সম্পূর্ণই ব্যক্তি বিশেষের মানসিক অবস্থা ও প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল আপেক্ষিক মানবিক অনুভূতি মাত্র; সুখ’কে বিভিন্ন দৃৃষ্টিকোণ হতে যেমন জৈবিক, মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক, শারিরীক, অর্থনৈতিক,দর্শন, সামাজিকতা, ধর্ম প্রভৃতি অনুযায়ী ব্যাখা করা হলেও মূলত সুখের অপেক্ষাকৃত সর্বাধিক অনুধাবনযোগ্য ব্যাখ্যা হলো “নিজের অবস্থা-অবস্থান-প্রকৃতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ সন্তুষ্টচিত্ত’তা”।

সুখ এর সংজ্ঞা

সুখ এক অনির্বচনীয় সাইকোলজিক্যাল স্যাটিসফেকশন যা আনন্দ, সমৃদ্ধি, সুস্থতা, নৈতিকতা, ইতিবাচকতা, বহির্মুখী বা অন্তর্মুখী অবস্থা, স্বাধীনতা, আশাবাদী মনোভব, সঙ্গ, প্রেম-ভালোবাসা, বিজয় লাভ, রোমাঞ্চ প্রভৃতির বিশেষ প্রায়োগিক ফলাফলে উপলব্ধ এক বৈচিত্র্যময় খুশীর অনুভব বা অনুভূতি; তথাপি কেবলমাত্র উপরোক্ত Emphatic Object হতেই যে সুখানুভূতি লাভ করা (সুখী হওয়া) সম্ভব এমনটি নয় বরং বিভিন্ন Cynical Object হতেও ব্যক্তি বিশেষ সুখানুভূতি লাভ করে থাকে যেমন চুরি, ডাকাতি, মাদক, জোরপূর্বক কারোর নিকট স্বার্থ হাসিল, বিরোধীতা ইত্যাদি [সংগত কারণে Cynical Object সমূহ এখানে সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে]; তবুও Emphatic Object/Cynical Object যেভাবেই বলি না কেন বাস্তবিক অর্থে সুখ হলো “প্রাপ্তির বিপরীতে স্বার্থক সন্তুষ্টচিত্ততা” [এখানে প্রাপ্তি বলতে শুধুই অর্জন’কে বোঝানো হয়নি বরং ত্যাগের বিষয়টিও নিবিষ্ট রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আপনার নিকট বিদ্যমান সম্পদ অন্য কোন নিঃস্ব ব্যক্তিকে দান করার বিপরীতে আপনার মন-এ জাগ্রত হওয়া মহানুভবতা বা মানবিকতার তরে উপলব্ধ অনুভূতি’ই আপনার প্রাপ্তি/পাওয়া সুখ এর বহিঃপ্রকাশ হতে পারে]।

সুখ এর মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান

সুখের ফিজিক্যাল বিষয়টি মানব মস্তিষ্কের বামদিকের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সের উচ্চ কার্যকলাপের দিকে লক্ষ্য করে রিয়েলাইজ করা যায়; যদিচ সুখ সম্পূর্ণ’ই মানসিক আবেগীয় অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ মাত্র!

সুখ লাভের সূত্র

সুখ লাভের সত্যাসত্য স্বীকার্যটি হলো “আপনি যদি নিজেকে সুখী মনে করতে না পারেন তবে কখনোই আপনার পক্ষে সুখ অর্জন [উপলব্ধি] করা সম্ভব নয় – এটি সম্পূর্ণই আত্ম-স্বীকৃতিগত সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট” তবুও আসুন যথাসম্ভব সুখের জগতে বিচরণ করার চেষ্টা করি…

সর্বপ্রথম আপনাকে মনে মনে স্বীকার করে নিতে হবে আপনি নিজে সুখী হতে চাইছেন কেননা এটাই সুখের পূর্বশর্ত >>> আপনাকে মনের সকল দুঃখ-কষ্ট,অতীত বেদনা,ক্ষোভ,অপ্রাপ্তি,হিংসা ভুলে যেতে হবে >>> বড় বড় করে ৩ বার নাক দিয়ে নিশ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন >>> নিজের শরীরটাকে যথাসম্ভব নির্ভার করে দিন যেন মানসিকভাবে স্বস্তি অনুভব করতে পারেন >>> নিজেকে সর্বদাই অবান্তর Compare (তুলনা) করা হতে বিরত থাকুন। আপনার অবস্থা এবং অবস্থানের স্বাপেক্ষে নিজেকে আপনার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তির সহিত তুলনা করে শুধুই আপনি অপ্রাপ্তির যাতনা অনুভব করবেন পক্ষান্তরে আপনার নিচের পর্যায়ের কারোর সহিত তুলনা করলে যথার্থই অবলোকন করবেন যে “আপনি আসলেই কতোটা ভালো আছেন” >>> আপনি ‘যা’ এবং আপনার নিকট ‘যতোটুকু’ আছে সেটা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করুন [এটার অর্থ এমন নয় যে আপনার ভবিষ্যত Life Development-এ আপনাকে আত্ম-উন্নয়নের অভিলাস ত্যাগ করতে বলা হচ্ছে বরং আপনাকে সর্বদাই আপনার বর্তমান নিয়েও স্যাটিসফাইড থাকার জন্য সাজেস্ট করা হলো মাত্র] >>> আপনার অপ্রাপ্তির ফলাফল বিশ্লেষণ করুন এবং সেখান হতে প্রাপ্তির পজেটিভ দিকসমূহ হাসিমুখে গ্রহণ করুন >>> অযথা অবসর সময় অপচয় করা ত্যাগ করুন এবং ক্রিয়েটিভ ও ইফেক্টিভ কোন কর্মে নিজেকে নিযুক্ত করুন >>> যথাসম্ভব পরিবার-পরিজন-প্রিয়জন-আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুদের সহিত নিজের রিলেশনশীপ অক্ষুন্ন রাখুন >>> নিজের লাইফ স্টাইল একটি বৈচিত্রপূর্ণ (এক ঘেয়েমী নয় এমন) প্রত্যাহিক রুটিনে নিবন্ধিত করুন >>> সর্বদাই পজেটিভ থিংকিং করুন এবং নেগেভিটি পরিহার করুন >>> নিজেকে ধৈর্যশীল ও আশাবাদী এবং জীবনে লক্ষ্যের প্রতি অটুট-অবিচল থাকুন >>> গোমড়ামুখে না থেকে সর্বদা হাসিমুখে প্রাণোচ্ছল-প্রাণবন্ত থাকার চেষ্টা করুন তথাপি প্রয়োজনে তীব্র কষ্টে নীরবে মন খুলে কেঁদে হলেও নিজেকে হালকা করতে পারেন >>> যদি কোনরূপ অসৎ সঙ্গ থাকে তবে তা পরিহার করুন। একইভাবে যদি কোন মাদকের অভ্যাস থাকে তবে সেটিও ত্যাগ করুন [যদিও মাদক আপনাকে ক্ষণিক সময়ের জন্য আনন্দানুভূতি দিতে পারে কিন্তু মোহ কেটে যাওয়ার পর আপনাকে আরও বেশী ডিপ্রেসড করে তুলবে] >>> আপনি যদি Upset/Depressed থাকেন তবে Music Therapy তে Relaxing এবং Mind Refreshing Music শুনে মন ভালো করে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন >>> সর্বোপরি আপনার সাব-কনশিয়াস মাইন্ডকে এমনভাবে আত্নবিশ্বাসী হতে হবে যেন “আমি ভালো আছি এবং আমি একজন সুখী মানুষ” এই কথাটি সন্তুষ্টচিত্তে নিঃসংকোচে যেন আত্মস্বীকৃত হয়!

পরম সুখ লাভ!

সুখ এর সর্বাধিক প্রচলিত প্রতিশব্দ হলো Happiness যেখানে Complacence হলো নিকটবর্তী Synonymous একটি Word যার অর্থ হলো আত্মপ্রসাদ, প্রসন্নতা, আত্মতুষ্টি, আত্মতৃপ্তি ইত্যাদি [এখানে “পরম সুখ” বোঝাতে Complacence শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে]।

যদি আপনাকে কিংবা যে কাউকে প্রশ্ন করা হয় “আপনি ঠিক কি পেলে জীবনে সুখী হতে পারবেন?” তবে সেই প্রশ্নের উত্তর বিভিন্ন রকম হতে পারে; কেউ হয়তো অর্থ-বিত্ত, কেউবা প্রেম- ভালোবাসা, কেউ যশ-খ্যাতি অথবা সৌন্দর্য্য-ক্ষমতা ইত্যাদির কথা বলবেন [ব্যক্তিভেদে উত্তর ভিন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক]! সুতরাং আমাদের প্রয়োজন একটি Universal Answer যা দ্বারা “পৃথিবীর সকল মানুষ পরম সুখী হতে পারবে” এই বিষয়টি সুনিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

অনেক এনালাইসিস করেও কার্যত এই প্রশ্নটির যথার্থ উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়না [প্রায়োগিক অর্থে] কেননা ‘পরম সুখ’ বিষয়টি আপেক্ষিক এবং চলমান বিষয় যেখানে “একটি চাহিদা পূরণ হওয়া মাত্রই আরেকটি রিলেটিভ চাহিদা/প্রয়োজন সামনে এসে দাড়াবে”। তাহলে আমরা ‘পরম সুখ’ বলতে “আমরা যে যেমন অবস্থা ও অবস্থানে আছি তাতেই তৃপ্ত হওয়া” অর্থে আত্ম-সন্তুষ্টি’কেই কি বুঝবো?

নাহ…শুধুমাত্র দার্শনিক দৃষ্টিকোণ হতে এই আত্ম-সন্তুষ্টি বিষয়টিকে আমরা ‘পরম সুখ’ হিসেবে ইন্ডিকেট করতে পারিনা কেননা তাহলে জীবনের উচ্চাশা-আকাঙ্খা বিসর্জন দিলে জীবনের স্বার্থকতা অবশিষ্ট থাকে না!

তাহলে ‘পরম সুখ’ বলতে আমরা “নিজ প্রাপ্তির তরে চাহিদা এবং আত্ম-সন্তুষ্টি বা আত্ম-তৃপ্তি এর ভারসাম্য (Balance) বজায় রাখাকে বোঝাতে পারি”; কিন্তু সেই ভারসাম্য রক্ষার স্বরূপটা কেমন হবে?

পরম সুখের গাণিতিক ভারসাম্য

মেটাফোরলি ‘পরম সুখ’ এর বিষয়রটি গাণিতিকভাবে রূপায়িত করলে পরম সুখ হলো 369 এর 666 অবস্থানে নিয়ে আসা; যেখানে 3 হলো আপনার বর্তমান (নিম্ন) অবস্থার স্বরূপ, 6 হলো আপনার পরম সুখের ইন্ডিকেশন এবং 9 হলো আপনার জীবনের সুখের তরে ভবিষ্য সামগ্রিক উচ্চাশা ও আকাঙ্খা। এখন আপনি আপনার জীবনের যাবতীয় উচ্চাশা ও আকাঙ্কা এর মূল তথা Root ফ্যাক্টগুলি নির্ণয় করুন [√9=3] তারপর সেগুলি আপনার ভবিষ্যত সকল উচ্চাশার স্বরূপ হতে সেপারেশন [9-3=6] করে ফেলুন [এটাতে আমাদের এরূপ মানসিক অবস্থিতি “আমি সব চাই – চাই – চাই – আরও চাই – তবুও সুখ কেন না পাই?” এর সমধান মিলবে] যেন অবস্থানের ফলাফলে আপনার মূল লক্ষ্য’সমূহ স্পেসিফাইড হয়; অপরদিকে ঐ ফ্যাক্টসমূহ আপনার বর্তমান অবস্থার সহিত যুক্ত [3+3=6] করে নিন [এক্ষেত্রে আপনার জীবনে সুখ প্রাপ্তির উপলক্ষ্যের লব্ধি যুক্ত হবে] তাতে 369 নতুন স্বরূপে 666 এই সাম্যবস্থায় এসে দাড়াবে; আর এটাই হলো আপনার ‘পরম সুখ’ এর Absolute অবস্থান!

যেহেতু ‘পরম সুখ’ বিষয়টি সম্পূর্ণই আপেক্ষিক তাই এখানে সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্ট’টাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ; সুতরাং আপনাকে নিজের কনশিয়াস মাইন্ড ও সাব-কনশিয়াস মাইন্ড’কে এমনভাবে Modify করতে যেন “পরম সুখ” প্রাপ্তি নয় বরং সেটাকে হৃদয়ের অন্তঃস্থল হতে অনুভব করে অর্জন করে নিতে সক্ষম হয়!

ফেসবুকে আমন্ত্রণ রইলো: Humayun Shahriar Himu

সকলের জন্য শুভকামনা রইলো।

Shares:
Leave a Reply