বিট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি পাচার

বিট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে পাহাড় কেটে মাটি পাচার

প্রিয় চট্টগ্রাম

 রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা

2025-01-11

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জের কোদালা বন বিটে নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলছে। এতে মারাত্মকভাবে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পাহাড়খেকোদের উৎপাত বেড়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। পাহাড়ের মাটি নিয়ে চলছে বাণিজ্য। 
অভিযোগ রয়েছে, কলাবাইাজ্যাঘোনা পাহাড়ের মাটি কোদালা বনবিট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কপথ হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে গেলেও বিট কর্তৃপক্ষ নীরব থাকে। প্রচার আছে সব পক্ষকে ম্যানেজ করে চলছে পাহাড় কাটা।
বনগ্রাম সেগুন বাগান এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর জানান, পাহাড় কাটায় জড়িতদের সঙ্গে স্থানীয় বনকর্মীদের যোগসাজশ রয়েছে। তাই নির্বিঘ্নে পাহাড় কাটা ও মাটি পাচার চলছে। ভিলেজার আব্দুল খালেক জানান, সম্প্রতি সেগুন বাগান এলাকায় সেনাবাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকটি ট্রাক আটক করে পাচারকারীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না। 
স্থানীয়রা জানান, পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতরা এলাকার চিহ্নিত লোক। একাধিক সিন্ডিকেটে বিভক্ত হয়ে বনের একেকটি পাহাড় দখল করে মাটি কেটে পাচার করা হচ্ছে। কোদালা বনাঞ্চলের চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম সেগুনবাগান, কলাবাইজ্যাঘোনা, বটতলী, ধুইল্যাছাড়ি, নিশ্চিন্তাপুর ফইট্টাগোদা, মহুত্বেরঘোনা এলাকার পাহাড় কাটা হচ্ছে দিন-রাত। বিশেষ করে প্রায় প্রতিদিনই রাতের অন্ধকারে পাহাড় কেটে মাটি ট্রাকযোগে পাশের এলাকার বিভিন্ন স্থানে পুকুর, খাল, জলাশয়, ধানিজমি ভরাটে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় পাহাড়ের মাটি পাচার। রাতভর চলে এই কাজ। 
জানা যায়, দুর্গম বনাঞ্চলের পথ অতিক্রম করে সমতলের সড়কে নেমে আসে মাটির ট্রাক। পশ্চিম বনগ্রাম ধুইল্যাছড়ির পাহাড় কেটে মাটির ট্রাক বনাঞ্চল অতিক্রম করে সমতল হয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। বনগ্রাম সেগুনবাগান ও কলাবাইাজ্যাঘোনা পাহাড়ের মাটি কোদালা বনবিট কার্যালয়ের সামনে দিয়ে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নীরব। নিশ্চিন্তাপুর, ফুইট্টাগোদা, মহত্বের ঘোনা বনাঞ্চলের পাহাড় কাটা মাটির ট্রাক নিচিন্তাপুর সড়ক হয়ে মোগালের হাট এলাকার গ্রামাঞ্চলে যায়।  উভয় এলাকা দিয়ে প্রতি রাতে শতাধিক ট্রাকে করে মাটি পাচার হয়। প্রশাসন ও বনকর্মীদের নাকের ডগায় সরকারি পাহাড় কেটে মাটি পাচার হলেও প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই। 
সংশ্লিষ্টরা জানান, বনাঞ্চলে নিয়োজিত ভিলেজাররা পাহাড়খেকোদের কাছে অসহায়। তারা পাহড় নিধনে বাধা দিতে সাহস পান না। কারণ বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা চলে। নিম্ন পর্যায়ের কেউ পাহাড় কাটায় বাধা দিলে ঊর্ধ্বতনদের রোষানলে পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে কোদালা বনবিট কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান পলাশ বলেন, ‘কোদালায় সরকারি পাহাড় কাটার অবস্থা ভয়ংকর। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সীমিত লোকবল দিয়ে পাহাড় কাটা প্রতিরোধ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। তবুও পাহাড়াখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করি।’
রাঙ্গুনিয়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা নাহিদ হাসান বলেন, ‘পাহাড় কাটা বন্ধে বন বিভাগের তৎপরতা রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। পাহাড়কাটা প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।’
 

© Samakal
Shares:
Leave a Reply