
নিশি ও জ্ঞানী ভূত
ঘাসফড়িং
সমকাল ডেস্ক 2025-01-10
গল্প লিখেছেন সারমিন ইসলাম রত্না ছবি এঁকেছেন সব্যসাচী হাজরা
নিশি স্কুলে যাচ্ছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসে আছে। গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বাইরে রোদ। অনেকেই গরমে কষ্ট পাচ্ছে। নিশি কান্নাভেজা গলায় বললো, আম্মু, এসি বন্ধ করে দাও। আম্মু অবাক হয়ে বললেন, কেন মামণি? কী হয়েছে? নিশি বলে, অনেকেই গরমে কষ্ট পাচ্ছে। আমি এসি গাড়িতে বসে আছি। আমার খারাপ লাগছে। আম্মু এসি বন্ধ করলেন। আম্মু গাড়ির জানালা খুললেন। অমনি গরম বাতাস প্রবেশ করলো। হঠাৎ নিশির মনে হলো, কেউ একজন ওর পাশে বসেছে। যে বসেছে তাকে দেখা যাচ্ছে না। অদৃশ্য অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে। নিশি একটু সরে বসলো। সেই অদৃশ্য অস্তিত্ব আরো ঘেষে বসলো। নিশি ভয়ে কাঁপতে লাগলো। সরে বসার মতো আর জায়গা নেই। আম্মু জানতে চান, মামণি, কী হয়েছে? নিশি ভয় পাওয়া গলায় বলে, আম্মু, গাড়ির জানালা বন্ধ করে দাও। গাড়িতে কেউ একজন ঢুকেছে। আম্মু বলেন, কী আশ্চর্য! আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। নিশি কাঁপা গলায় বলে, আমিও দেখতে পাচ্ছি না। শুধু অস্তিত্ব টের পাচ্ছি। আম্মু গাড়ির জানালা বন্ধ করলেন। নিশি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। অদৃশ্য অস্তিত্ব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো! নিশি স্পষ্ট বুঝতে পারলো। নিশি চেঁচিয়ে বলে, আম্মু গাড়ি থামাও। আম্মু বলেন, মামণি, ধৈর্য ধরো। আমরা পাঁচ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবো। এক মিনিটও গাড়িতে বসে থাকতে পারছি না মা–নিশি বললো।
আম্মু নিশিকে সাহস দিলেন। গাড়ির ভেতর কেউই নেই। তোমার মনের ভুল। তুমি স্থির হয়ে বসো। নিশি স্থির হয়ে বসতে চাইলো। পারলো না।
স্কুলে পৌঁছতেই নিশি গাড়ি থেকে লাফিয়ে নামলো। অদৃশ্য অস্তিত্বও নিশির সঙ্গে লাফিয়ে নামলো। নিশি এক দৌড়ে স্কুলের ভেতর ঢুকে গেলো। নিশি বেঞ্চে বসে হাঁপাতে লাগলো। সহপাঠীরা পানি এগিয়ে দিলো। নিশিকে শান্ত হয়ে বসতে বললো। নিশি একটু শান্ত হলো। সহপাঠীরা প্রশ্ন করলো, কী হয়েছে তোর? নিশি উত্তর দেওয়ার আগেই ক্লাস শুরু হলো। হঠাৎ নিশির মনে হলো, ওর বেঞ্চেই কেউ একজন বসেছে। এবারও তাকে দেখা যাচ্ছে না। শুধু অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে। নিশি সরে বসতে পারছে না। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না। হঠাৎ স্যার প্রশ্ন করলেন, ভূত বলে কিছু নেই। তাহলে আমরা ভূতকে ভয় পাই কেন? তোমরা কেউ বলতে পারবে? সবাই নড়েচড়ে বসলো। নিশি উঠে দাঁড়ালো এবং কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, স্যার, ভূত বলে কিছু নেই। ভৌতিক অনুভূতি আছে। তখন মনে হয় আমাদের পাশে কেউ বসেছে। কেউ পেছন পেছন হাঁটছে। ছায়ার মতো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। এই বুঝি খপ করে ধরে ফেলবে। সে জন্যই আমরা ভয় পাই। নিশি কথাগুলো বলেই ভয়ে শিউরে উঠলো। স্যার বড়ো চোখ করে বলেন, বেশ ভালো বর্ণনা দিয়েছো। তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে, প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে নিজেই ভয় পাচ্ছো। ভয়ের কিছু নেই। শান্ত হও।
সহপাঠীরা হি হি করে হাসতে লাগলো। নিশির ইচ্ছে করলো, স্কুল থেকে বের হয়ে যেতে। এমন সময় কানের কাছে একজন ফিসফিস করে বলে, নিশি, ভয় পেয়ো না। আমার নাম– জ্ঞানী ভূত। আমি জ্ঞান অর্জন করতে পছন্দ করি। খুব গরম লাগছিলো। গাড়ির জানালা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকলাম। তোমার পাশে বসলাম। ভয় পেয়ে জানালা বন্ধ করতে বললে। তারপর ঠান্ডা বাতাস ছাড়া হলো। তোমাদের কথা শুনে বুঝলাম, ওটার নাম এসি। আমি খুব আরাম পেলাম। তোমার সঙ্গে স্কুলে চলে এলাম। বুঝতে পারলাম এখানে তোমরা লেখাপড়া করো। আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি তোমার সঙ্গে প্রতিদিন স্কুলে আসবো। ভূত সমাজে স্কুল নেই। আমি লেখাপড়া শিখে ভূত স্কুল প্রতিষ্ঠা করবো। নিশি অবাক হলো! নিশি কিছু বলতে চাইলো কিন্তু ওর গলা দিয়ে শব্দ বের হলো না। ও যেন বরফের মতো জমে গেছে!