ইন্টারনেট আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু আপনি জানেন কি, আপনি যে ইন্টারনেট দেখেন Google, YouTube, Facebook তা মোট ইন্টারনেটের মাত্র ৪%-৫%? বাকি অংশটিই হলো Deep Web এবং এর ক্ষুদ্র অথচ আলোচিত অংশ হলো Dark Web।

এই লেখায় আমরা শুধু পার্থক্য না, বরং প্রযুক্তিগত কাঠামো, ব্যবহার, বাস্তব ঝুঁকি এবং নিরাপত্তা কৌশল নিয়েও বিশ্লেষণ করব।

Surface Web, Deep Web এবং Dark Web: একটি ৩-স্তরের কাঠামো

Surface Web (সারফেস ওয়েব)

এটি সেই অংশ, যা সার্চ ইঞ্জিন (Google, Bing, Yahoo) ব্যবহার করে খুঁজে পাওয়া যায়।

উদাহরণ:

  • Wikipedia
  • YouTube
  • Facebook
  • Online Newspaper

Deep Web (ডিপ ওয়েব)

এটি সেই কন্টেন্ট যা পাসওয়ার্ড, সাবস্ক্রিপশন বা লগইন ছাড়া অ্যাক্সেসযোগ্য নয়।

উদাহরণ:

  • আপনার ইমেইল ইনবক্স
  • ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের ডেটা
  • ক্লিনিক্যাল রিপোর্ট
  • প্রাইভেট ডকুমেন্ট
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মডিউল

Dark Web (ডার্ক ওয়েব)

Deep Web-এর একটি অংশ যা শুধুমাত্র বিশেষ এনক্রিপ্টেড নেটওয়ার্ক (Tor, I2P) দিয়ে প্রবেশযোগ্য। এটি “অজ্ঞাত ইন্টারনেট” নামেও পরিচিত।

উদাহরণ:

  • অবৈধ অস্ত্র বা ড্রাগ মার্কেট
  • ডাটা ব্রিচ/হ্যাকিং ফোরাম
  • Bitcoin-based লেনদেন প্ল্যাটফর্ম
  • রাজনৈতিক শরণার্থী বা জার্নালিস্টদের জন্য যোগাযোগ মাধ্যম

Dark Web কিভাবে কাজ করে?

প্রযুক্তিগত দিক:

  • Dark Web অ্যাক্সেস করতে হয় Tor (The Onion Router) এর মাধ্যমে
  • এটি বহু স্তরের এনক্রিপশন ব্যবহার করে—এখনকার সবচেয়ে গোপনীয় প্রযুক্তিগুলোর একটি
  • ব্যবহারকারীর আইপি ঠিকানা, লোকেশন বা পরিচয় গোপন থাকে

Tor Browser দিয়ে যে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা হয়, সেগুলোর ডোমেইন হয় .onion — যেমনঃ
http://duskgytldkxiuqc6.onion

Dark Web-এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক ব্যবহার

ইতিবাচক ব্যবহার:

  • সংবাদকর্মী বা Whistleblower-রা রাজনৈতিক দমন থেকে বাঁচতে এটি ব্যবহার করেন
  • সরকার বিরোধী দেশে সেন্সর এড়াতে এটি বিকল্প প্ল্যাটফর্ম
  • মানবাধিকার সংস্থা গোপন তথ্য সংগ্রহে ব্যবহার করে

নেতিবাচক ব্যবহার:

  • অবৈধ ড্রাগ কেনাবেচা (যেমনঃ Silk Road)
  • অস্ত্র, ভুয়া আইডি, চুরি করা ক্রেডিট কার্ড বিক্রি
  • চুরি হওয়া তথ্যের জন্য মার্কেটপ্লেস (Data Dump)
  • হ্যাকিং সার্ভিস বা Ransomware লেনদেন

Dark Web Access করার ঝুঁকি

ঝুঁকি ব্যাখ্যা
ম্যালওয়্যার .onion লিংকে ক্লিক করলেই আপনার ডিভাইসে ক্ষতিকর কোড প্রবেশ করতে পারে
আইনি সমস্যা অনেক দেশেই Dark Web-এর নির্দিষ্ট অংশে প্রবেশ করা আইনগত অপরাধ
নজরদারি Tor ব্যবহার করলেই অনেক সময় সরকার বা নিরাপত্তা সংস্থার নজরে পড়া যায়
প্রতারণা Dark Web-এ ৮০% “সার্ভিস” ভুয়া বা স্ক্যাম

কীভাবে আপনি নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন?

  1. কৌতূহল থেকে Dark Web-এ প্রবেশ করবেন না
  2. VPN + Tor ছাড়া কখনও Access করবেন না
  3. ব্যক্তিগত তথ্য কখনও প্রকাশ করবেন না
  4. যে কোন লিংকে ক্লিক করার আগে যাচাই করুন
  5. অবৈধ কিছু দেখলে রিপোর্ট করুন (যদি সম্ভব হয়)

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে: আমরা কতটা সচেতন?

বাংলাদেশে এখনও এই বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষা বা সচেতনতা খুবই সীমিত। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে ইন্টারনেট ব্যবহার শেখানো হয় ঠিকই, কিন্তু Deep Web বা Dark Web সম্পর্কে জানানো হয় না।

ফলে:

  • অনেকে হ্যাকিং “শিখতে” গিয়ে স্ক্যামে পড়ে
  • তরুণ প্রজন্ম মুভি বা YouTube-এর ভুল তথ্য দেখে Dark Web অ্যাক্সেস করে
  • আইনি ঝুঁকির বিষয়টি অনুধাবন করে না

উপসংহার: জ্ঞানে থাকুন, জালে নয়

Deep Web আমাদের নিরাপদ এবং ব্যক্তিগত তথ্যের আধার, এটি ভয় পাওয়ার কিছু নয়।
Dark Web, যদিও কিছু ন্যায্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, কিন্তু তা প্রবেশের জন্য উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান ও সচেতনতা প্রয়োজন।

আপনি যদি নিজেকে ও আপনার পরিবারকে সাইবার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে চান, তাহলে আপনার কর্তব্য হচ্ছে নিজে জানুন, অন্যকে জানান।

আপনার জন্য প্রশ্ন:

আপনি কি এর আগে Dark Web সম্পর্কে জানতেন? আপনার কী মনে হয়, স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে পাঠ থাকা উচিত কি না? কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

Shares:
Leave a Reply