
বনে করাতকল, বিলুপ্তির পথে শাল-গজারি
সারাদেশ
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি 2024-12-26
ঘাটাইলে অবৈধ করাতকলের ছড়াছড়ি। এসব করাতকল স্থাপন করা হয়েছে বনে এবং বন ঘেঁষে। বিলুপ্তির পথে সংরক্ষিত বনের শাল-গজারিসহ অন্যান্য বৃক্ষ।
বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ অফিসের তথ্যমতে, ঘাটাইলে করাতকল রয়েছে ৭৭টি। যার মধ্যে নিবন্ধন নেই ৫৯টির। পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকায় মাত্র ১৮টি করাতকলের নিবন্ধন রয়েছে। ঘাটাইলে সামাজিক ও সংরক্ষিত বনভূমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৭১১ একর। এই ভূমি দেখভালের জন্য রয়েছে বন বিভাগের একটি রেঞ্জের আওতায় ছয়টি বিট অফিস। বনাঞ্চলসহ পরিবেশ রক্ষায় উপজেলায় রয়েছে বন ও পরিবেশ কমিটি। এই কমিটির কার্যক্রম চলছে শুধু কাগজে-কলমে।
সরেজমিন দেখা যায়, অবৈধ করাতকল স্থাপন করা হয়েছে কোথাও সামাজিক ও সংরক্ষিত বনে, আবার কোথাও বন ঘেঁষে। রেঞ্জ ও বিট অফিসের নাকের ডগায় করাতকল স্থাপন করে দিনরাত চলছে বৈধ ও অবৈধ কাঠ চেরাই। অবৈধভাবে সংরক্ষিত বন থেকে শাল-গজারি কেটে এসব করাতকলে চিরাই করলেই হয়ে যায় বৈধ। অথচ বন আইনে বলা আছে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা নিষিদ্ধ।
স্থানীয়রা জানান, বন বিভাগের লোকদের চোখ ফাঁকি দিয়ে করাতকল স্থাপন করা কোনোভাবেই সম্ভব না।
সাগরদীঘি এলাকার ফরহাদ হোসেন বলেন, বংশ পরম্পরায় শত বছর ধরে মানুষ বনের জমিতে বসবাস করে আসছেন। সেই জমিতে একটি রান্নাঘর উঠাতে গেলে বন বিভাগের লোকজন এসে বাধা দেন। আর বনের জমিতে রাস্তার পাশে অবৈধভাবে করাতকল স্থাপন করলে বন বিভাগের লোকজন তা দেখেও না দেখার ভান করেন। ফরহাদের পাশেই বসে থাকা আব্দুর রহিম বলেন, বন বিভাগের লোকদের মাসোহারা দিলেই অবৈধ করাতকল বৈধ হয়ে যায়।
মাকড়াই এলাকায় বনের জমিতে বসানো হয়েছে কাঠের হাট। এ নিয়ে ‘বনের জমিতে কাঠের হাট’ শিরোনামে গত ২১ নভেম্বর সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই একই বনের জমিতে স্থাপন করা হয়েছে তিনটি করাতকল।
করাতকলের মালিক শাহজাহান সাজু বলেন, ‘আমি করাতকল বিক্রি করে দিয়েছি রতন খানের কাছে।’ কোনো বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা, তাঁর সোজা উত্তর– মাকড়াই এলাকায় যত স’মিল আছে, কোনোটারই কাগজপত্র নেই। ওই এলাকায় আরও যে দুটি করাতকল রয়েছে, তার মালিক শাহাদৎ হোসেন ও দুলাল হোসেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রাকৃতিক বন থেকে শাল-গজারি বিলুপ্তির জন্য দায়ী অবৈধ করাতকল। তাদের কথার সত্যতা মেলে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি। ওইদিন সমকাল প্রতিবেদকের কাছে তথ্য আসে ল্যাংড়াবাজার এলাকায় শালগাছ কাটা হচ্ছে। নীল-হলুদ রঙের মিনিট্রাকে ভরে গাছের গুঁড়ি নেওয়া হবে কোনো এক করাতকলে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর দেখা মেলে কাঙ্ক্ষিত মিনিট্রাকের। পিছু নেন প্রতিবেদক। মিনিট্রাকটি গিয়ে থামে ওই কাঠের হাটের শাহজাহান সাজুর করাতকলে। পেছনে পেছনে হাজির হন সন্ধানপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক আবু সাইদ। মিনিট্রাক থেকে দ্রুত শ্রমিকরা নামালেন শাল গাছের অনেক গুঁড়ি। গোপনে ছবি তুলে সচেতন নাগরিক সেজে ফোনে বিষয়টি ওই সময় বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তাকে জানালে দেখছেন বলে ফোন কল কেটে দেন তিনি।
এ বিষয়ে বন বিভাগের ধলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা ওয়াদুদুর রহমান সমকালকে জানান, সাত মাস আগে একবার করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হয়। সে সময় তিনটি অবৈধ করাতকল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আপনাদের চোখের সামনে বনের জমিতে করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বন বিভাগ প্রতি মাসে টাকার বিনিময়ে অবৈধ করাতকলগুলোকে বৈধতা দেয়; এসব কথার সত্যতা কতটুকু– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, করাতকলগুলো থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। তালিকা করা হয়েছে, অচিরেই অভিযান পরিচালনা করা হবে।