
হলগুলোতে ফিরছে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা, এখনও নানা সমস্যা
সারাদেশ
মারজান আক্তার, চবি 2025-01-18
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সোহরাওয়ার্দী হল। গত বছরের নভেম্বরে এই হলের খাবারে পাওয়া গিয়েছিল সিগারেটের টুকরো। এর আগে এ হলের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে তেলাপোকা পাওয়া গিয়েছিল। খাবারের নিম্নমানসহ নানা কারণে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও আন্দোলন চলত এই হলে। তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী হলের চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি এই হলে খাবারে চালু হয়েছে নতুন ব্যবস্থা, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসা কুড়াচ্ছে।
সোহরাওয়ার্দী হলে নতুন করে চালু হয়েছে ‘মেস’ ব্যবস্থা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবুর্চিদের পরিবর্তে ডাইনিংয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। হলের এই নিয়মে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরীক্ষামূলক এই কমিটি গত শুক্রবার থেকে ১৫ দিনের কার্যক্রম শুরু করেছে। মেস পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করে ১৫ দিনের অর্থ একসঙ্গে নিয়েছে কমিটি। খাবারের পদ ও ধরনেও অন্যান্য হলের তুলনায় এসেছে ভিন্নতা। ৩০ টাকায় এই হলে এখন ভাতের সঙ্গে পাওয়া যায় তিনটি তরকারি। কমিটির সদস্যরা জানান, নিয়মিত আয়োজনে ভাতের সঙ্গে একটি আমিষ ও দুটি শাক-সবজির আয়োজন থাকবে।
সোহরাওয়ার্দী হলের এই ব্যবস্থা অনুসরণের কথা চলছে অন্যান্য হলেও। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শুধু খাবার বা আবাসন নয়; রাজনৈতিক দখলদারিত্বমুক্ত হওয়ায় হলগুলোতে ফিরতে শুরু করেছে কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা। কোনো ধরনের ভোগান্তি, তদবির, নেতাদের ধরাধরি ছাড়াই বৈধভাবেই সিটে উঠতে পারছেন তারা। তবে এখনও পানি, ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে।
পূর্ণ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৬৬ সালে চবির যাত্রা শুরু। কিন্ত প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছর পেরিয়ে এখনও পূর্ণ আবাসিক হতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি। মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১৯ শতাংশ পাচ্ছেন আবাসন সুবিধা। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে আসন মাত্র পাঁচ হাজার। ছাত্রদের আবাসিক হলে মাত্র দুই হাজার ৭১৪ ও ছাত্রী হলে দুই হাজার ৩৮৪ জনের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এই হলগুলোতেও গত সাত বছরে হয়নি বৈধ আসন বরাদ্দ। নিয়ম মেনে সর্বশেষ এসব হলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের জুন মাসে। এর পর হলগুলোর দখল নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ছাত্রদের সাতটি হলের অধিকাংশ কক্ষই ছিল তাদের দখলে। কোন কক্ষে কে থাকবে, সেটা নির্ধারণ করতেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। কয়েক দফা চেষ্টা করেও প্রশাসন বৈধভাবে হলে আসন বরাদ্দে ব্যর্থ হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে পাল্টেছে এ চিত্র।
আলাওল হলের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, হলে শৃঙ্খলায় আগের চেয়ে বেশ পরিবর্তন দেখছি। বিশেষ করে রাজনৈতিক সংঘাত না থাকায় বেশ স্বস্তিতে আমরা। খাবারের মান কিছুটা ভালো হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, ছাত্রদের একটি কমিটি খাবারের দায়িত্ব পালন করছে। আমার মনে হচ্ছে, তারা বেশ ভালোভাবেই দায়িত্ব সামলাচ্ছে। শাহ আমানত হলের প্রভোস্ট ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, আমার হলে পানি সমস্যার সমাধান করেছি শিক্ষার্থীরা সিটে ওঠার আগেই। আলাওল হলের প্রভোস্ট ড. মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ওয়াইফাই সমস্যা আছে। সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা।