৩ সেতুর রোগে লাখোজন ভোগে

৩ সেতুর রোগে লাখোজন ভোগে

সারাদেশ

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

2025-01-10

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে তিনটি সেতু নিয়ে ব্যাপক দুর্ভোগে আছেন কয়েক লাখ মানুষ। উপজেলা সদরে নলজুর নদীর ওপর সেতু তিনটি এখন স্থানীয়দের পথের কাঁটা। উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত সেতুগুলোতে চলাচলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের। সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নলজুরের প্রধান সেতু হিসেবে পরিচিত খাদ্যগুদাম এলাকার পুরোনো সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণকাজ চলছে।
একই নদীর ওপর থাকা আরেকটি সেতু দেবে যাওয়া ডাকবাংলো এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। স্থানীয়রা জানান, যে কোনো সময় সেখানে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
অপরদিকে খাদ্যগুদামের পাশে নির্মিত বিকল্প বেইলি ব্রিজ দিয়ে একমুখী যান চলাচল করছে। এ সেতুর সংযোগ সড়কের অবস্থা করুণ। সেখানে নির্মাণাধীন নতুন সেতুর পাশে চলাচলের জন্য তৈরি করা হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সেটিও ভেঙে পড়ার উপক্রম। এই সাঁকো দিয়ে পারাপার কষ্টকর।
স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, এখানকার তিনটি সেতুও তিন ধরনের রোগে আক্রান্ত। একটিও সুস্থ নেই; যার কারণে পথচলার সহায়ক হিসেবে স্থাপিত এসব সেতুই এখন পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের চোখের সামনে দীর্ঘদিন ধরে এমন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সংকট নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ নেই কারও।
শামীম আহমদ নামে স্থানীয় আরেক বাসিন্দা জানান, উপজেলা সদরকে পৌরসভায় রূপান্তরের পর আশপাশের উপজেলাগুলোর তুলনায় লোকজনের সমাগম বেড়েছে জগন্নাথপুরে। শহরের একদম প্রাণকেন্দ্রে থাকা এই সেতুগুলোর এমন দুর্দশা দৃশ্যমান প্রায় দুই বছর ধরে। এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাদ্যগুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০২৩ সালে পুরোনো ওই সেতুটি ভেঙে ১৪ কোটি টাকার নতুন সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেতুর কাজ করছে কিশোরগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটিবাংলা এন্টারপ্রাইজ।
২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ কাজ বাকি। অভিযোগ আছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই ধীরগতিতে চলছে সেতুর নির্মাণকাজ।
নতুন সেতুটি নির্মাণ শুরুর সময় ওই সেতুর পার্শ্ববর্তী হেলিপ্যাড এলাকায় একটি বেইলি ব্রিজ তৈরি করা হয়। ব্রিজটি নির্মাণের সময় এটির উচ্চতা বাড়ানোর দাবি তুলে ভরা বর্ষায় এটি ডুবে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন স্থানীয়রা। তাদের কথা আমলে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের পরিকল্পনা অনুসারে সেতুটি নির্মাণ করে। পরে স্থানীয়দের আশঙ্কাই সত্য হয়। ভারী বর্ষণ আর ঢলের পানিতে সেতুটি বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায়।
এ কারণে বছরে অন্তত ৩ থেকে ৪ মাস এই সেতুতে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এতে স্থানীয়দের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। তারা সেতু ব্যবহার করতে অপেক্ষা করেন পানি কমে যাওয়া পর্যন্ত।
অপরদিকে ১৯৮৮ সালে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের টাকায় একই নদীর ওপর ডাকবাংলো সেতুর নির্মাণ শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে এলজিইডি অধিদপ্তরের মাধ্যমে কাজ শেষ হয়। ২০২২ সালের ১৭ মার্চ নদী খননের সময় সেতুটি দেবে যায়। পরে এলজিইডি ও জগন্নাথপুর পৌরসভার উদ্যোগে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্টিলের পাটাতন বসিয়ে মেরামত করা হয়।
বর্ষাকালে বিকল্প সেতু পানিতে তলিয়ে গেলে তখন একমাত্র ভরসা এ সেতু। এ সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এবং নদীতে পানি বাড়লে বন্ধ হয়ে যায় সেতুর ব্যবহার।
নির্মাণাধীন সেতুর কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাইট ম্যানেজার সাইফুল আলম জানান, নদীতে পানি থাকায় কাজে দেরি হয়েছে। এখন কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। অচিরেই শেষ হবে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান, নতুন সেতুর কাজ শেষ হলে জনদুর্ভোগ কমে যাবে। ফেব্রুয়ারিতে সেতুর কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

© Samakal
Shares:
Leave a Reply