
টিকার সংকটে উদ্বিগ্ন অভিভাবক
সারাদেশ
এম. আতিকুল ইসলাম বুলবুল, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) 2025-01-14
নবজাতককে টিকা দেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান তাড়াশ পৌর এলাকার দীপা রানী মাল। তাঁকে জানানো হয়, সরকারিভাবে যে চারটি টিকা দেওয়া হয়, তার একটিরও সরবরাহ নেই। নির্ধারিত সময়ে শিশুকে টিকা দিতে পারবেন কিনা, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন দীপা।
দুশ্চিন্তায় আছেন ভাদাস মহল্লার মাহি পারভীনও। গতকাল সোমবার সন্তানকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে টিকা না দিয়েই বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। কথা হলে আক্ষেপ করে বলেন, সময়মতো টিকা দিতে পারলাম না। বাচ্চার কোনো ক্ষতি হয়ে যায় কিনা, দুশ্চিন্তায় আছি।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইপিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান আবুল কালাম আজাদ জানান, বছরের শেষে এসে ফুরিয়ে গেছে সরকারি সরবরাহের টিকা। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই টিকাস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। নতুন সরবরাহ না আসা পর্যন্ত এ সমস্যা মিটবে না।
টিকা সংকটের কথা স্বীকার করেছেন জেলা ইপিআই সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ মোতালেব হোসেন। তাঁর ভাষ্য, ঢাকার মহাখালী ইপিআই কেন্দ্র থেকে টিকা সরবরাহ হয়। গত দুই মাসে চার ধরনের টিকা সরবরাহ করা হয়নি। এক মাসের মধ্যে টিকা আসবে। তখন এ সংকট থাকবে না।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) আওতায় জন্মের পর থেকে ২৩ মাস বয়সের মধ্যে ১০টি বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে শিশুদের সাত ধরনের টিকা দেওয়া হয়। টিকাগুলো হলো– বিসিজি, ওপিডি বা পোলিও, আইপিভি, পিসিভি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, এমআর-১ ও এমআর-২। কিন্তু এক মাস ধরে তাড়াশ উপজেলায় বিসিজি, পেন্টা ভ্যালেন্ট, ওপিডি ও এমআর (হাম ও রুবেলা) টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন শিশুদের মা ও স্বজনরা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিশুদের টিকা দিতে না পারায় তারা উদ্বিগ্ন। ইপিআই টিকাদানকারী স্বাস্থ্য সহকারী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রায়ই বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন টিকাবঞ্চিত শিশুর অভিভাবকরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে সপ্তাহে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন এবং ১৯২টি অস্থায়ী কেন্দ্রে সপ্তাহের চার দিন ৪২০ থেকে ৪৬০ জন শিশুকে টিকা দেওয়া হয়। ঢাকার মহাখালী থেকে জেলা সিভিল সার্জন অফিসে আসে টিকাগুলো। এরপর উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করে হয়ে থাকে। চলতি মাসে টিটি ও আইপিভি টিকা চাহিদামাফিক সরবরাহ পেলেও শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় চারটি টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ কারণে শিশুদের টিকা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে জানায় সূত্রটি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা এরফান আহমেদ বলেন, দূরদূরান্ত থেকে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে আসেন। এরপর যখন শোনেন টিকা নেই, তখন খেপে যান। উদ্বিগ্ন
হওয়ার কিছু নেই। চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই টিকার সরবরাহ পাওয়া যাবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কর্মকর্তা মো. নুরুল আমীন উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। টিকা সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনি এখান থেকে চলে যান। সিরাজগঞ্জ আমার অফিসে আসেন, কথা হবে।’