আমরা সবাই জানি যে শারীরিক ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ এবং শক্তিশালী করে তোলে । এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী কিন্তু কেউ এ কথাটি চিন্তা করি না যে মস্তিষ্কের ব্যায়ামও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী এবং মস্তিষ্কের শক্তিশালী করে তোলে।  শারীরিক ব্যায়াম যেমন শরীরকে শক্তিশালী এবং সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে তেমনি মস্তিষ্কের ব্যায়াম  বা মাইন্ড এক্সারসাইজ মস্তিষ্কের শক্তি ও কর্মদক্ষতা বাড়াই এবং সৃজনশীলতাকে আরো বৃদ্ধি করে।  তাই আমাদের সবারই উচিত দিনের কিছুটা সময় মস্তিষ্কের পিছনেও ব্যয় করা।  আজ আপনাদের সাথে এমন নয়টি মস্তিষ্কের ব্যায়াম নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি যেটা আপনার মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করবে এবং আপনার মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।  তবে আর্টিকেলটি যদি আপনার কাছে একটু বড় মনে হয়  অথবা আপনি যদি সংক্ষিপ্ত আকারে আর্টিকেলটি করতে চান তাহলে এখানে ক্লিক করে সংক্ষিপ্ত আকারে আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন ।  তো চলুন শুরু করা যাক। 

১.  অভ্যাস বদলানোর অনুশীলন। 

 আমাদের সবারই একটা অভ্যাস যে আমরা অন্যান্য সাধারণ দিইনি যা করি আজকেও সেই কাজটি করব।  এটি আমাদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে কিন্তু আপনি যদি এই অভ্যাস থেকে বের হয়ে একটু আলাদাভাবে কাজটা সম্পন্ন করেন তাহলে সেটা আপনার মস্তিষ্কের উপর একটু চাপ সৃষ্টি করবে যার ফলে আপনার মস্তিষ্ক এই কাজটি করার সময় একটু চিন্তা করতে পারবে।  যেমন দাঁত ব্রাশ করার সময় অন্য হাত দিয়ে ব্রাশ করতে পারেন,  এক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার থেকে অন্য একটি রাস্তা ব্যবহার করতে পারেন ইত্যাদি।  এসব ছোট ছোট কাজগুলো আপনার মস্তিষ্কে  চিন্তার সৃষ্টি করে।  যেটা আপনার মস্তিষ্কের একটি ব্যায়াম হিসেবেও কাজ করে। 

 

২.  মনে মনে অংক করা। 

 এই ক্যালকুলেটর আসার পর থেকে আমরা ছোটখাটো অংক গুলো ক্যালকুলেটরে করে থাকি।  কিন্তু আপনি যদি একটু লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে আপনার দাদা কিংবা সমবয়সী লোকজন খুবই অল্প সময়েই ছোটখাটো ক্যালকুলেশনের কাজগুলো করে দিতে পারে।  যেগুলো হয়তো আপনার  করতে গেলে ক্যালকুলেটরের প্রয়োজন কিংবা সময় বেশি লাগতে পারে।  কিন্তু তারা এই বয়সেই সেই ক্যালকুলেশনগুলো খুব সহজেই অল্প সময়ের মধ্যে করে দিতে পারে।  এর কারণ হলো সেই সময়ে ক্যালকুলেটর এত ব্যবহৃত ছিল না যার ফলে তারা নিজেরাই  এই ছোট ছোট ক্যালকুলেশনগুলো করতো।  যাতে তাদের মস্তিষ্ক আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে।  তাই আপনি যদি আপনার দৈনন্দিন জীবনে আশা  ক্যালকুলেশন গুলো মনে মনে করেন তাহলে সেটা আপনার মস্তিষ্ককে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে।  যেমন ধরুন আপনি আজকে বাজার করতে গিয়েছেন  এর জন্য আপনি ২৫  পেঁয়াজ, ৩৫  টাকার আলু, ৪৫  টাকার রসুন  আর ২০ টাকার শাক  কিনলেন।  এখন আপনি আজ কত টাকার বাজার করলেন সেটা হিসাব করুন। অর্থাৎ ২৫ টাকার পেঁয়াজ এবং ৩৫ টাকার  আলু= ২৫+৩৫=৬০  টাকা আর ২০ টাকার  শাক = ৬০+২০=৮০  টাকা আর ৪৫  টাকার রসুন= ৮০+৪৫= ১২৫  টাকা।  এভাবে মস্তিষ্কের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন যাতে মস্তিষ্ক চিন্তা করে এবং সমস্যা সমাধান করতে চেষ্টা করে।  এতে আপনার মস্তিষ্ক সমস্যা সমাধানের  দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। 

৩.  তিন মিনিটের গল্প বলার চেষ্টা করুন

 আপনি কোন বিষয়ের উপর একটা টপিক সিলেক্ট করুন।  এরপরে ওই টপিকের উপরে তিন মিনিটের একটা ছোট গল্প বলার চেষ্টা করুন।  এটা শুধু আপনার মস্তিষ্ককে চিন্তা করতে সাহায্য করবে তাই নয় বরং আপনার কথা বলার দক্ষতা কেউ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।  আর আপনার মনকে চিন্তা করতে সাহায্য করবে যার ফলে আপনার ব্রেন আরো সক্রিয় এবং মনোযোগী হয়ে উঠবে।  তাই  এই   ব্যায়ামটি  করতে পারেন। 

৪.  ইন্দ্রিয়ের অনুশীলন 

আপনার ইন্দ্রিয় গুলোকে দুই মিনিটের জন্য কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।  অর্থাৎ দুই মিনিট ধরে চিন্তা করুন,  যে আপনি আশপাশ থেকে কি দেখছেন,  কি শুনছেন,  কি অনুভব করছেন আর কিসের গন্ধ আপনি পাচ্ছেন?  এ অনুভবগুলো এর ওপর আপনি বিস্তারিত ভাবে ভাবার চেষ্টা করুন।  অর্থাৎ মনে করুন আপনি সকালবেলা বারান্দায় বসে আছেন  সেখানে কিছু ফুলের গাছও লাগানো আছে।  এখন আপনি বসে বসে দেখলেন যে চারপাশে পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছে, পাখি রাখার আওয়াজ আপনি শুনতে পাচ্ছেন,  সকালবেলা ফুলের গন্ধ আপনি বুঝতে পারছেন এবং  ঠান্ডা বাতাসের শিহরণ আপনি অনুভব করতে পারছেন।  এর ফলে আপনি আপনার চারটি  ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগালেন এবং এর ফলে আপনার ইন্দ্রিয় গুলো সক্রিয় হলো এবং আপনাকে আরো মনোযোগী করে তুলল।  তাই  এই ব্যায়ামটিও আপনি করতে পারেন। 

 

৫.  একটা শব্দের সাথে আরো শব্দ চিন্তা করুন।

 আপনার মস্তিষ্ককে আরো শক্তিশালী করার জন্য যে কোন একটা শব্দ ভাবুন এবং সে শব্দের সাথে সম্পর্কিত আরো কিছু শব্দ আনুমানিক ২০  থেকে ২৫ টা শব্দ  বলুন অথবা মনে মনে ভাবুন।  মাঝখানে এখনো বিরতি রাখবেন না।  যেমন আপনি একটা শব্দ চিন্তা করলেন যে নদী,  এখন এর সাথে সম্পর্কিত কিছু শব্দ   যেমন  পানি,  স্রোত,  মাছ,  নৌকা,  ঢেউ,  পাখি,  সেতু,  মাঝি,  তীর,  এমন ২০ টা  শব্দ দ্রুত বলুন বা ভাবুন।  এটি আপনার মস্তিষ্ককে চিন্তা করার দক্ষতা বৃদ্ধি করবে এবং শক্তিশালী করে তুলবে। 

৬.  মেমোরি টেস্ট

কিছু  জটিল শব্দ ৬০ সেকেন্ড ধরে দেখুন।  এরপরে চোখ বন্ধ করে সবগুলো শব্দের নাম বলার চেষ্টা করুন।  এরপরে আপনি যতগুলো বলতে পারবেন ততগুলো বলুন আর যেগুলো পারবেন না সেগুলো  বাদ রাখুন।  তারপরে হিসাব করুন যে আপনি কতগুলো শব্দ বলতে পেরেছেন।  এই ব্যায়ামটি করার ফলে আপনার স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং দ্রুত মনে রাখার ক্ষমতা বাড়বে আরো মনোযোগ ধরে রাখতেও সাহায্য করবে।  তাই নিয়মিত এই ব্যায়ামটি করার চেষ্টা করুন। 

 

৭.  সকালে বেলা অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও হাটুন। 

 কর্মব্যস্ততার  চাপে আমরা হাটাহাটি করতেই ভুলে গিয়েছি কিন্তু সকালবেলা হাঁটা শরীরের জন্য যেমন উপকারী   মস্তিষ্কের জন্যও  ঠিক ততটাই উপকারী।  কিন্তু হাঁটার সময় হেডফোন ব্যবহার করবেন না।  চারপাশের প্রকৃতির কে উপলব্ধি করুন।  দেখুন চারপাশে কি ঘটছে।  সবকিছু পর্যবেক্ষণ করুন যেটা আপনার মস্তিষ্কের ওপর ভালো প্রভাব সৃষ্টি করবে।  আপনার মস্তিষ্ককে আরো মনোযোগী করে তুলতে সাহায্য করবে।  এবং মস্তিষ্ককে তথ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করবে।  তাই প্রতিদিন সকালবেলা অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও হাটুন এবং চারপাশের পরিবেশটাকে উপলব্ধি করতে শিখুন। 

 

৮.  মিরর রাইটিং

 সবসময় যে সিরিয়াস কাজ দিয়েই মস্তিষ্কের ব্যায়াম করতে হবে এমনটা নয়।  কিছু মজার মজার কাজ করার মাধ্যমেও মস্তিষ্কের ব্যায়াম করানো যায়।  তার মধ্যে একটি অন্যতম ব্যায়াম হলো মিরর রাইটিং করা।  অর্থাৎ আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে একটা লেখা আয়নার সামনে ধরলেই সেটা উল্টো হয়ে যায়।  তাই আপনিও একটা লেখাকে এমনভাবে লিখুন যাতে সেটা দেখলে উল্টো মনে হয় এবং আয়নার সামনে ধরলে সঠিকভাবে বোঝা যায়।  উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ‘মলক’ শব্দটির আসলে হবে ‘ কলম’ ।  এভাবে মজার মজার কাজ করে মস্তিষ্ককে আরো  তীক্ষ্ণ করে তুলতে পারেন।

 

৯.  মাইন্ড ম্যাপ চ্যালেঞ্জ

 সর্বশেষ যে ব্যায়ামটির কথা আমি বলতে চাচ্ছি সেটা হল মাইন ম্যাপ চ্যালেঞ্জ।  এটি আপনি দিনের শুরুতেই পাঁচ মিনিটের জন্য করে নিতে পারেন।  এর জন্য একটি খাতায় একটি বিষয় নির্বাচন করুন।  সেই বিষয় সম্পর্কে তো বিভিন্ন আইডিয়া যোগ করার চেষ্টা করুন।  এভাবে একটি মাইন্ড ম্যাপ তৈরি করুন।  উদাহরণ স্বরূপ  বলতে পারি আপনি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কোনো  বিষয়ে লেখালেখি করেন,  তাহলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন পুষ্টিকর খাবার,  যোগ ব্যায়াম,  প্রোটিন গ্রহণ  পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি যোগ করবেন।  এটি আপনার সৃজনশীলতা,  সমস্যার সমাধানের দক্ষতা,  ও দ্রুত তথ্য বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে   তুলবে। 

 

 উপরে যে ব্যায়ামগুলোর কথা আলোচনা করেছি, সেই ব্যায়ামগুলো যদি আপনি নিয়মিত করেন তাহলে আপনার মস্তিষ্ক  আগের থেকে আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠবে।  সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে,  আপনার সৃজনশীলতা আরো বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে।  আপনাকে  কোন বিষয়ের উপর বিস্তারিতভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করবে।  আরো  আপনার মস্তিষ্কে তথ্য ধরে রাখতেও সাহায্য করবে।  তাই দিনের অল্প কিছু সময় হলেও মস্তিষ্কের উপর ব্যয় করার চেষ্টা করুন।  আর পোস্টটি ভালো লেগে থাকলে ট্রিকবিডির  সাথেই  থাকুন। 

 

 আপনি যদি প্রশ্ন উত্তর করে ইনকাম করতে চান তাহলে আমার ওয়েবসাইটঃ Easyanswer  এ ভিজিট করতে পারেন। ৫০০  পয়েন্ট হলে আপনি ৫০ টাকা পেয়ে যাবেন।  আর প্রশ্নোত্তর করার পূর্বে অবশ্যই এই পোস্টটি পড়ুন। আমার ওয়েবসাইটে  ২০০ জনেরও অধিক মানুষ কাজ করছে।  তাই  প্রশ্নোত্তর করে ইনকাম করতে এখনই ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসুন। 

Shares:
Leave a Reply