Google প্রতি বছর তার অ্যালগরিদমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। যা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ডিজিটাল মার্কেটার এবং ওয়েবসাইট মালিকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
২০২৫ সালের মার্চ মাসের কোর আপডেটও এর ব্যতিক্রম নয়। এই আপডেটটি ওয়েবসাইটের সার্চ র্যাংকিং, কন্টেন্ট ভ্যালুয়েশন এবং SEO কৌশলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
আজকের এই বিশদ বিশ্লেষণে আমরা জানবো— Google মার্চ কোর আপডেট ২০২৫ কী? এর মূল পরিবর্তনগুলো কী কী? এবং কীভাবে এটি ওয়েবসাইটের র্যাংকিংয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।
Google মার্চ কোর আপডেট ২০২৫: কী এবং কেন?
Google তার অ্যালগরিদম আপডেটের মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিনকে আরও কার্যকর ও ব্যবহারকারীর জন্য সহায়ক করে তোলে।
কোর আপডেট মূলত Google-এর সার্চ র্যাংকিং সিস্টেমে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। যার ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের অবস্থান পরিবর্তিত হয়।
Google এই আপডেটের মাধ্যমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে—
- কনটেন্টের গভীরতা ও গুণগত মান
- ইউজার ইন্টেন্ট ও সার্চ রিলেভেন্স
- EEAT (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness)
- স্প্যামmy এবং লো-কোয়ালিটি কনটেন্ট ফিল্টারিং
এবারের আপডেটটি মূলত কনটেন্টের গুণগত মান, অপ্রাসঙ্গিক ওয়েবসাইট ফিল্টারিং এবং ইউজারদের জন্য আরও ভালো রেজাল্ট প্রদানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
মার্চ কোর আপডেট ২০২৫-এর মূল পরিবর্তন
১. EEAT এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি
EEAT (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) কনটেন্ট র্যাংকিংয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। Google এবার আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে—
- লেখকের অভিজ্ঞতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা
- তথ্যসূত্রসহ কনটেন্ট উপস্থাপন
- অথর প্রোফাইল ও বায়ো তথ্যের উপস্থিতি
যেসব ওয়েবসাইট EEAT অনুসরণ করে না। সেগুলোর র্যাংকিং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
২. AI-Generated কনটেন্ট নিয়ে কঠোরতা
২০২৫ সালের আপডেটে AI-Generated কনটেন্টের উপর বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।
- শুধুমাত্র AI দিয়ে লেখা কনটেন্ট গুগলের গাইডলাইন অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য নয়।
- AI-Generated কনটেন্ট যদি মানসম্পন্ন হয় এবং বাস্তবমানুষ দ্বারা পর্যালোচিত হয়। তাহলে সেটি র্যাংক পেতে পারে।
- অতিরিক্ত স্বয়ংক্রিয় (automated) ওয়েবসাইট Google-এর নতুন স্প্যাম ফিল্টারে পড়তে পারে।
৩. ইউজার-সেন্ট্রিক কনটেন্ট র্যাংকিংয়ে অগ্রাধিকার
Google এখন ব্যবহারকারীর জন্য সবচেয়ে উপকারী কনটেন্টকে র্যাংক করবে।
- Bounce Rate ও Dwell Time (একটি পেজে ব্যবহারকারী কতক্ষণ থাকে) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
- Thin Content (কম তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল) র্যাংক হারাতে পারে।
- বিস্তারিত, ইনফরমেটিভ, ও অরিজিনাল কনটেন্ট র্যাংকিংয়ে অগ্রাধিকার পাবে।
৪. স্প্যাম কনটেন্টের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
Google নতুন আপডেটে নিম্নলিখিত স্প্যাম কৌশলগুলোর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে—
- ক্লিকবেইট কনটেন্ট: এমন কনটেন্ট যা শিরোনামে কিছু বলে। কিন্তু কনটেন্টের মধ্যে ভিন্ন কিছু থাকে।
- অপটিমাইজেশন ওভারলোড: অতিরিক্ত কীওয়ার্ড ব্যবহার বা লিঙ্ক বিল্ডিং ম্যানিপুলেশন।
- গোপন রিডাইরেক্ট: এমন পেজ যা ক্লিক করার পর ভিন্ন কোনো স্প্যামি ওয়েবসাইটে নিয়ে যায়।
Ssc Result ও এডুকেশন রেজাল্ট দেখুন
মার্চ কোর আপডেট ২০২৫-এ কীভাবে টিকে থাকা যায়?
নতুন আপডেটের কারণে অনেক ওয়েবসাইট র্যাংকিং হারাবে। আবার কিছু ওয়েবসাইট আরও ওপরে উঠে আসবে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নিচের কৌশলগুলো অনুসরণ করা জরুরি—
১. কনটেন্টের গভীরতা বাড়ান
আপনার কনটেন্ট যেন ব্যবহারকারীর সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে সেদিকে নজর দিন।
- গবেষণা ও তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করুন।
- শুধুমাত্র ৫০০-৭০০ শব্দ নয়, বরং বিস্তারিত ও ভালো কাঠামোবদ্ধ আর্টিকেল লিখুন।
- ইমেজ, ভিডিও ও ইনফোগ্রাফিক ব্যবহার করুন।
২. EEAT বাড়ানোর কৌশল
- অথর বায়ো ও সোর্স লিংক ব্যবহার করুন।
- তথ্যের সোর্স উল্লেখ করুন এবং রেফারেন্স দিন।
- অথর ও ওয়েবসাইটের অথরিটি বাড়াতে কন্টেন্ট প্রমোশন করুন।
৩. AI-Generated কনটেন্ট ব্যবহার করলে, রিভিউ করুন
যদি AI ব্যবহার করেন তাহলে নিশ্চিত করুন—
- কনটেন্ট ভালোভাবে রিভিউ করা হয়েছে।
- মানব-সম্পাদিত (human-edited) এবং ভ্যালু-এডেড ইনফরমেশন যোগ করা হয়েছে।
- কনটেন্টের সত্যতা ও তথ্যসূত্র যাচাই করা হয়েছে।
৪. লোকাল ও ভয়েস সার্চ অপটিমাইজেশন
Google এখন লোকাল সার্চ ও ভয়েস সার্চকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
- লোকাল কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- ভয়েস সার্চ বান্ধব কনটেন্ট লিখুন (প্রশ্ন-উত্তর ফরম্যাট)।
- লোকাল ব্যবসার জন্য Google My Business আপডেট রাখুন।
৫. টেকনিক্যাল SEO উন্নত করুন
- ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড বাড়ান।
- মোবাইল ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট তৈরি করুন।
- ইন্ডেক্সিং ইস্যু থাকলে Google Search Console-এ ঠিক করুন।
উপসংহার
Google মার্চ কোর আপডেট ২০২৫ মূলত মানসম্পন্ন কনটেন্ট ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্সের দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। যেসব ওয়েবসাইট AI-Generated স্প্যামি কনটেন্ট তৈরি করছে তারা র্যাংক হারাবে।
আর যেসব ওয়েবসাইট অথেনটিক ও ভ্যালু-এডেড কনটেন্ট দিচ্ছে তারা লাভবান হবে।
SEO কৌশল পরিবর্তন না করে। বরং Google-এর গাইডলাইন অনুসারে ওয়েবসাইটের গুণগত মান বাড়ানোই এখন সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত। কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ব্লগার এবং ডিজিটাল মার্কেটারদের উচিত এই আপডেটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নিজেদের কন্টেন্ট সাজানো।
আপনার ওয়েবসাইট কি নতুন আপডেটের কারণে র্যাংকিং হারাচ্ছে? তাহলে এখনই কনটেন্ট অপটিমাইজ করুন এবং EEAT বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিন।